সোমবার, ০৪ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৮:৩৮

এক বছরেও হদিস মেলেনি রায়পুর-রামগঞ্জ থানার লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের

এক বছরেও হদিস মেলেনি রায়পুর-রামগঞ্জ থানার লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি।।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর এবং রামগঞ্জ থানায় হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি লুট হওয়া ১৫টি অস্ত্রের এখনো কোনো হদিস মেলেনি। উদ্ধার হয়নি খোয়া যাওয়া গোলাবারুদের অর্ধেকও। ব্যক্তি মালিকানার লাইসেন্স করা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সাবেক সভাপতি সালাহ উদ্দিন টিপুর আগ্নেয়াস্ত্র এখনও জমা পড়েনি।

গত এক মাস ধরে রায়পুর ও রামগঞ্জ থানার ভবনের সংস্কার কাজ চলছে। তবে পরিবহন ও জনবল আরো বাড়ানো দরকার বলে পুলিশ অফিসাররা মনে করছেন।

গত বছরের ২৮ আগস্ট রায়পুর থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. হায়াত উল্লাহ বিপি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা বিক্ষুব্ধ জনতার নামে একটি মামলা করেন। গত ৫ আগস্ট থানায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করায় গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও মামলার স্পর্শকাতর আলামত আগুনে পুড়ে গেছে। বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করা হয়েছে। এতে প্রায় ২ কোটি ৯৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

একই তারিখে রামগঞ্জ থানার এসআই মো. জায়েদ ভুঁইয়া বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা বিক্ষুব্ধ জনতার নামে মামলা করেন। থানায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করায় গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও মামলার স্পর্শকাতর আলামত আগুনে পুড়ে গেছে। বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করা হয় । প্রায় ২ কোটি ৪৩ লাখ ২৭ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এদিকে যৌথবাহিনীর অভিযান লক্ষ্মীপুরে এক বছরেও লুট হওয়া বেশিরভাগ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার না হওয়ায় লক্ষ্মীপুরে জননিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর রায়পুর থানা থেকে ৭৪টি ও রামগঞ্জ থানা থেকে ৩৮টিসহ মোট ১১২ টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট করে দুর্বৃত্তরা। পরে বিভিন্ন সময় অভিযান করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লুট হওয়া পৃথক ৪টি আগ্নেয়াস্ত্র (এসএমজি+ তারাস পিস্তল) উদ্ধার করলেও সেগুলো অকেজো।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্যক্তি মালিকানার বৈধ অস্ত্র জমা দিতে সরকারের বেঁধে দেওয়া ৩ আগস্টের মধ্যে ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে জমা পড়ে ৯টি। সে সময় কয়েকটি ব্যাংকের ৭টি অস্ত্র জমা পড়েনি। এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামী করে রায়পুর ও রামগঞ্জ থানায় পৃথক দুটি মামলাও দায়ের হয়।

আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ বেহাত হওয়ায় জননিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে লক্ষ্মীপুর আদালতের আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার না হওয়াটা উদ্বেগজনক। যারা লুট করেছে, তাদের অবশ্যই অসৎ উদ্দেশ্য আছে। তাই দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা উচিত।

এ বিষয়ে আদালতের আরেক আইনজীবী (এপিপি) আবদুল আহাদ শাকিল বলেন, থানা থেকে লুট হওয়া বিপুল গোলাবারুদ ও আগ্নেয়াস্ত্র আমাদের জননিরাপত্তার জন্যে বিশাল এক হুমকি। এতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার জরুরি।

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপাার আক্তার হোসেন বলেন, দুটি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার প্রক্রিয়াকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে পুলিশ। এছাড়াও জমা না পড়া বৈধ অস্ত্র নিয়েও সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ হয়েছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অস্ত্রগুলো দ্রুত উদ্ধার ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুরে বেসামরিক ব্যক্তি–প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সকৃত ৩৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে বিভিন্ন থানায় জমা পড়েছে ৩৪টি। এসবের অস্ত্রের মধ্যে পিস্তল ১৫টি, শর্টগান ১৭টি, একটি বন্দুক ও একটি রাইফেল। অবশিষ্ট অস্ত্রটি সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহউদ্দিন টিপুর। তিনি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আলোচিত প্রয়াত মেয়র আবু তাহেরের ছেলে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়