প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫২
শাহরাস্তি উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা খেলাধুলার উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না : মো. মঈনুল ইসলাম কাজল

শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মঈনুল কাজল একজন ক্রীড়া লেখক হিসেবে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রমে গতিশীলতা নেই বলে তিনি বিব্রত। সাংবাদিক হলেও তিনি একজন ক্রীড়াঅন্তঃপ্রাণ। উপজেলায় ব্যক্তি উদ্যোগ ও সাংগঠনিক পর্যায়ের ক্রীড়া কার্যক্রমকে তিনি তাঁর কলমের খোঁচায় সবসময় তুলে ধরেন। তিনি নানা বিষয়ে কথা বলেছেন ‘ক্রীড়াকণ্ঠে’র সাথে। প্রশ্ন ও উত্তর আকারে হুবহু তা নিচে তুলে ধরা হলো--
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে পরিচয় না দিলেও আপনি একজন খেলাপাগল মানুষ। কারণ কী?
মো. মঈনুল ইসলাম কাজল : একটা সময় ছিলো, খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম, খেলার মাঠেই পড়ে থাকতাম। লেখাপড়ার ফাঁকে সুযোগ পেলেই কখনো ব্যাট হাতে, কখনো ফুটবল অথবা ব্যাডমিন্টন, পাশাপাশি শীত মৌসুমে ভলিবল ছিলো সবসময়ের সঙ্গী। বয়স বাড়ার সাথে সাথে যদিও খেলাধুলা আগের মতো করতে পারছি না, তারপরও মাঠের খেলা দেখলে লোভ সামলাতে পারি না। তবে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ও সংগঠনকে উৎসাহিত করে যাচ্ছি। আমি একজন খেলাপাগল লোক, কিন্তু পরিচয় দেয়ার মতো তেমন কোনো অবদান রাখতে পারিনি বলে এই পরিচয়টা আমি দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করিনি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি আউটডোর গেমস্ (ফুটবল, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল) কোনটি খেলেছেন? ইনডোর গেমস (কেরাম, দাবা, কার্ড) খেলেন কি? ইনডোর গেমস্ কি মানুষের শারীরিক না মানসিক ফিটনেস--কোনটিতে কাজ করে?
মো. মঈনুল ইসলাম কাজল : আমাদের সমাজে হ্যান্ডবলের তেমন পরিচিতি নেই। তবে ফুটবল, ক্রিকেট ও ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে উপজেলাভিত্তিক একটি পরিচিতি ছিলো। পাশাপাশি ব্যাডমিন্টন খেলাটি আমি ভালো খেলতাম। কেরাম ও কার্ডও খেলেছি। তবে দাবা খেলা নিয়ে আমার এলার্জি রয়েছে, যেখানে অনেক সময় দিতে হয়, এক একটি চাল দিতে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। তাই এই খেলাটি খুব কমই খেলেছি। আসলে ইনডোর ও আউটডোর সকল পর্যায়ের খেলাধুলা মানুষের শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস তৈরি করে। সবসময় খেলাধুলার সাথে যুক্ত থাকলে মানুষ বিকারগ্রস্ত হবে না। দেহ-মনের প্রশান্তির জন্যে খেলাধুলার বিকল্প নেই। আমি মনে করি, ফুটবল সবাই খেলে, কিন্তু মেসি রোনালদো কয়জন হতে পারে? এখানে শুধু পায়ের কারুকাজ নয়, বুদ্ধির জোর সবচেয়ে বেশি। শক্তি দিয়ে সবকিছু হয় না, চিন্তাশক্তি ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই জরুরি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনি একজন ক্রীড়া লেখক। সে সুবাদে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির সদস্য। আপনি কি মনে করেন ক্রীড়া সংস্থা উপজেলার ক্রীড়া উন্নয়নে কোনো কাজ করছে?
মো. মঈনুল ইসলাম কাজল : সত্যি বলতে কি, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা খেলাধুলার উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। শুধু সরকারিভাবে পাওয়া কিছু ক্রীড়াসামগ্রী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিলি করা ছাড়া আর কোনো কাজ আমি দেখিনি। দুঃখের কথা হলো, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি গঠন হওয়ার পর এখনো পর্যন্ত একটি সভা করা হয়নি। কারা কমিটি করেছে, কীভাবে হলো, আমাদের কাজ কী--তা-ও আমার জানা নেই। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও আমি সভা আহ্বানের উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের দেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করা না হলে কোনো ক্ষেত্রেই সফলতা আসবে বলে মনে করি না। আমি ক্রীড়া সংস্থার সদস্য হয়েও এ পর্যন্ত কোনো সংবাদ করতে পারিনি। যা করেছি, সেগুলো ব্যক্তি পর্যায়ের।
ক্রীড়াকণ্ঠ : উপজেলার ক্রীড়ার উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করেন?
