বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ২০:১২

আসবাবপত্র, তৈজসপত্র ও গাড়ি ভাংচুর।। ককটেল বিস্ফোরণ।। পথে পথে নেতাকর্মীদের ওপর ও যানবাহনে হামলা।। আহত ২৫

চাঁদপুর শহরে বিএনপি নেতা আজম খানের বাসা ও অফিসে দু দফা ব্যাপক হামলা

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ।।
চাঁদপুর শহরে বিএনপি নেতা আজম খানের  বাসা ও অফিসে দু দফা  ব্যাপক হামলা
চাঁদপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি নেতা আজম খানের গাড়িসহ বাসা ও অফিসের ভাংচুরকৃত আসবাবপত্র। পাশে আহতরা।

বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য, চাঁদপুর জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আজম খানের বাসা ও অফিসে

দু দফা হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও তাঁর ব্যবহৃত গাড়ি ভাংচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও এ নেতার সমর্থকদের ওপর হামলা এবং যানবাহনে ভাংচুর করার অভিযোগ করেছেন আহতরা।

ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট ২০২৫)

সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে চাঁদপুর শহরের চিত্রলেখা মোড়ের সিংহ পাড়ায় আজম খানের বাসা ও অফিসে।

ঘটনার বিষয়ে আজম খান বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন, তারুণ্যের অহংকার, তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন ও দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে চাঁদপুর শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কস্থ হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে শোভাযাত্রা বের হওয়ার কথা ছিলো।

এটিকে কেন্দ্র করে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করার জন্যে

বাসায় বসে বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের সাথে নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করছিলাম। সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে হঠাৎ করে শতাধিক যুবক-কিশোর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার বাসার নিচে প্রথমে হামলা করে বাসার নিচে থাকা আমার ব্যবহৃত গাড়ি ও কয়েকটি মোটরসাইকেল ব্যাপকভাবে ভাংচুর করে এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। তিনি আরো জানান, কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই তারা দ্বিতীয় দফায় আমার বাসার সকল ফ্লোরে হামলা শুরু করে এবং বিশেষ করে আমি ৩য় তলায় যে ফ্লাটে থাকি, সেটির দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে সকল ফার্নিচার ও তৈজসপত্র ভাংচুর করে।

এমনকি আমার বাসায় থাকা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিগুলো পর্যন্ত ভেঙ্গে নিচে ফেলে দেয়। শুধু তাই নয়, আমার বাসার চারদিকে ঐ সন্ত্রাসী বাহিনী ঘিরে ফেলে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল মারতে থাকে এবং নানাভাবে বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকা সকলের ওপর এলোপাতাড়ি হামলা করতে থাকে। এই অবস্থায়

সদর মডেল থানা পুলিশকে অবহিত করা হলে ঘটনাস্থলে ঘটনার কিছুক্ষণ পর পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

তিনি আরো জানান, এই ঘটনায় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি হামলায়

দলের ২৫-৩০ জনের মতো আহত হয়।

বাসায় আহতরা হলেন :

ফরিদ (৪৬), পিতা সুরুজ মিয়া গাজী,

আলগি বাজার, হাইমচর; ,মোহাম্মদ ফারুক ( ২৮), পিতা মোহাম্মদ আলী গাজী,

আলগি বাজার, হাইমচর; জিতু খান (৪৮), বিষ্ণুপুর, চাঁদপুর সদর; আলম গাজী (৩৮), পিতা সিরাজুল ইসলাম, কোড়ালিয়া, চাঁদপুর শহর; নয়ন (৩৫), পুরাণবাজার, চাঁদপুর সদর। এরা সকলেই মারাত্মক আহত হন। এদেরকে প্রথমে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্মরত চিকিৎসক

উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।

এই ঘটনার পরও বিকেলের কর্মসূচি পালন করার জন্যে সকল চেষ্টা করেন আজম খান।

বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বিভিন্ন যানবাহনে করে হাসান আলী হাই স্কুল মাঠের উদ্দেশ্যে নেতাকর্মীরা আসতে থাকলে সন্ত্রাসীরা বাবুরহাট, ওয়্যারলেস, বাসস্ট্যান্ড ও পুরাণবাজার ব্রিজের গোড়ায়

ঐ সকল যানবাহন ভাংচুর করে এবং দলীয় নেতা- কর্মীদেরকে আহত করে। তিনি আরো জানান, শুধু উল্লেখিত ঘটনাই নয়, এ সকল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে শহরে মহড়া দেয়।

এক পর্যায়ে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে

ডিবি পুলিশের শতাধিক সদস্যের সামনে দিয়ে পুনরায় বাসায় হামলা চালানোর চেষ্টা করে এবং বেশ ক'টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এদিকে সকালে ঘটনা শোনার পরপরই ঘটনাস্থলে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাহার মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ঘটনার খবর শুনে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর একটি টীম চলে আসে।

