মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩১

সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সঙ্কট নিয়ে সরকারের উদাসীনতা!

অনলাইন ডেস্ক
সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সঙ্কট নিয়ে সরকারের উদাসীনতা!

আমাদের সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়গুলো অবকাঠামোগত সৌন্দর্যে ভরপুর থাকলেও শিক্ষক সঙ্কটে জর্জরিত। উন্নয়নের বাহ্যিক প্রদর্শনী চললেও অন্তর্গত অনুন্নয়ন অধিকাংশ সরকারি বিদ্যালয়কে খুঁড়িয়ে চলতে বাধ্য করছে। সরকারি বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যেগুলো বিখ্যাত, সেগুলো একসময় সমস্যামুক্ত দেখা গেলেও বর্তমানে সেখানেও আগের রূপ নেই। চাঁদপুর জেলার বিখ্যাত হাসান আলী ও মাতৃপীঠসহ ১২টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কী অবস্থা সেটি জানার জন্যে একটি নমুনা সংবাদই যথেষ্ট, যেটি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ছাপা হয়েছে। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘মতলব উত্তরে শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক।। শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত’। সংবাদটিতে মতলব উত্তরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহবুব আলম লাভলু লিখেছেন, মতলব উত্তর উপজেলার শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এসব বিদ্যালয়ে চলতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী শিক্ষকরা। এসব বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।

জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৮০টি। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক নেই ১১৬টি বিদ্যালয়ে।এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে চলতি দায়িত্বে ৪১জন ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন ৭৫জন। ৬/৭ বছর আগে সহকারী শিক্ষক থেকে চলিত দায়িত্ব দেয়া ৪১জন প্রধান শিক্ষককে এখনও স্থায়ী করা হয়নি। তাদের স্থায়ী না করায় তাদের স্থলে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছে না। সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকা, চাকরি থেকে অবসর এবং মৃত্যুজনিত কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকের পদগুলো শূন্য হয়। এ উপজেলায় ৫টি উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারের পদ থাকলেও শূন্য রয়েছে তিনটি পদ। মাত্র দুজন অফিসারের তদারকিতে চলছে এ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। অভিভাবকরা জানান, শিক্ষার প্রথম ধাপ হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখান থেকেই একটি শিশু তার শিক্ষাজীবনের ভিত্তি গড়ে তুলবে। কিন্তু শিক্ষার ভিত্তি এ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যদি পাঠদানে ঘাটতি থাকে, তবে শিশুদের ভবিষ্যৎ কতোটা দৃঢ় হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শূন্য পদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দিয়ে সংকট নিরসনের দাবি জানান তারা। সচেতন মহল মনে করেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ করতে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান করাতে পারছেন না। আবার প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকা মানে বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষকের পদ শূন্য থাকা। গত এক যুগেরও অধিক সময় এ অবস্থা চলতে থাকলেও তা আজও পূরণ হয়নি।

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির মতলব উত্তর উপজেলা শাখার সভাপতি দেওয়ান আখম বাহাউদ্দিন জানান, প্রধান শিক্ষক স্বল্পতার কারণে এ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবৎ। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের আটটি পদ সৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও পদ রয়েছে মাত্র পাঁচটি। এর মধ্যে তিনটি পদ রয়েছে দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা এক সহকারী শিক্ষক বলেন, প্রশাসনিক কাজ এবং একসাথে শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠদান করা কঠিন হয়ে পড়ে। একদিকে গেলে অন্যদিক ব্যাহত হচ্ছে। তবে শূন্যপদগুলো পূরণ হয়ে গেলে এ সমস্যার সমাধান হবে। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আক্তার হোসেন জানান, সহকারী শিক্ষকদের থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে ৬৫ ভাগ শিক্ষকের প্রধান শিক্ষক হওয়ার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু তাদের দাবি শতভাগ। এ সংক্রান্ত মামলা-জটিলতার কারণেই প্রধান শিক্ষকের এতোটা স্বল্পতা। স্কুলে একজন শিক্ষকের অভাব থাকলে তো স্কুলে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হবেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখতে শূন্য পদ পূরণ জরুরি। প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য থাকলে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেয়। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য থাকার বিষয়ে মতলব উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বক্তব্য যদি সঠিক হয়, তাহলে সেটা দুঃখজনক। মামলা নিষ্পত্তির ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কতোটা তৎপর সেটা জানার কৌতূহল সচেতন ব্যক্তিমাত্রেরই আছে। মামলার অজুহাতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের পদ বছরের পর বছর শূন্য থাকা এবং সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য থাকা দুঃখজনক। এতে শিশু শিক্ষার্থীরা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয় এবং শিখন ঘাটতিতে ভোগে। এমতাবস্থায় যে সকল অভিভাবকের সামর্থ্য আছে, তারা এমন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তাদের সন্তান বা পোষ্যকে নিকটস্থ ভালো বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কিংবা কিন্ডারগার্টেনে নিয়ে যায়। এ বাস্তবতা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারগণ জানেন। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক সঙ্কটে কোনো কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া তথা ড্রপ আউট এতো বেশি যে, মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা দুই অঙ্কের ঘরে গিয়ে দাঁড়ায়। এমন অবস্থা থেকে বিদ্যালয়গুলোর উত্তরণে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু না কিছু করাটা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়