প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:০৫
খুদে দাবাড়ু আযানের জন্যে শুভ কামনা

মতলব উত্তরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ভাইরাল হওয়া খুদে ফুটবলার সোহানের পর এবার জানা গেলো খুদে দাবাড়ু আযান সম্পর্কে। সেটি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কারণে জানা গেছে। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মতলব উত্তরের অন্যতম জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহবুব আলম লাভলু। তিনি লিখেছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি ছড়াচ্ছে মতলব উত্তর উপজেলার খুদে দাবাড়ু সাফায়াত কিবরিয়া আযান। বয়স সবেমাত্র ১২ বছর। আযান ইতোমধ্যেই মালদ্বীপ, শ্রীলংকা এবং থাইল্যান্ডে ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে। ব্যাপক সুনাম অর্জনের পাশাপাশি নিজ দেশের পতাকা উড়িয়েছে বীরের বেশে। ওয়ার্ল্ড ক্যাডেট চেস টুর্নামেন্ট ২০২৫-এর একটি বড়ো আসরে অংশগ্রহণ করতে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ আযান যাচ্ছে কাজাখস্তান। তার এই সুখবরে নিজ এলাকা ফরাজীকান্দি তথা বৃহত্তর মতলববাসী খুবই আনন্দিত। ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ রামপুর গ্রামের গোলাম কিবরিয়া নয়নের ছোট ছেলে খুদে দাবাড়ু সাফায়াত কিবরিয়া আযান ঢাকার সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ (গ্রেড-৫, ইংলিশ মিডিয়াম)-এর মালিবাগ শাখার মেধাবী শিক্ষার্থী। আযান ফিদে ওয়ার্ল্ড ক্যাডেট চেস চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫-এ কাজাখস্তানের আলমাটি সিটির বড়ো এই আসরে অংশগ্রহণের জন্যে বাংলাদেশ চেস ফেডারেশন থেকে মনোনীত হয়েছে।
আযান বিদেশের মাটিতে গত ডিসেম্বর ২০২৪-এ থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত এশিয়ান স্কুলস চেস চ্যাম্পিয়নশিপস ২০২৪-এ অংশগ্রহণ করে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হন। মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত ওয়েস্টার্ন এশিয়ান ইয়ুথ চেস চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ (অনূর্ধ্ব-৮, ওপেন ক্যাটাগরি)-এ অংশ নিয়ে পঞ্চম স্থান অর্জন করে আযান। জুলাই ২০২৪ শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ৭ম ওয়েস্টার্ন এশিয়ান ইয়ুথ চেস চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪ (অনূর্ধ্ব-১০, ওপেন ক্যাটাগরি)-এ অংশ নিয়ে সেরা পাঁচে নিজের নাম লেখান। এই খুদে দাবাড়ু আযান ‘ন্যাশনাল ইয়ুথ চেস চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২৫’ (অনূর্ধ্ব-১২, ওপেন) বিভাগে চ্যাম্পিয়ন, ‘ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল ট্যালেন্ট হান্ট (অনূর্ধ্ব-১৬) চেস টুর্নামেন্ট-২০২৪’-এ চ্যাম্পিয়ন, চাঁদপুরে অনুষ্ঠিত শেখ কামাল যুব গেমস ২০২৩-এ চেস ইভেন্টেও চাঁদপুর সদরের হয়ে অংশ নিয়ে জেলায় চ্যাম্পিয়ন, চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সিসিপিএ ফিদে ইয়ুথ রেটিং চেস টুর্নামেন্ট ২০২৩ (অনূর্ধ্ব-১৭)-এ চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু এশিয়ান জোন-৩.২ চেস চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২৩-এর ওপেন বিভাগে অংশ নিয়ে আযান ব্যাপক নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে সক্ষম হলে চারদিকে হৈচৈ পড়ে যায়। ২০ জুলাই আন্তর্জাতিক দাবা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে সেইলর প্রেজেন্টস চেকমেট ২০২৫ টুর্নামেন্টে সাফায়াত কিবরিয়া আযান (অনূর্ধ্ব-১৪) চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। সাউথ পয়েন্ট স্কুল চেস টুর্নামেন্টেও চ্যাম্পিয়ন হয় সে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে আযান এ বয়সেই নিজের সাফল্যের প্রমাণ রাখতে সক্ষম হয়েছে।
