শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১২

রেলপ্রেমী স্টেশন মাস্টারই বটে!

অনলাইন ডেস্ক
রেলপ্রেমী স্টেশন মাস্টারই বটে!

রেলওয়ের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে শাহরাস্তি উপজেলার মেহের রেল স্টেশন মাস্টার মার খেয়েছেন। তার গায়ে হাত দিয়েছেন বিএনপির এক নেতা। রেল পুলিশ (জিআরপি)-এর এক কর্মকর্তার সামনে বিএনপির এ নেতা এমন দৌরাত্ম্য দেখিয়ে শাহরাস্তি থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। এ ঘটনাটি নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে সংবাদ পরিবেশন করেছেন শাহরাস্তি ব্যুরো ইনচার্জ মো. মঈনুল ইসলাম কাজল। গতকাল গুরুত্বের সাথে এ সংবাদটি ছাপা হয়। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, শাহরাস্তির মেহের রেল স্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলামের গায়ে হাত দেওয়ার অপরাধে শাহরাস্তি পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে আটক করেছে শাহরাস্তি থানা পুলিশ। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেলে তাকে আটক করা হয়।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রেলওয়ের জায়গায় অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ ও দখলের প্রতিকার চেয়ে স্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলাম কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বুধবার দুপুরে চাঁদপুর জিআরপি থানার ওসি রাজিব চন্দ্র কর অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে আসেন। তদন্তের এক পর্যায়ে অভিযুক্ত পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন স্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলামের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে কিল ঘুষি মারতে শুরু করেন। উপস্থিত সকলে এ সময় হতবাক হয়ে পড়েন। তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎক্ষণাৎ তদন্ত অসম্পূর্ণ রেখে চলে আসেন। বিষয়টি শাহরাস্তি থানা পুলিশকে অবহিত করলে শাহরাস্তি থানার উপপরিদর্শক আল আমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেলোয়ার হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। জিআরপি থানার ওসি রাজিব চন্দ্র কর জানান, আমি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে আসি। তদন্ত চলাকালীন হঠাৎ করে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন স্টেশন মাস্টারকে আক্রমণ করেন। স্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, দেলোয়ার হোসেন রেলওয়ের জায়গায় কৃষি লিজ এনে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করছেন এবং অবৈধভাবে দখল করে আসছেন। বিষয়টি আমি লিখতভাবে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তদন্তকারী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তিনি আমাকে কিল ঘুষি মারতে শুরু করেন। অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার ভুল হয়েছে, গায়ে হাত দেওয়া ঠিক হয়নি।

শুধু মেহের স্টেশন এলাকায় নয়, দেশের অধিকাংশ রেল স্টেশন সংলগ্ন স্থানে রেলওয়ের জায়গা স্বল্প খরচে বার্ষিক লীজ এনে লীজ গ্রহীতা বাণিজ্যিক স্থাপনা দোকানপাট, বসতঘর, কারখানা ইত্যাদি গড়ে তুলে ভাড়া দেয় অথবা নিজে ব্যবসা করে কিংবা বসবাস করে। এ অনিয়মের বিষয়টি স্টেশনের প্রধান হিসেবে স্টেশন মাস্টার জানেন। কিন্তু অধিকাংশ স্টেশন মাস্টার ঘুষ খেয়ে কিংবা অন্য সুবিধা পেয়ে এই অনিয়মের বিরুদ্ধে রেলওয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানান না। মেহেরের স্টেশন মাস্টার রেলওয়েকে ভালোবাসেন বলেই স্টেশন সংলগ্ন স্থানে বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন তার লীজপ্রাপ্ত জায়গায় অনিয়ম করার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন রেল কর্তৃপক্ষকে জানান। সেমতে রেল পুলিশ তদন্ত করতে আসে, যেটি লীজ গ্রহীতা দেলোয়ারের গায়ে লেগেছে। আর তাতেই তিনি বড়ো দল বিএনপির নেতা হিসেবে দৌরাত্ম্য প্রদর্শন করতে গিয়ে স্টেশন মাস্টারের গায়ে হাত দিয়েছেন এবং আটকও হয়েছেন। এমন নেতা যে বিএনপির ভাবমূর্তির প্রশ্নে মারাত্মক ক্ষতিকর, সেটা বলারই অপেক্ষা রাখে না। একে অনতিবিলম্বে দল থেকে বহিষ্কার ও পদ থেকে অপসারণ বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি। আর স্টেশন মাস্টার রেলওয়ের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে মার খেয়েছেন বলে তাকে রেল কর্তৃপক্ষের পুরস্কৃত করা অনিবার্য বলেও মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়