বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫৬

রেড সি : সৌদি পর্যটনের স্বপ্নযাত্রার নতুন দিগন্ত

মোহাম্মদ সানাউল হক
রেড সি : সৌদি পর্যটনের স্বপ্নযাত্রার নতুন দিগন্ত

সৌদি আরবের তাবুক প্রদেশে প্রায় ২৮ হাজার বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এক বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পুনর্জাগরণমূলক পর্যটন প্রকল্প দ্য রেড সি প্রজেক্ট। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। এটি সৌদি ভিশন ২০৩০-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার মূল লক্ষ্য দেশকে তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে মুক্ত করে বহুমুখী ও টেকসই পর্যটনশিল্প গড়ে তোলা। প্রকল্পটি পরিবেশবান্ধব ও উদ্ভাবনী ধারণার ভিত্তিতে নির্মিত, যেখানে বিলাসবহুল রিসোর্ট, আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র, সমুদ্রতটভিত্তিক পর্যটন সুবিধা এবং সংরক্ষিত সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

দ্য রেড সি প্রজেক্টকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পুনর্জাগরণমূলক পর্যটন উদ্যোগ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সুরক্ষা নিশ্চিত রেখে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা হবে। এখানে নির্মিত হবে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, আধুনিক অবকাঠামো, বিশ্বমানের হোটেল, বিলাসবহুল ভিলা ও মেরিনা, যা সৌদি আরবকে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে। প্রকল্পের মূল আকর্ষণ হলো পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা, যাতে সামুদ্রিক ও উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সব মিলিয়ে, এটি সৌদি ভিশন ২০৩০-এর একটি অনন্য দৃষ্টান্ত, যা দেশের পর্যটন খাতে এক নতুন যুগের সূচনা করবে।

রেড সি প্রজেক্ট সৌদি আরবের পশ্চিম উপকূলে, উমলুজ ও আল-ওয়াজহ শহরের মাঝামাঝি একটি বিস্তীর্ণ এলাকায় অবস্থিত। এখানে রয়েছে ৯০টিরও বেশি অক্ষত দ্বীপ, ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলরেখা, মরুভূমি, পর্বত এবং প্রাচীন আগ্নেয়গিরি। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো আল-ওয়াজহ ল্যাগুন, যার আয়তন প্রায় ২,০৮১ বর্গকিলোমিটার। এই ল্যাগুনে রয়েছে কোরাল রিফ, সামুদ্রিক ঘাস এবং ম্যানগ্রোভ বন, যা বৈশ্বিক সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রকল্পটিকে শুধু পর্যটনের জন্য নয়, পরিবেশগত দিক থেকেও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ করেছে।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবে রেড সি প্রজেক্টের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ ও উচ্চাভিলাষী পর্যটন উন্নয়ন উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ৫০টি বিশ্বমানের হোটেল নির্মাণ করা, যেখানে প্রায় ৮,০০০ অতিথিকক্ষ এবং ১,০০০-এরও বেশি আবাসন ইউনিট থাকবে। এর মাধ্যমে আধুনিক অবকাঠামো, বিলাসবহুল আতিথেয়তা সেবা এবং পরিবেশবান্ধব আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলে সৌদি আরবের পর্যটন খাতকে বৈশ্বিক পর্যায়ে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হবে।

২০২৩ সালে রেড সি প্রজেক্টের প্রথম তিনটি হোটেল চালু হয়। এরপর ২০২৪ সালে ১৬টি হোটেল, রেড সি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইয়ট মেরিনা, ঐতিহাসিক ও বিনোদনকেন্দ্র চালু হয়।

