মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৫, ১১:১৮

এমন মৃত্যুরোধে সতর্কতা জারি জরুরি

অনলাইন ডেস্ক
এমন মৃত্যুরোধে সতর্কতা জারি জরুরি

চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারে ডাকাতিয়া নদীতে গোসল করতে গিয়ে এবার পানিতে ডুবে আরাফাত হোসেন (১৫) নামে এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের সহায়তায় এক ঘন্টা চেষ্টার পর চাঁদপুর নৌ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে। রোববার একই নদীতে একইভাবে মারা যায় এক কলেজ ছাত্র। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল ২০২৫) দুপুরে পুরাণবাজার ৫ নং খেয়াঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আরাফাত হোসেন স্থানীয় মাছ বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী ও মেরকাটিজ রোড ছমিদ খাঁ বাড়ির বাসিন্দা দুলাল গাজী (শুক্কুর)-এর ছেলে। দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে আরাফাত সবার বড়। সে পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে এলাকার ছেলেদের সাথে গোসল করার জন্যে ওই স্থান দিয়ে নদীতে নামে আরাফাত হোসেন। নদীতে অনেকক্ষণ সাঁতার কাটা ও ডুবাডুবি করার পর এক পর্যায়ে শারীরিক ভারসাম্য না রাখতে পেরে ডুবে যায়। সাথের ছেলেরা তীরে উঠে আসলেও আরাফাত নিখোঁজ হয়ে যায় । পরে ঘটনাটি স্থানীয়রা এবং স্বজনরা জানতে পারলে ৫নং খেয়াঘাটে বহু মানুষের ভিড় জমে যায়।খবর পেয়ে চাঁদপুর নৌ ফায়ার সার্ভিস ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালায় এবং ঘন্টাখানেকের মধ্যে ওই স্থানে নদীর তলদেশ থেকে আরাফাত হোসেনের নিথর দেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এ সময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং সহপাঠীসহ এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরে চাঁদপুর সদর নৌ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। চাঁদপুর নৌ থানার ওসি ইকবাল জানান, নদীতে গোসল করতে গিয়ে ছেলেটি মারা গেছে বলে পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই। পোস্টমর্টেম না করার জন্যে নিহতের অভিভাবকের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে আরাফাত হোসেনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। নৌ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জানান, আরাফাত নামের ছেলেটির পরনে জিন্সের প্যান্ট ছিলো। এমতাবস্থায় সাঁতার কাটতে গিয়ে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে ডুবে মারা যায়।

উল্লেখ্য, গত রোববার (২৭ জুলাই ২০২৫) চাঁদপুর শহরের গুণরাজদীতে ডাকাতিয়া নদীর দর্জিঘাট এলাকায় পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র সৌম্যজিৎ সরকার আপন (১৮) বন্ধুদের সাথে গোসল করতে গিয়ে সাঁতরিয়ে নদী পার হতে গেলে ডুবে মারা যায়, যার লাশ পরদিন উদ্ধার করা হয়। একদিনের ব্যবধানে পুরাণবাজার এলাকার আরেকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা শহরবাসীর মাঝে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

ডাকাতিয়া নদীতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে। এই নদীটিকে বর্তমানে দেখতে ছোট মনে হলেও এটির খরস্রোতা রূপটি কিন্তু রয়ে গেছে। এ নদীকে খালের মতো ভেবে শিশু-কিশোররা গ্রীষ্মকালে গরমে গা শীতল করতে খুব লাফ- ঝাপ দেয়। কিন্তু এটা যে বিপজ্জনক সেটি তারা মাথায় রাখে না। ফলে হয় করুণ মৃত্যু। গত রোববার ও মঙ্গলবার চাঁদপুর শহরে একজন কলেজ ছাত্র ও স্কুল ছাত্রের এমন মৃত্যু ডাকাতিয়ার খরস্রোতা রূপটিকে প্রকটভাবে তুলে ধরেছে। এ নদীটি একটি আন্তঃদেশীয় নদী। দৈর্ঘ্য ১৪১ কিলোমিটার। এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলাকে বহু ধারায় বিধৌত করে বাংলাদেশের বৃহত্তম ও প্রশস্ততম নদী মেঘনায় মিলিত হয়েছে। এমন একটি নদীতে শিশু-কিশোরদের দাফিয়ে বেড়ানো নিতান্তই ঝুঁকিহীন কোনো কাজ নয়। কাজেই এই নদী সম্পর্কে জানান দেয়া এবং শিশু-কিশোর সহ সব বয়সী মানুষকে সতর্ক করাটা খুব জরুরি। অন্যথায় এই নদীতে উদাসীনতা ও অবহেলাজনিত কারণে যে কোনো মানুষের মৃত্যুই ঠেকানো যাবে না। বিআইডব্লিউটিএ, নৌপুলিশ, নৌ ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড, এই নদী তীরবর্তী বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে মাইকিংসহ গণমাধ্যমে প্রচার করার বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়