প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪২
ইতু চক্রবর্তীর মৃত্যুতে শোক

স্বাধীনতোত্তর দুটি সংগীত প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতামূলকভাবে চঁাদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনকে সরব রাখতো। একটি সংগীত নিকেতন, অন্যটি ললিতকলা। সংগীত নিকেতনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এখনও দায়িত্বপালন করছেন অশীতিপর প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জীবন কানাই চক্রবর্তী। তঁার সাথে সুষ্ঠুভাবে ও দক্ষতার সাথে অধ্যক্ষের দায়িত্বপালন করছিলেন বিশিষ্ট ব্যাংকার, সংগীতজ্ঞ স্বপন সেনগুপ্ত। সম্প্রতি তিনি দীর্ঘ রোগভোগ ছাড়াই আকস্মিক অসুস্থতায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তঁার মৃত্যুশোক ভুলতে না ভুলতেই ললিতকলার সংগীত শিক্ষিকা, প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী, জেলা শিল্পকলা একাডেমির গুণীজন সম্মাননাপ্রাপ্ত বহুল পরিচিত মুখ ইতু চক্রবর্তী মৃত্যুবরণ করলেন। ললিতকলার প্রাণ বিশিষ্ট গীতিকার মুখলেসুর রহমান মুকুল ও অধ্যক্ষ শীতল ঘোষালের মৃত্যুর পর যিনি ললিকলার৷ প্রখর স্মৃতি হিসেবে বেঁচেছিলেন, তিনিই ছিলেন ইতু চক্রবর্তী। সেই তিনিই রোববার (২৮ ডিসেম্বর ২০২৫) দিবাগত রাত ১২টার পর কিডনী ও ফুসফুসজনিত জটিলতায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চিরকুমারী ছিলেন বলে এবং সহোদর কেউ কাছে না থাকায় তিনি নিঃসঙ্গতার মাঝেই চোখ বুঁজলেন। তবে শুভাকাঙ্ক্ষীদের কম-বেশি সহযোগিতা পেয়েছিলেন।
|আরো খবর
জীবন সায়াহ্নে ইতু চক্রবর্তী চঁাদপুর শহরের পৈত্রিক ভিটায় বসবাসের সুযোগ পান নি। কেন পাননি সে কাহিনি অনেক বেদনার। দুর্ভাগ্য যে তঁাকে কতোটা আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছিলো, সেটা গল্প-উপন্যাসের উপজীব্যের মতোই। তিনি নৃত্য প্রশিক্ষক সোমা দত্তের দেখভালে জীবনের শেষদিনগুলো কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। সান্ত্বনা এখানেই, তিনি শয্যাশায়ী হয়ে কাউকে দিনের পর দিন কষ্ট দেয়ার আগেই মায়াময় পৃথিবী ছাড়েন। আর চঁাদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনের স্বতঃস্ফূর্ত শেষ শ্রদ্ধা পেয়েই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যায় তঁার মরদেহ।
চঁাদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গন এখন অনেক সমৃদ্ধ। একসময় যখন সমৃদ্ধ ছিলো না, তখন এখনকার সমৃদ্ধির ভিত নির্মাণে স্বল্পসংখ্যক যে ক’জন নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন, তঁাদেরই একজন ছিলেন ইতু চক্রবর্তী। তিনি সংগীত চর্চার পাশাপাশি শিক্ষকতা করতেন। চঁাদপুর শহরের গণি হাই স্কুলে তিনি নবারুণ শিশু বিদ্যালয়ে অধ্যক্ষের দায়িত্বপালন করতেন। এখানেও দুর্ভাগ্য তঁার পিছু ছাড়ে নি। বিদ্যালয়টি অনিবার্য কারণে তিনি শেষ পর্যন্ত চালাতে পারেন নি। চঁাদপুরের ইতিহাসে হাতেগণা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের অন্যতম নগেশ চক্রবর্তীর কন্যা হিসেবে ইতু চক্রবর্তী স্বীয় কর্মকাণ্ডে রক্তের যে ধারা বহমান রেখেছিলেন, তঁার মৃত্যুতে সে ধারাও থেমে গেলো। আমরা ইতু চক্রবর্তীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।