২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম গন্তব্য হিসেবে চালু হয় সিক্স সেন্সেস সাউদার্ন ডিউনস। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চালু হয় সেন্ট রেজিস রেড সি রিসোর্ট, মে মাসে নুজুমা—আ রিটজ-কার্লটন রিজার্ভ, নভেম্বর মাসে শেবারা রিসোর্ট ডিসেম্বর মাসে ডেজার্ট রক রিসোর্ট, এছাড়াও ২০২৫ সালের মে মাস নাগাদ মোট ৬টি পর্যটন গন্তব্য দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হয়; যার মধ্যে সাউদার্ন ডিউনস ও ডেজার্ট রক মূল ভূখণ্ডে এবং চারটি গন্তব্য দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত।

রেড সি প্রজেক্টের কেন্দ্রীয় অংশ হিসেবে শুরা দ্বীপ (শুরাইরাহ দ্বীপ নামেও পরিচিত) বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এখানে নির্মিত হচ্ছে কোরাল ব্লুম, যা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই প্রকল্পটির নকশা করেছেন বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ স্থপতি প্রতিষ্ঠান ফস্টার+পার্টনার্স। কোরাল ব্লুমের মূল লক্ষ্য হলো দ্বীপের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য ও সামুদ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণ করে বিলাসবহুল পর্যটন সুবিধা সৃষ্টি করা।

শুরা দ্বীপে গড়ে তোলা হচ্ছে বিশ্বমানের আতিথেয়তার এক অনন্য কেন্দ্র, যেখানে একসাথে থাকছে ১১টি আন্তর্জাতিক হোটেল ব্র্যান্ডের সমন্বিত নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের মধ্যে রয়েছে হায়াত, ফেয়ারমন্ট, রোজউড, জুমেইরাহ, ফায়েনা, র‌্যাফেলস, ইন্টারকন্টিনেন্টাল, মিরাভাল, এডিশন এবং এসএলএস-এর মতো বিশ্বখ্যাত হোটেল চেইন। প্রতিটি হোটেলকে এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে যাতে সমুদ্রতীরবর্তী এই দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিলাসিতা, আরাম এবং টেকসই অবকাঠামোর সমন্বয় করা যায়। এর ফলে শুরা দ্বীপ শুধু রেড সি প্রজেক্টের কেন্দ্রবিন্দুই নয়, বরং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য নতুন বিলাসবহুল অভিজ্ঞতার এক অন্যতম গন্তব্য হিসেবে গড়ে উঠছে।

এইসব বিশ্বমানের হোটেল দ্বীপটিকে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে এক বিশেষ অবস্থানে নিয়ে যাবে। বিলাসবহুল বিনোদনের অংশ হিসেবে দ্বীপে নির্মিত হচ্ছে সৌদি আরবের প্রথম ১৮-হোল গলফ কোর্স ‘শুরা লিংকস’, যা ২০২৫ সালে চালু হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এটি দ্বীপের বিনোদন অবকাঠামোয় নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং আন্তর্জাতিক গলফ পর্যটনে সৌদি আরবকে গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য করবে।

শুরা দ্বীপকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করেছে সৌদি আরবের সবচেয়ে দীর্ঘ ১.২ কিলোমিটার জলসেতু, যা গ্রীসের আর্কিরোডন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান দ্বারা নির্মিত।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে রেড সি গ্লোবাল ও কিংডম হোল্ডিং কোম্পানির মধ্যে ৫৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর হয় ফোর সিজনস রিসোর্ট নির্মাণের জন্য, যা ২০২৫ সালের শুরুতে চালু হবে।

উম্মাহাত দ্বীপপুঞ্জে বর্তমানে দুটি বিশ্বমানের রিসোর্ট কার্যক্রমে রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম সেন্ট রেজিস রেড সি রিসোর্ট, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত হয়। এই রিসোর্টে রয়েছে ৯০টি বিলাসবহুল কক্ষ এবং এর নকশা করেছেন বিশ্বখ্যাত জাপানি স্থপতি কেঙ্গো কুমা। রিসোর্টটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সামুদ্রিক পরিবেশের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য রেখে নির্মিত, যেখানে পরিবেশবান্ধব স্থাপত্য ও টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই রিসোর্টটি প্রিমিয়াম পর্যটকদের জন্য এক অনন্য ও আধুনিক অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