অপরদিকে দুপুরের পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে পুনরায় বিকেল সোয়া ৪টার দিকে পুনরায় হামলার চেষ্টা চালায়। এরপর ঘটনাস্থলে পুনরায় সেনাবাহিনীর টীম চলে। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চাঁদপুর শহরের

চিত্রলেখা মোড়ের সিংহ পাড়ায আজম খানের বাসভবনের সামনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টিম মোতায়েন ছিলো।

এদিকে ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ ৩ জন কে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা আজম খান বলেন, যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটি এখনো হিসেব করিনি। তবে তিনি বলেন, এক কোটি টাকার উপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তিনি কে বা কারা ঘটনা ঘটিয়েছে, সেই বিষয়ে তিনি কাউকে কোনো ধরনের দোষারোপ না করে বলেন, যে বা যারা ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাবে।

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ ঘটনা কার নির্দেশনায়, কার ইন্ধনে ঘটেছে, কারা করেছে সেটি এই চাঁদপুর শহরবাসীর জানা রয়েছে। সেই বিষয়ে আমি কোনো কথা বলবো না ।

এ ঘটনার বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাহার মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঘটনার কথা শুনে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে চলে আসি। এছাড়াও ঘটনাস্থলে যৌথ বাহিনীর তাৎক্ষণিক উপস্থিতি ছিলো। ফলে ঘটনাটি আমরা তাৎক্ষণিক নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। ভুক্তভোগী আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করতে চাইলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা ঘটনাস্থল থেকে ৩ জন কে আটক করেছি।

আটককৃতদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।

পুনরায় বিকেলে হামলা ও ককটেল ফাটানোর বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিলো বিধায় হামলা করতে পারেনি। তবে অপরাধী অপরাধীই, যে দল বা মতের হোক না কেন। অপরাধী ও অন্যায়কারীকে আমরা প্রশ্রয় দেবো না, অবশ্যই অপরাধীদের বা অন্যায়কারীদের

বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

প্রেস ব্রিফিং

এদিকে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট ২০২৫) সন্ধ্যায় আজম খানের বাসায় ও দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় সংক্ষিপ্ত এক প্রেস বিফ্রিং করেন তিনি, যাতে বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু মধ্যম সারির কিছু নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আজম খান বলেন,ঘটনার নেপথ্য নায়ক কে, কার নির্দেশনায় হামলা হয়েছে, সেটি আমি ও চাঁদপুরবাসী জানে। কিন্তু আমি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের বিএনপি করি। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারুণ্যের অহংকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলের একজন কর্মী হয়ে দলের জন্যে কাজ করছি।

আমি বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে সদর ও হাইমচর উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে যাচ্ছি। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সালাম পৌঁছে দিচ্ছি। আমি এ দুজনের জন্যে সকলের নিকট দোয়া চাচ্ছি। যাতে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ যেনো ধানের শীষের প্রতীকে রায় দিয়ে ধানের শীষকে বিজয়ী করে আগামী নির্বাচনে যেনো বিএনপি জনগণের রায় বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।

সেজন্যে আমি কাজ করছি। আমি তো কারো প্রতিদ্বন্দ্বী নই, আমি তো কারো সাথে প্রতিযোগিতা করছি না। আমি বলিনি যে, আমি একজন প্রার্থী বা

আমি একজন নেতা।

আমি সব সময় বলে আসছি, আমি একজন কর্মী, আমি দলের জন্যে কাজ করছি।

তিনি আরো বলেন, দেশের জনগণের ভালোবাসা, দেশের জনগণের সমর্থনের কারণে এই দেশেই নয়, এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বিএনপি বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল। বিএনপিতে একই পদে যোগ্য একাধিক নেতা রয়েছে। অতএব দল যখন যে নেতৃত্বের জন্যে যাকে যে পদে দেয়, আমি বিএনপির রাজনীতি করলে সেটি মেনে এ দলের রাজনীতি করতে হবে। আমি মনে করি, আজকে আমার বাসা ও অফিসে যে হামলা, সন্ত্রাসী হামলা করে আহত করা হয়েছে, তারাও আমাদের দলের কর্মী, ঘটনাগুলো যে বা যারা ঘটিয়েছেন, তারা নিশ্চয়ই ভালো কাজ করেননি। এর বিচার আমি চাঁদপুরবাসীর কাছে দিলাম।

তিনি প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো জানান যে, এই ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে হিসেব করে পরে জানাবেন। ঘটনার পর পরই তিনি দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেছেন।

তিনি শীঘ্রই এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ

করবেন বলে জানান।

তিনি বলেন, যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তারা যদব বিএনপির কর্মী হন, তাহলে আমার প্রশ্ন, আমি একজন মানুষ হিসেবে অপরাধ করতে পারি বা আমার কোনো অন্যায় হতে পারে, কিন্তু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া তো কোনো অপরাধ করেননি। তাদের ছবিগুলো কেনো ভেঙ্গে ফেললেন এবং পা দিয়ে মাড়িয়ে তাদের ছবিগুলো নষ্ট করলেন?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়