প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩:৩৮
চাঁদপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে উৎকণ্ঠা, বাড়ছে দুর্ঘটনার শঙ্কা

সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ভূমিকম্পে আতঙ্ক বেড়েছে চাঁদপুরে। জেলার ১৭৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হলেও, আবাসিক বা অনাবাসিক ভবনের নেই কোনো সুনির্দিষ্ট তালিকা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম। এদিকে, শিগগিরই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
|আরো খবর
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার কংগাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শন করে গিয়ে বাইরে থেকে স্বাভাবিক মনে হলেও ভবনের ভেতরে ফাটল আর ভাঙনের ভয়াবহ চিত্র। খসে পড়া আস্তরণের ভেতর বের হয়ে আছে মরিচাধরা রড।
শিক্ষার্থীরা জানান, আগে থেকেই ফাটল ধরা দেয়াল। ভূমিকম্পে তাদের স্কুলের ফ্যান খুলে পড়েছে। কিন্তু তখন ক্লাস না থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছে তারা। ভবন ধসের আতঙ্কে তাদের লেখাপড়ায় ক্ষতি হচ্ছে। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শারমিন আক্তার জানান, বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পর থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আতঙ্কে সময় কাটে তাদের। সম্প্রতি সময়ে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের ফলে তাদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোরশেদা আক্তার বলেন, ১৯৯০-এর দশকে নির্মিত এ ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয় ২০২৩ সালে। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর নতুন করে দেখা দিয়েছে একাধিক ফাটল। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সেখানে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছি আমরা। দুর্ঘটনার ভয়ে এখন অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
কংগাইশের মতো এমন দুরবস্থা জেলার আরও বেশ কিছু স্কুলের। জেলায় মোট বিদ্যালয় আছে ১ হাজার ১৫৬টি। এর মধ্যে ৮ উপজেলার প্রায় ১৭৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনকে ইতোমধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তাদের দেওয়া তথ্য মতে চাঁদপুর সদরে ৪৩টি, মতলব দক্ষিণে ১৫টি, মতলব উত্তরে ১৪টি, ফরিদগঞ্জে ২০টি, হাইমচরে ৫, শাহরাস্তিতে ২০টি, কচুয়া উপজেলায় ৩৯টি, হাজীগঞ্জ উপজেলায় ১৭টি স্কুল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ।
সাম্প্রতিক সময়ে ঘটা ভূমিকম্পের ফলে নতুন করে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে আরও অনেক ভবন। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম।
ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা ভয় কাজ করছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি স্থানীয় পর্যায় ও কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায়, আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো যেন সংস্কারের মাধ্যমে স্বাভাবিক পাঠদান চলমান রাখা যায়।
বিদ্যালয়ের তালিকা থাকলেও জেলার অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সম্পর্কে নেই কোনো তথ্য। চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় রয়েছে বহু পুরানো সরকারি-বেসরকারি ভবন। যেগুলো দুর্যোগে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলছেন স্থানীয়রা।
শহরের পাল পাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. নকিব বলেন, যেসব ভবন অনেক পুরানো, টেম্পার নেই, সেগুলো ভেঙে ফেলা উচিত। যে কোনো সময় এসব ভবন ধসে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্যোগে ক্ষতি হ্রাসে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণের তাগিদ জানিয়ে চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক সৈয়দ মুহাম্মদ মোরশেদ হোসেন বলেন, ভবন যদি অনেক পুরাতন হয়ে থাকে তাহলে ভূমিকম্পের ফলে বা অন্য যেকোনো কারণে এগুলো ধসে পড়তে পারে। আমাদের যেসব এলাকায় এ ধরনের ভবন রয়েছে, যারা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণ করে নেওয়া।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর পৌর প্রশাসক গোলাম জাকারিয়া বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ভূমিকম্পের পর আমরা একটি কমিটি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কমিটি খুঁজে বের করবে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে কিনা। আমার ধারণা অবশ্যই আছে। সামনের দিনে আমরা বের করতে পারলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
একই সঙ্গে পৌরবাসীর নিকট অনুরোধ জানাই, ঝুঁকিপূর্ণ এমন ভবন যেন নিজেদের নিরাপত্তার জন্য নিজে থেকে ভেঙে ফেলে।
শহরজুড়ে নতুন ভবনের পাশাপাশি রয়েছে শত বছরের পুরনো অসংখ্য ভবন। ঝুঁকিপূর্ণ সেসব ভবন শনাক্ত ও অপসারণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। সূত্র : দেশ রূপান্তর।








