প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৪:২১
প্রণোদনা ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ না পাওয়ার অভিযোগ কৃষকের
কৃষকের অনাগ্রহে কমছে পাটের আবাদ

পলিথিনের বিকল্প হিসেবে সরকার যখন পাট দিয়ে তৈরি ব্যাগ বাজারে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন, কৃষকরা তখন এ সংবাদে উৎসাহিত হয়ে পুরোনো সুদিন ফিরে পাওয়ার আশায় পাটের আবাদ বাড়াবেন—এটাই সকলের প্রত্যাশা। কিন্তু ফরিদগঞ্জে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। কৃষকরা পাটের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। যদিও উপজেলা কৃষি বিভাগের মতে, বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছর পাটের আবাদ বেড়েছে।
|আরো খবর
জানা গেছে, একসময় ব্যাপকহারে ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাটের চাষ হতো ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিশাল অংশ জুড়ে। নদী-খাল ও পুকুর-ডোবায় সারিবদ্ধভাবে নারী-পুরুষ ও শিশুরা পাটের আঁশ ছাড়াতেন। পাটের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়তো আশপাশে। এ দৃশ্য এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। দিন যত যাচ্ছে, পাটের আবাদ ততই কমছে। নানা প্রতিবন্ধকতায় কৃষকের আগ্রহ ক্রমেই কমছে এ ফসলের প্রতি।
স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, পাট চাষে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়া, সার, বীজ ও প্রণোদনা এবং কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ না পাওয়ায় তারা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। কিন্তু কৃষি অফিসের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ফরিদগঞ্জ উপজেলায় পাট চাষ হয়েছিল ১৪৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর দুই হেক্টর বেড়ে আবাদ হয়েছে ১৪৭ হেক্টর।
বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, “গত বছর এক একর জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। এ বছর চাষ করেছি ৭০ শতক জমিতে। কৃষি প্রণোদনা ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ না পাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছি।”
একই ইউনিয়নের দক্ষিণ ইসলামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “গত বছর পাট পাতায় পোকার আক্রমণ হয়েছিল। অনেক পাট নষ্ট হয়ে যায়। কৃষি অফিসের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছি না। যদি কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের পাশে থাকেন, তাহলে পাটের চাষ বাড়বে।”
কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “গত ৩০ বছর ধরে পাট চাষ করছি। এবার মাত্র দুই একর জমিতে পাট করেছি। শ্রমিকের মজুরি এখন ৬০০ টাকা। খরচের তুলনায় বিক্রি কম। লাভ তো দূরের কথা, লোকসান গুণতে হচ্ছে।”
এছাড়া আরও অন্তত ১০ জন পাটচাষির সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের মতে, আগের চেয়ে পাটের চাষ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্লোল কিশোর সরকার বলেন, “গত বছর ১৪৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪৫ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ১৪৭ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৪৫ টন। পাটের উৎপাদন বাড়াতে চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগ্রহী করার চেষ্টা চলছে।”
ডিসিকে/এমজেডএইচ