নুজুমা, রিটজ-কার্লটনের ৬৩টি বিলাসবহুল ভিলা নিয়ে গঠিত রিজার্ভ, মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রিসোর্ট হিসেবে পরিচিত, যেখানে প্রতি রাতের ভাড়া প্রায় ৩,৪৩১ মার্কিন ডলার। এটি ২০২৪ সালের মে মাসে চালু হয় এবং ২০২৫ সালের মার্চে ফোর্বস কর্তৃক ‘সেরা হোটেল’ নির্বাচিত হয়। এই দ্বীপগুলোতে প্রবেশ করা যায় শুধুমাত্র ইয়ট অথবা সি-প্লেনের মাধ্যমে, যা পর্যটকদের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতা।

শেবারা রিসোর্ট শেবারাহ দ্বীপে অবস্থিত এবং এতে ৭৩টি কক্ষ রয়েছে। এটি পরিচালিত হচ্ছে রেড সি গ্লোবাল হসপিটালিটি ব্র্যান্ডের অধীনে। রিসোর্টটির নকশা করেছে দুবাইভিত্তিক কিলা ডিজাইন। এখানে রয়েছে পানির ওপরে ভাসমান গোলক আকৃতির স্টেইনলেস স্টিলের ভিলা, যা শারজাহভিত্তিক গ্র্যাঙ্ক্রাফট নির্মাণ ও ইনস্টল করেছে ম্যামোয়েট। ২০২৫ সালে টাইম ম্যাগাজিন এই দ্বীপটিকে বিশ্বের সেরা ভ্রমণস্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

সৌদি আরবের আলনেসাই মরুভূমির বুকে গড়ে উঠেছে সিক্স সেন্সেস সাউদার্ন ডিউনস রিসোর্ট, যেখানে রয়েছে ৪০টি একান্ত ভিলা এবং ৩৬ কক্ষবিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ হোটেল কমপ্লেক্স, যা মরুভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রশান্তির সঙ্গে মিল রেখে নকশা করা হয়েছে। অন্যদিকে, গ্রানাইট পর্বতের গায়ে স্থাপিত অনন্য স্থাপত্যশৈলীর উদাহরণ ডেজার্ট রক রিসোর্ট, যা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওপেনহেইম আর্কিটেকচার দ্বারা নকশা করা হয়েছে। ৬৪ কক্ষবিশিষ্ট এই বিলাসবহুল রিসোর্টটি তার প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সুসমন্বিত নকশা এবং উচ্চমানের আতিথেয়তার জন্য বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে, যার জন্য ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে বুকিং কার্যক্রম শুরু হয়।

২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ঘোষিত আবু লাহেক দ্বীপ (লাহেক দ্বীপ) প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের সূচনা হয়। ৪০০ হেক্টর আয়তনের এই ব্যক্তিগত আবাসন দ্বীপে নির্মিত হচ্ছে ‘দ্য রিং’একটি ৮০০ মিটার দীর্ঘ আংটির মতো স্থাপনা, যেখানে থাকবে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, হোটেল ও খুচরা বিপণন কেন্দ্র। এর নকশা করছে ফস্টার+পার্টনার্স। দ্বীপটি ২০২৮ সালে চালু হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

রেড সি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (Red Sea International Airport) সৌদি আরবের পর্যটন ও যোগাযোগ অবকাঠামোয় একটি বড় সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০২৫ সালে বিমানবন্দরটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের জাতীয় বিমান সংস্থা সৌদিয়া রিয়াদ থেকে প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করে এখানে অবতরণ করে। পরে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ফ্লাইদুবাই প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করে, যা বিমানবন্দরটির আন্তর্জাতিক সংযোগের দ্বার উন্মুক্ত করে।

