প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৯
নিখোঁজ নীল চিঠি

চট্টগ্রামের পাহাড়ঘেরা ছোট্ট শহর। জায়গাটার নাম রামপুর। সেই এলাকায় একদিন হঠাৎ করেই হইচই পড়ে গেল। শহরের সবচেয়ে পুরনো লাইব্রেরি রামপুর পাঠাগার থেকে একটি রহস্যময় নীল চিঠি নিখেঁাজ হয়ে যায়। এই চিঠিটি ছিল একটি শতবর্ষ পুরনো বইয়ের ভেতরে, যার নাম রহস্যের ছায়া। পুরোনো লোকেরা বলতেন, এই চিঠির ভেতরে লুকিয়ে আছে এক গুপ্তধনের সন্ধান।
চিঠি হারিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহরের কিশোর গোয়েন্দা দল তিন তিতলি কাজে নেমে পড়ে। এই দলের সদস্য তিনজন: রাফি, মীম, আর তুহিন। তিনজনই সপ্তম শ্রেণির ছাত্র, কিন্তু রহস্য সমাধানে তাদের আগ্রহ আর বুদ্ধিমত্তা অনেক বড়দেরও হার মানায়।
তিন তিতলি দল প্রথমেই যায় পাঠাগারে। লাইব্রেরির দায়িত্বে ছিলেন বৃদ্ধ মিসেস রওশন, যিনি বললেন, “চিঠিটা ছিল বইয়ের শেষ পাতায়। গতকাল বিকেলে একজন অচেনা লোক বইটা দেখতে এসেছিলেন। তারপর থেকেই চিঠিটা নেই।”
তিনজন বইয়ের তাক, টেবিল, জানালাÑসব খুঁটিয়ে দেখে। রাফি খেয়াল করে, জানালার পাশে মেঝেতে একটা ছোট্ট কাগজের টুকরো পড়ে আছে। তাতে লেখা “নীল আলোয় পথ খুলবে, কিন্তু সময় কম।”
তুহিন বলল, “এটা নিশ্চয়ই চিঠির অংশ! কেউ হয়তো তাড়াহুড়োতে ফেলে গেছে।”
মীম বলল, “নীল আলো মানে কী? কোনো লাইট? না কি কোনো সংকেত?”
তারা সিদ্ধান্ত নেয়, শহরের নীল আলোয় আলোকিত জায়গাগুলো খুঁজে দেখতে হবে।
রামপুরে এমন একটি জায়গা আছে যেখানে রাতে নীল আলো জ্বলেÑপুরনো রেলস্টেশনের পাশের “নীলঘর”। এটি এখন পরিত্যক্ত, কিন্তু শহরের বয়স্করা বলেন, একসময় এখানে গুপ্তচররা গোপন বার্তা আদান-প্রদান করত।
তিন তিতলি রাতে সেখানে যায়। নীলঘরের ভেতরে ঢুকে তারা দেখে, দেয়ালে অঁাকা আছে একটি গোল চিহ্ন, যার মাঝখানে লেখা “জ-১৭”।
রাফি বলল, “এটা কি কোনো কোড?”
তুহিন বলল, “জ মানে হয়তো ‘জড়ড়স’ বা ‘জড়ঁঃব’। ১৭ নম্বর কিছু একটা।”
তারা নীলঘরের পেছনে গিয়ে দেখে, একটা পুরনো দরজা, যার ওপর লেখা “জড়ড়স ১৭”। দরজাটা বন্ধ, কিন্তু তালা নেই।
তারা দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে। ঘরটা অন্ধকার, কিন্তু মীমের ব্যাগে ছোট টর্চ ছিল। আলো ফেলতেই দেখা যায়, দেয়ালে ঝুলছে পুরনো মানচিত্র, আর টেবিলের ওপর রাখা একটা ধুলোমাখা বাক্স।
বাক্স খুলতেই তারা পায় একটি ছোট্ট খাতা, যার প্রথম পাতায় লেখা: “যদি চিঠি হারাও, খুঁজো ছায়ায়। ছায়া বলে দেয় কোথায় আলো।”
তিনজন ভাবতে থাকে, “ছায়া” মানে কী? রাফি জানালার দিকে তাকিয়ে বলে, “দেয়ালের ছায়া ঠিক একটা তীরের মতো দেখাচ্ছে!”