মো. মঈনুল ইসলাম কাজল : ক্রীড়ার উন্নয়নে ক্রীড়া সংস্থার কমিটিতে সরকারি চাকুরিজীবী সদস্য না রেখে সমাজের ক্রীড়ামোদী লোকদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলো কমিটির তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত। কমিটির নজরদারি থাকলে ভালো খেলোয়াড় বাছাই করা সম্ভব। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে অন্তত একদিন হলেও খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন বাধ্যতামূলক করা জরুরি। এছাড়া যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ রয়েছে, সেগুলো খেলার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রীড়াসামগ্রী বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে এবং ক্রীড়া সামগ্রীগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করতে হবে। ক্রীড়া সংগঠনগুলোকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হব। যাতে করে খেলোয়াড় বাছাই করে উপজেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। সামাজিক অবক্ষয় ও নতুন প্রজন্মকে মাদকের নেশা থেকে মুক্ত করতে খেলাধুলায় আকৃষ্ট করতে হবে। তাই সরকারি উদ্যোগে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে খেলোয়াড় বাছাই করতে হবে। শহরের মতো গ্রামেও ভালো খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই জাতীয় পর্যায়ে খেলার মনোভাব তৈরি হবে। অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের ক্রীড়ামুখি হতে উৎসাহিত করবেন।
ক্রীড়াকণ্ঠ : শাহরাস্তিতে ব্যক্তি উদ্যোগের ক্রীড়া কর্মকাণ্ডকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
মো. মঈনুল ইসলাম কাজল : যে কোনো বিষয়ে ব্যক্তি উদ্যোগ না থাকলে তা সফলভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ব্যক্তি বিশেষ আছে বলেই আমাদের ক্রীড়াঙ্গনে এখনো আশার আলো দেখছি। আমাদের সমাজে কিছু খেলাপাগল লোক রয়েছে, যারা নিজের অর্থ, শ্রম, মেধা ও সময় ব্যয় করে ক্রীড়াঙ্গন উজ্জীবিত রাখছেন। ব্যক্তি উদ্যোগটি না থাকলে এতোদিনে মাঠগুলো পরিত্যক্ত হয়ে যেতো। আমি মনে করি, সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে উপজেলাভিত্তিক ক্রীড়া সংস্থায় তাঁদেরকে সম্পৃক্ত করা উচিত এবং পরিকল্পিতভাবে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তাঁদেরকে দায়িত্বে নিয়োজিত করা হলে ক্রীড়াঙ্গনে সুবাতাস বইতে শুরু করবে। তবে মনে রাখতে হবে, ক্রীড়াঙ্গনে যাতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা না হয়।
ক্রীড়াকণ্ঠ : উপরোল্লিখিত প্রশ্নসমূহের বাইরে আপনার অতিরিক্ত কোনো কথা থাকলে বলতে পারেন।
মো. মঈনুল ইসলাম কাজল : আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। ক্রীড়াঙ্গন উজ্জীবিত করতে অর্থ কোনো সমস্যা নয়। আমাদের প্রধান সমস্যা হলো সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব। যাকেই দায়িত্ব দেয়া হয় তিনিই হয় রাজনৈতিক অথবা আত্মীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেন। অনিয়ম-দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে ক্রীড়ামোদী ও খেলার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের প্রাধান্য দিতে হবে। খেলাধুলার মানোন্নয়নে সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হলে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপমুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। আমাদের প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছে, কিন্তু আমাদের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে তাদেরকে কাজে লাগাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। তাই সর্বপ্রথম আমাদেরকে ক্রীড়া সংস্থার সংস্কার করতে হবে। দায়সারা কমিটি বিলুপ্ত করে ক্রীড়ামোদী ও ক্রীড়া সংগঠকদের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে হবে এবং কমিটির সবাইকে জবাবদিহিতার মধ্যে রাখতে হবে।