মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৬

এটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কীরূপ ভবন?

অনলাইন ডেস্ক
এটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কীরূপ ভবন?

শাহরাস্তি উপজেলা সদরের দক্ষিণ নিজমেহের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ সিঁড়ির নিচে। এছাড়া একটি কক্ষে একই সাথে দুই শ্রেণীর পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন দুজন শিক্ষিকা। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল ২০২৫) দুপুরে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। শিশু শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন ৬ জন শিক্ষিকা। এ বিদ্যালয়টিতে রয়েছে মাত্র দুটি শ্রেণী কক্ষ, নেই কোনো অফিস রুম । বাধ্য হয়েই বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ সিঁড়ির নিচে অফিস করে যাচ্ছেন। সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শিশু শ্রেণী, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পাঠদান চলে। ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর পাঠদান করানো হয়। এতে করে একটি কক্ষে পঞ্চম শ্রেণী ও আরেকটি কক্ষে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পাঠদান একই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন দুজন শিক্ষিকা। নিজেদের কাছে বিষয়টি খুবই অস্বস্তিকর এবং দৃষ্টিকটু মনে হলেও বাধ্য হয়েই এটি করে যাচ্ছেন বলে তঁারা জানান।

শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ও পৌরসভা ভবন থেকে মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত দক্ষিণ নিজমেহের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পৌর এলাকার ৮নং সদর ওয়ার্ডে অবস্থিত চরমভাবে অবহেলিত এ বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকা মরিয়ম আক্তার জানান, ২০১৭ সালে তিনি এ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তারপর থেকেই প্রতিবছর ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্যে লিখিত আবেদন করে যাচ্ছেন । কিন্তু কোনো প্রকার সহযোগিতা পাননি। উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আক্তার হোসেন জানান, বিদ্যালয়টির ভবন প্রয়োজন, আমরা কয়েকবার তালিকাভুক্ত করে ভবনের জন্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। এমনকি উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকেও তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো ফলাফল আসেনি। সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল মাওয়া বলেন, একটি কক্ষে দুটি শ্রেণীর পাঠদান করতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়াও আমাদের অফিস নেই, নামাজের স্থান নেই। নিজমেহের গ্রামের মনির হোসেন জানান, এ এলাকাটি পাকিস্তানপাড়া নামে পরিচিত। তাই বিগত সরকারের আমলে স্কুলটির কোনো কাজ হয়নি। জানা গেছে, বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ পুরাতন ভবন ভেঙ্গে ২০১৭ সালে দুই রুমের নতুন ভবন করা হয়। সে সময় শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতাহেতু ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্যে আশ্বস্ত করা হয়। ৮ বছর অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত কোনো কিছু হয়নি। এতে করে শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষের সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা।

চঁাদপুর কণ্ঠের শাহরাস্তি ব্যুরো ইনচার্জ মো. মঈনুল ইসলাম কাজল গতকাল চঁাদপুর কণ্ঠে দক্ষিণ নিজমেহের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে উপরোল্লিখিত বিবরণ দিয়ে যে সংবাদ পরিবেশন করেছেন, তাতে পাঠকমাত্রই শিরোনাম দেখে থমকে গেছেন এবং সাথে সাথে পুরো সংবাদটি পাঠে আগ্রহী হয়েছেন। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবন ভেঙ্গে দুটি কক্ষ নিয়ে নূতন ভবন নির্মাণের নকশা যে প্রকৌশলী করেছেন এবং সেটি অনুমোদন দিয়ে যে কর্তৃপক্ষ ভবনটি করে দিয়েছে, তারা যে বাস্তবের বিপরীতে চলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। উন্নয়নের জোয়ারে, উন্নয়নের বন্যায় যারা শাহরাস্তিকে ভাসিয়ে দেয়ার কথা বলতে বলতে হয়রান হয়েছেন, তারা কি সাত বছরেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজটি করাতে পারলেন না? তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো কি উদার, না রাজনৈতিক কারণে ছিলো সঙ্কীর্ণ--সেটা ভাববার অবকাশ তৈরি হয়েছে। তারা যে কোমলমতি শিশুদেরকেও রাজনৈতিক চিন্তার কলুষতায় কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে তার নিকৃষ্ট উদাহরণ দক্ষিণ নিজমেহের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান দু কক্ষবিশিষ্ট ভবন। আমরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে সরেজমিনে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় এই বিদ্যালয় ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজটি জরুরিভাবে সম্পাদনের তাগিদ উত্থাপনের জন্যে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়