তারা ছায়ার দিক অনুসরণ করে দেয়ালের এক কোণায় গিয়ে দেখে, সেখানে একটা ইট আলগা। ইট সরাতেই বেরিয়ে আসে একটি ছোট্ট নীল খাম।
খাম খুলে তারা দেখে, সেটাই সেই হারানো নীল চিঠি। চিঠিতে লেখা:
“যে খুঁজে পাবে এই চিঠি, সে পাবে রামপুরের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রহস্যের চাবি। পাঠাগারের নিচে আছে একটি গোপন কক্ষ, যেখানে লুকানো আছে শহরের পুরনো নথি, মানচিত্র, আর একটি সিন্দুক। সিন্দুক খুলতে হলে চাই তিনটি সংকেতÑআলো, ছায়া, আর সময়।”
তিনজন বুঝে যায়, তারা প্রথম দুটি সংকেত পেয়েছেÑনীল আলো আর ছায়া। এখন দরকার “সময়”।
তারা আবার পাঠাগারে ফিরে যায়। মিসেস রওশন বলেন, “এই পাঠাগার ১৯২৫ সালে তৈরি হয়েছিল। প্রথম ঘড়িটা ছিল পশ্চিম দেয়ালে, যেটা এখন বন্ধ।”
তারা ঘড়ির দিকে তাকায়। ঘড়িটা থেমে আছে ঠিক ৭টা ২৫ মিনিটে।
তুহিন বলল, “৭:২৫Ñএটাই সময়ের সংকেত!”
তারা পাঠাগারের নিচে গোপন কক্ষ খুঁজে পায়। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই তারা দেখে, একটা বড় সিন্দুক। সিন্দুকের সামনে তিনটি বোতামÑএকটা নীল, একটা ছায়া রঙের, আর একটা ঘড়ির চিহ্নযুক্ত।
তিনটি বোতাম একসাথে চাপতেই সিন্দুক খুলে যায়।
সিন্দুকের ভেতরে তারা পায়:
-রামপুর শহরের শতবর্ষ পুরনো মানচিত্র
-কিছু সোনার কয়েন
-একটি চিঠি, যেখানে লেখা: “এই গুপ্তধন রামপুর পাঠাগারের উন্নয়নের জন্য। যারা এটি খুঁজে পাবে, তাদের দায়িত্ব শহরের জ্ঞানভাণ্ডার রক্ষা করা।”
তিন তিতলি দল চিঠি ও গুপ্তধন পাঠাগারের কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে। শহরের মানুষ তাদের বাহবা দেয়, আর পাঠাগার নতুন করে সাজানো হয়।
তিন তিতলি আবারও প্রমাণ করল, বয়স নয়Ñবুদ্ধি, সাহস আর বন্ধুত্বই আসল শক্তি। রহস্যের ছায়া থেকে তারা আলোয় নিয়ে এল ইতিহাসের এক গোপন অধ্যায়। আর রামপুর শহর পেল তার হারানো গর্ব।
এভাবে তারা মানুষের নজর কাড়ে তাদের বুদ্ধিমত্তার কারণে। অবশেষে একদিন একটি সরকারি সংস্থা তাদের তিনজনকে এই নতুন জ্ঞানভাণ্ডার আবিস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিক পুরস্কার প্রদান করে, আর তারা মানুষের ভালোবাসা অর্জন করে। মানুষজন তাদেরকে দেখলে বলে, বয়স নয় জ্ঞানই সম্পদ।








