বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৭

লাগেজ কাটা লোকের রুচি আছে!

অনলাইন ডেস্ক
লাগেজ কাটা লোকের রুচি আছে!

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের লাগেজ কেটে মালামাল হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে দেখেছি। সেদিন দেখলাম এক প্রবাসী গড়িয়ে গড়িয়ে এয়ারপোটে কান্না করছে। রেমিট্যান্স যোদ্ধার কান্না, বিমানবন্দরে লাগেজ কাটা--এ কেমন জাতীয় সংস্কৃতি? বিমানবন্দরে প্রবাসীদের লাগেজ কাটার ঘটনা কোনো সুস্থ সমাজের বা সভ্য দেশের সংস্কৃতি হতে পারে না। এটি একটি অসুস্থ মানসিকতা, যা আমাদের জাতীয় অগ্রগতি ও ভাবমূর্তির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এই ‘লাগেজ কাটা সংস্কৃতি’কে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। প্রবাসীরা যেন বিমানবন্দরে নেমে স্বস্তি ও সম্মান অনুভব করতে পারেন, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রতিটি নাগরিকের এবং রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব। কারণ, প্রবাসীদের কান্না বা হতাশা আমাদের অর্থনীতির জন্যে শুভকর নয়, বরং এই অপমান পুরো জাতির জন্যে এক গভীর লজ্জার দাগ। সময় এসেছে, নিজেদের হীন স্বার্থ ভুলে দেশের সেবায় নিবেদিত এই মানুষগুলোর প্রতি ন্যায় ও সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে একটি সভ্য, দায়িত্বশীল ও কৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করার। বিমানবন্দরে প্রবাসীদের লাগেজ কাটা বা চুরি করার ঘটনাটি কেবল একটি আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নয়, বরং এটি আমাদের সামাজিক ও নৈতিক কাঠামোর গুরুতর দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। প্রবাসীরা, যারা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, তাদের প্রতি এমন অকৃতজ্ঞতা ও অমানবিক আচরণ একটি জাতি হিসেবে আমাদের সামগ্রিক নৈতিকতার অবনতিকে নির্দেশ করে।

এই চোর চক্রটি প্রবাসী ছাড়া ও অন্যান্য যাত্রীর মালামাল চুরি করে। নিউজে দেখলাম সাফ জয়ী ফুটবল দলের সদস্যদের কয়েকজনের টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে। এমন হাজারো প্রতিবেদন আছে, আমি রাত ও দিনভবে লিখলেও শেষ হবে না।

এবার আমাদের কথা লিখি। ১ ডিসেম্বর ২০২৫ ওয়াশিংটন ডালাস থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পেঁাছি। যথানিয়মে কাস্টম শেষ করে লাগেজের জন্যে অপেক্ষা করি। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম লাগেজের জন্যে, কিন্তু লাগেজ আসে না। ডিউটি অফিসারকে জানানোর পর তিনি বললেন, আপনি আমেরিকা থেকে আসছেন, সেজন্যে আপনার লাগেজগুলো নিচে পড়ে গেছে। একটু অপেক্ষা করুন, চলে আসবে। আমরা তিন জন লাগেজ ৬টি। প্রায় ৫৫ মিনিট পর লাগেজ আসলো। আমরা তো লাগেজ পেয়ে খুশি, কোনো কাটাছেঁড়া নেই। লাগেজগুলো নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে দুপুরের খাবার খেয়ে পরিবারের সবার সাথে গল্প করতে করতে রাত হয়ে গেলো। এবার লাগেজ খোলার সময়। আমার সোনা বউ লাগেজ খুলতে গিয়ে দেখে, ২টা লাগেজের তালা ভেঙ্গে তালাটা ঝুলিয়ে রেখেছে সুন্দর মতো। লাগেজ খুলে দেখে, ভেতর থেকে দামী পারফিউম , শার্ট ও গেঞ্জি এবং একটি স্কুল ব্যাগ নিয়ে গেছে। লাগেজ কাটা চক্রের লোকদের রুচি আছে বলতে হয়। দামী পারফিউম, শার্ট ও গেঞ্জির চেয়েও দামী আন্ডারওয়ার ছিলো, কিন্তু নেয়নি। ওরা বুঝতে পারেনি এগুলো এতো দামী।

সবাই রাজনৈতিক দলগুলোকেই দোষ দেয়। এখন তো তারা নেই। এখন কেন হচ্ছে? আমার মনে হচ্ছে, এখানে অনেক বড়ো একটি চক্র কাজ করে। আমার প্রশ্ন, বিমানবন্দরে কঠোর সিসিটিভির ব্যবস্থা রয়েছে এবং সেখানে সিভিল এভিয়েশন, বিমান ও বিভিন্ন সংস্থার লোকজন ডিউটি করছেন। তাদের অন্যতম কাজ সম্পদের নিরাপত্তা, যাত্রীর জান মালের নিরাপত্তায় কাজ করা। এই তাদের নিরাপত্তার নমুনা? তাদের নাকের ডগায় লাগেজ কাটা, লাগেজ হারানো বা মালামাল খোয়া যায় কীভাবে? আমরা চাই এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পেছনে থাকা চক্রের উৎখাত এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

ড. আব্দুস সাত্তার : লেখক ও সাংবাদিক, ওয়াশিংটন ডি সি, ১২/২৮/২৫।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়