প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৫
গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে ঠিকাদারের নির্মমতা!

‘হাজীগঞ্জে বসতঘরের বেড়া ঘেঁষে সড়ক নির্মাণ! এটি গতকালকের চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণমূলক একটি সংবাদ শিরোনাম। যাতে কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, দু ভাইয়ের একটিমাত্র পৈত্রিক বসতঘর। ঘরে বসবাস করেন তাদের বয়স্ক বিধবা মা। সম্বল বলতে পরিবারটির বসতঘরই ভরসা। সেই বসতঘরের বেড়া ঘেঁষে পিড়া (ঘরের কাঁধ) কেটে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) বিভাগ, হাজীগঞ্জ নির্মাণ করছে পাকা সড়ক। কাজ শুরুর দিকে বিধবা এ নারী বাধা দিলে সরকার বাদী মামলার ভয় দেখিয়ে নারীকে থামিয়ে দেয়া হয়। বসতঘরের বিপরীত পাশে পুকুর রয়েছে, আর তাতে খরচ বেড়ে যাবে বলে বসতঘরের ভেতরে সড়ক তৈরি করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটি হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের রাধাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব দক্ষিণ পাশে পাটোয়ারী বাড়ির। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাধাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বপাশে পাটোয়ারী বাড়ি। বিদ্যালয় ও পাটোয়ারী বাড়ির পেছন দিয়ে নতুন সড়ক নির্মাণ করছে এলজিইডি হাজীগঞ্জ। এ সড়কে ইতোমধ্যে কার্পেটিং ছাড়া সব কাজ শেষ হয়েছে বলা চলে। বহুদিন ধরে পড়ে থাকা সড়কের কাজটি করতে গিয়ে পাটোয়ারী বাড়ির মৃত আব্দুর রশিদ পাটোয়ারীর ৫০ বছরের পুরানো বসতঘরের টিনের বেড়া ঘেঁষে ও পিড়া কেটে রাস্তার বক্স কাটিং, বালি খোয়া দিয়ে বক্স ভরাট করা হয়েছে। এজিনের কাজও কিছুটা হয়ে গেছে। আব্দুর রশিদের বসতঘর ও সড়কের দক্ষিণ পাশে পুকুর। পুকুরের পাড় ভরাট করে রাস্তার কাজ করতে গেলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের খরচ বেড়ে যাবে বলে আ. রশিদ পাটোয়ারীর ঘরের ভেতরে রাস্তা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে রাজমিস্ত্রী আল আমিন জানান, রাধাসার মৌজাতে ৬৩৬নং দাগে এ সম্পত্তিতে আমার বাবার রেখে যাওয়া ঘরটি ছাড়া আমাদের দু ভাইয়ের আর কোনো সম্পত্তি নেই। ঘরের ভেতরে প্রায় দেড় হাত পিড়া কেটে যে অংশে রাস্তা করা হচ্ছে সেটি আমাদের বসতঘরের অংশ। কাজ করার সময় আমার মা কাজে বাধা দিতে গেলে মাকে সরকার বাদী মামলার ভয় দেখানোর কারণে মা চুপ করে থাকেন। পাটোয়ারী বাড়ির মৃত আবুল কালামের ছেলে মাসুদ পাটোয়ারী জানান, নিজেদের বসতঘরের ভেতর দিয়ে এভাবে একটি রাস্তা নির্মাণ কীভাবে সম্ভব! পরিবারটির এ ঘরভিটি ছাড়া আর কোনো সম্পত্তি নেই। তাদের এই সম্পত্তির দিকে নজর না দিয়ে বিপরীত পাশে পুকুরের পাড়ে পাইলিং করে কাজ করতে পারতো। এ বিষয়ে বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিলন বলেন, ঘরটির বিপরীত পাশে থাকা পুকুরের পাড় বেঁধে কাজ করলে পরিবারটির এতো বড়ো ক্ষতি হতো না। আমরা চাই নিঃস্ব পরিবারটির বসতঘরটি রক্ষা করে পুকুর পাড়ে কাজ করে রাস্তার কাজ শেষ করা হোক। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি)-এর সাথে মুঠোফোনে একাধিক সময়ে ও একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবনে আল জায়েদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, বিষয়টি প্রকৌশলী থেকে জেনে জানাবো। এ সংবাদটি পড়ে প্রত্যন্ত গ্রামে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টির আড়ালে একজন ঠিকাদার নিতান্তই তার স্বার্থে কতোটা নির্মম হতে পারেন তার উৎকট নমুনা ফুটে উঠেছে। এখন ক্ষমতায় কিন্তু ফ্যাসিবাদী কেউ নেই। তাহলে এই ঠিকাদার কিসের জোরে একজন বিধবা বয়স্ক নারীর বসবাসের স্থল ঘর ভেঙ্গে সড়ক নির্মাণ করলো! আমরা বিশ্বাস করি, এলজিইডির চাঁদপুর-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ও হাজীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।