মতলব উত্তর উপজেলার খুদে দাবাড়ু সাফায়াত কিবরিয়া আযান গত জুনে অনুষ্ঠিত সারা দেশব্যাপী জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা ২০২৫-এ অংশ নিলে জাতীয় পর্বে সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ টিম চ্যাম্পিয়ন হয়। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে এ মাসেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ওয়ার্ল্ড স্কুলস চেস চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫ খেলতে যাওয়ার কথা ছিলো। বাংলাদেশ চেস ফেডারেশনের জটিলতায় ওই টুর্নামেন্টে এই খুদে দাবাড়ুর অংশগ্রহণ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। দু ভাইয়ের মধ্যে আযান ছোট। বড়ো ভাই সাদাত কিবরিয়া আয়ান এ বছর এ-লেভেল পরীক্ষার্থী। বাবা গোলাম কিবরিয়া বেসরকারি চাকরিজীবী, মা আলেয়া ফেরদৌস একজন গৃহিণী। কথা হলে খুদে দাবাড়ু আযানের বাবা গোলাম কিবরিয়া নয়ন জানান, দাবার প্রতি আমার ছেলে আযানের অসম্ভব ঝোঁক। বর্তমানে আযানের রেটিং ১৮৬৪। আশা রাখি আমার সন্তান একদিন ইনশাআল্লাহ গ্র্যান্ডমাস্টার হবে। যদিও এসব টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। প্রতিটি বিদেশের মাটিতে যেতেই এয়ার টিকেট, রেজিস্ট্রেশন ফি ও এন্ট্রি ফি লাগবেই। বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন এসবের দিকে তেমন কোনো নজরই দেয় না। আমরা যারা বাচ্চাদের দিয়ে বিদেশের মাটিতে দেশের পতাকা উড়াতে চাই, তাদের প্রত্যেকেরই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্রীড়াপ্রেমী বিত্তবানরা এসব প্রতিভাবান দাবাড়ুর পাশে দাঁড়ালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই খুদে দাবাড়ুরা ভালো কিছু করে দেখাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। মতলব উত্তর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, বিদেশের মাটিতে নিজেদের সম্মান বয়ে আনার লক্ষ্যে প্রতিভাবান খুদে এই দাবাড়ুর পাশে মতলবের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করি।
আমাদের মতে, প্রথমত মতলব উত্তর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিংবা মতলব উত্তর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে খুদে দাবাড়ু আযানের পাশে সম্ভাব্য অনুদান নিয়ে পাশে দাঁড়ানো উচিত। একই সাথে এ উপজেলার বিত্তবান চিত্তবান মানুষদেরও আযানকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের জন্যে এগিয়ে আসার ব্যাপারে ত্বরিত সাড়া দেয়া সরকার। আমরা আযানের মতো প্রতিভাবান দাবাড়ুদের বিদেশে গিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে দাবা ফেডারেশনের আর্থিক দৈন্যতা, উদাসীনতা কিংবা অন্য কোনো কারণে পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা দিতে না পারাটাকে বিস্ময়কর বলে মনে করছি। কেননা আমাদের দেশে এমন অনেক খাত আছে, যেখান থেকে অপ্রয়োজনীয় কাজ করা হয়, অপচয় করা হয়। ধরে নিলাম, সেটা করা হয় না। প্রধান উপদেষ্টা/ প্রধানমন্ত্রীর নিকট কিংবা সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সিএসআর (কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি) খাত থেকে অনুদান প্রাপ্তির জন্যে দাবা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আবেদন করলেই তো সহায়তা পাওয়া যায়। কথা হলো, এ আবেদন করার সময়ও কি দাবা ফেডারেশনের নেই?
আমরা মতলব উত্তরের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন খুদে দাবাড়ু আযানের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক--নিরন্তর সে শুভ কামনা করছি। আমরা তাকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা, ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা সমিতি, ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা সাংবাদিক ফোরাম, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গড়ে ওঠা চাঁদপুর জেলাকেন্দ্রিক সংগঠনসহ অন্যান্য সংগঠনকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার জন্যে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। বলা দরকার, আযান চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা বা মতলব উত্তর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে নিজেকে খ্যাতিমান দাবাড়ু হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ পান নি। রাজধানীতে থেকে তার আগ্রহ ও প্রচেষ্টা এবং পরিবারের সর্বাত্মক আনুকূল্যে আযান নিজেকে আন্তর্জাতিক মানের দাবাড়ু হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। তাই চাঁদপুর জেলাসহ বাংলাদেশকে গৌরব ও কৃতিত্বের সাথে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার স্বার্থে সাফায়াত কিবরিয়া আযানকে সব ধরনের প্রণোদনা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে দেয়া অনিবার্য বলে আমরা মনে করি। স্মর্তব্য, যে কোনো প্রতিভাকে গড়ে উঠতে সহযোগিতার পাশাপাশি সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছতে সহযোগিতা করাটা আবশ্যিক কর্তব্যের আওতায়ই পড়ে।