বিমানবন্দরের স্থাপত্য নকশা বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ফস্টার+পার্টনার্স তৈরি করেছে, যার মূল অনুপ্রেরণা এসেছে প্রাকৃতিক বালুর টিলার আকার ও টেক্সচার থেকে। এই নকশা শুধু নান্দনিকতাই নয়, বরং টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশবান্ধব ধারণার প্রতিফলন ঘটায়। যাত্রীদের বিমানবন্দর থেকে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক যানবাহন লুসিড এয়ার এবং মার্সিডিজ-বেঞ্জ ঊছঝ যা শূন্য নির্গমন নিশ্চিত করে। এই উদ্যোগকে সফল করতে সৌদি আরবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অফ-গ্রিড চার্জিং নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে, যা পুরোপুরি নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর নির্ভরশীল। এর ফলে রেড সি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে একটি আধুনিক, পরিবেশবান্ধব ও ভবিষ্যতনির্ভর পরিবহন হাব হিসেবে গড়ে তোলার পথ সুগম হয়েছে।

প্রকল্প এলাকায় নির্মাণাধীন রয়েছে ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর মাইক্রোগ্রিড ও ১.৩ গিগাওয়াটঘণ্টা ব্যাটারি, যা পুরো এলাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। দ্বীপপুঞ্জে যাতায়াতের জন্য চালু করা হয়েছে সৌদি আরবের প্রথম সি-প্লেন কোম্পানি ‘ফ্লাই রেড সি’, যার বহরে রয়েছে ৪টি সেসনা কারাভান ২০৮ সি-প্লেন।

২০২৪ সালের মার্চ মাসে বিশ্বখ্যাত ফুটবল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সৌদি আরবের সেন্ট রেজিস রেড সি রিসোর্ট পরিদর্শন করেন। তার এই সফর কেবল ব্যক্তিগত বিনোদনের জন্যই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তিনি রিসোর্টের বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য নিয়ে নিজের ইনস্টাগ্রামে প্রচারণা চালিয়ে এই আন্তর্জাতিক পর্যটন গন্তব্যটির প্রতি ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেন। রোনালদোর বিশাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফলোয়ারদের কাছে রেড সি প্রজেক্টের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে তার ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

পরবর্তীতে, ২০২৪ সালের জুন মাসে তিনি রেড সি প্রকল্পের অন্যতম প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকা নুজুমা রিজার্ভ ভ্রমণ করেন। এই জায়গাটি তার অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য, বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণে নেওয়া বিশেষ উদ্যোগের জন্য বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া সৃষ্টি করে। রোনালদোর এই ভ্রমণ ও প্রচারণা সৌদি আরবের টেকসই পর্যটন ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে।

একই বছরের এপ্রিল মাসে রেড সি গ্লোবাল ও ওয়ার্নার ব্রোস ডিসকভারি যৌথভাবে একটি বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেয়, যার শিরোনাম ‘Beneath the Surface: The Fight for Corals’। এই ডকুমেন্টারির মাধ্যমে সমুদ্রের প্রাণকেন্দ্র কোরাল রিফের গুরুত্ব ও সংরক্ষণ সম্পর্কে বিশ্ববাসীর মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো হবে। কোরাল রিফ জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য অপরিহার্য বাসস্থান হলেও জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ ও মানবসৃষ্ট হুমকির কারণে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। প্রামাণ্যচিত্রটি এই সংকট তুলে ধরার পাশাপাশি টেকসই প্রকৃতি সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পরিবেশন করবে।

রেড সি প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে সৌদি আরবকে বিশ্বের শীর্ষ পর্যটন গন্তব্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। ৫০টি হোটেল, ৮,০০০ রুম, ১,০০০-এরও বেশি আবাসন ইউনিট, আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা, পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবহার ও বিশ্বমানের পর্যটন সুবিধার সমন্বয়ে এই প্রকল্প সৌদি আরবের পর্যটন শিল্পকে একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়