শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৫

হৃদয়বতী

মিজানুর রহমান রানা
হৃদয়বতী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

তেরো.

হোটেল সৈকতে বেশ ফুর্তিতে আছে হরকত। সাথে তার শিষ্য রাসেল। ঠিক এই সময়ে হরকতের মুঠোফোনটা বেজে উঠলো।

চেঙ্গিস খানের কণ্ঠ। ‘হরকত কোথায় তুই?’

হরকত ঢোক গিললো। সে জানে চেঙ্গিসের পাল্লায় যারা একবার পড়ে তাদের ঘাড়ে আর ধড় থাকে না। হঠাৎ করে চেঙ্গিস কেনো তাকে ফোন করলো?

ধমকে উঠলো চেঙ্গিস, ‘কথা বল হরকত? কোথায় তুই?’

গলা দিয়ে মুখ পর্যন্ত কথা বের হচ্ছে না হরকতের। ঠিক সেই সময়েই রুমের দরজা খুলে গেলো। সামনে দাঁড়িয়ে আছে চেঙ্গিস, নাদের ও ইরফান।

পালাতে চাইলো হরকত। কিন্তু চেঙ্গিসের প্যান্টের পকেট থেকে একটা রিবলভার উঁকি দিলো। তারপর সেই রিবলভারের নলটা হরকতের গলায় এসে ঠেকলো।

রাসেল তাকিয়ে আছে বোকার মতো। যেনো পৃথিবীতে কেয়ামত নেমে এসেছে।

চেঙ্গিস এক দুই তিন গুণতে লাগলো। পেছনে নাদের ও ইরফানকে দেখে হরকত বুঝে ফেলেছে চেঙ্গিস তার কাছে কেনো এসেছে।

সে চোখ বন্ধ করলো। কিন্তু আবারও ধমকে উঠলো চেঙ্গিস, ‘বল অনন্যা কোথায়?’

‘আমি জানি না। দোহাই আল্লাহর আমাকে ছেড়ে দাও।’

‘হরকত, না জানলে তোর চামড়া তুলে তাতে লবণ লাগানোর ব্যবস্থা করবো। যাতে জীবনের সব কষ্টগুলো পৃথিবীতেই ভোগ করে যেতে পারিস।’

চেঙ্গিসের ভয়াবহ শাস্তির কথা অবগত আছে হরকত। তাই সে যখন মুখ খুলতে যাবে ঠিক তখনই পাশের একটা বিরাট স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ইমতিয়াজের কণ্ঠস্বর।

‘আমি ইমতিয়াজ বলছি।’

তিনটি শব্দ মিলে একটা বাক্য। সারা রুমে গমগম করে বেজে উঠলো। সচকিত ইরফান, নাদের ও চেঙ্গিস সেদিকে তাকাতেই দেখতে পেলো স্ক্রিনে ইমতিয়াজ কথা বলছে। পাশে অনন্যা।

‘তাহলে তোমরা বেশ অবাকই হয়েছো?’ প্রশ্ন করলো ইমতিয়াজ। ‘এই হোটেলটাতে তোমাদেরকে ফাঁদ পেতে আনা হয়েছে, যাতে তোমরা অনন্যার খোঁজে এখানে আসতে পারো। আর আমারও পিছু নিতে কানাডায় আসতে পারো। আমি তোমাদেরকে আমার ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি। যদি সাহস থাকে তোমরা চলে আসো। খেলা হবে। হা হা হা।’

দানবের মতোই হেসে উঠলো ইমতিয়াজ। তারপর বললো, ‘চেঙ্গিস তোমার সাথে একটু শক্তি পরীক্ষা করতে চাই। আমি পুরো দেশটাকে জাহান্নাম বানিয়ে দিয়েছিলাম, সে সময় তুমি আমার পাশে ছিলে। আমি প্রধানমন্ত্রী থেকে সকল মন্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ করতাম ভারতের হয়ে। বাংলাদেশ পাকিস্তানের দাসত্ব থেকে যেদিন মুক্তি পেয়েছে, সেদিন থেকেই ভারতের দাসত্ব শুরু করেছে। এ যেনো দোযখের মতো অবস্থা। দোযখে যেমন পানির জন্যে হাহাকার করলে জাক্কুম দেওয়া হবে আর খিদের চোটে সেই কাঁটাওয়ালা জাক্কুমও গিলে ফেলবে তারা। ঠিক স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অবস্থাও তেমনটা হয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করছে, সাথে ছিলাম আমি আর আমার বস মাফিয়া জামশেদ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে অন্যান্য মন্ত্রী-এমপিরা আমাদের কথাতেই উঠতো আর বসতো। কারণ তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছিলো। বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করে সেখানে সবকিছুই করে রেখেছিলো। বাংলাদেশে যতো রাজনৈতিক খুন খারাবি, গুম হতো সব আমাদের নির্দেশেই হতো। বাংলাদেশের সমগ্র বাজার নিয়ন্ত্রণ করতো আমাদের বাহিনীরা। ব্যাংকগুলো থেকে কোটি কোটি মুদ্রা বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে। যদিও কয়েকবার সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে পালাবদল হয়েছে, তবে যারা লংকায় যায় তারাই রাবন হয়ে ফিরে আসে। তোমরা ফকির আছো, ফকিরই থাকবা। তবে যদি আমাদের দলে চলে আসো তোমাদেরকে আস্ত একটা দ্বীপ দিয়ে দেওয়া হবে। দ্বীপটার নাম মরিশাস। যেখানে মাফিয়া সম্রাট জামশেদ আছেন। সুন্দর একটা দ্বীপ, সেখানে বসেই দেশের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তোমরা যদি আমার কথায় রাজি হও তাহলে যা খুশি তা-ই করতে পারবে। ভেবে দেখো কী করবে?’

তারপর হঠাৎই স্ক্রিন ধূসর হতে হতে কালো হয়ে গেলো। মিলিয়ে গেলো ইমতিয়াজ।

ওরা থ বনে গেলো ইমতিয়াজের কথায়। বাংলার মানুষ একটা গোলক ধাঁধায় পড়ে আছে। কেউ জানে না রাষ্ট্র কখন কোন্ পথে চলে। কোনটা সত্য, আর কোনটা মিথ্যা তা সাধারণ মানুষ সহজেই বুঝতে পারে না।

এভাবেই যুগের পর যুগ এদেশের মানুষ শোষিত, নির্যাতিত হচ্ছে মধুময় কথায়। কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না।

ইরফান ও তুষার সিদ্ধান্ত নিলো, এই ইরফান ও তার বস জামশেদকে ধরতেই হবে। এদের আখড়া সমূলে বিনাশ করতে হবে, যদি জীবনটাও চলে যায়। হ্যাঁ, এটা দেশের স্বার্থেই করতে হবে। হয়তো এই পথে মৃত্যুর হাতছানি আছে, তবে দেশকে এসব চক্রান্তকারী, শোষক, লুটেরাদের হাত থেকে বাঁচিয়ে যেতেই হবে। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়