সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৮

এমন প্রতিবাদ বিতর্কিত, তবে মবের চেয়ে ভালো-

অনলাইন ডেস্ক
এমন প্রতিবাদ বিতর্কিত, তবে মবের চেয়ে ভালো-

একসময় প্রতিবাদ বলতে শ্লোগানমুখর মিছিল, জোরালো কণ্ঠের বক্তৃতায় বিক্ষোভ সমাবেশ, বিবৃতি, স্মারকলিপি, হরতাল, অবরোধ, ভাংচুর ইত্যাদি বোঝাতো। দীর্ঘকাল এ সংস্কৃতি দেখা গেছে। কালক্রমে প্রতিবাদের এমন প্রচলিত রীতিতে পরিবর্তন এসেছে। যেমন--হাতে হাত ধরে মানববন্ধন, জ্বালাময়ী ভাষণ, হাতে হাত না ধরেই গায়ের সাথে গা লাগিয়ে মানববন্ধন, স্বাভাবিক কণ্ঠে ভাষণ, প্লেকার্ড, ফেস্টুনসহ শ্লোগান সম্বলিত শোভাযাত্রা (র‌্যালি), আবার শ্লোগানবিহীন শোভাযাত্রা, গণমাধ্যমে প্রচারের স্বার্থে ফটোসেশনের জন্যে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও কয়েক ফুট হেঁটে র‌্যালি হচ্ছে। এটাও গতানুগতিকতার বা পুরানো ধাঁচের হয়ে গেছে। অতি সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে দেখা গেছে, সড়কের দুরবস্থায় কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ, আশ্বাস না দিয়ে কেবল নীরবতা অবলম্বন করায় সড়ক ও জনপথ (সওজ)-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর জানাজা পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেটা মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়াকে সরগরম করেছে। চাঁদপুর জেলার হাইমচরে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পল্লী বিদ্যুতের এজিএমের মৃত্যু হয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়া তথা ফেসবুকে সরব হয়েছে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। যেটা নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে সংবাদ। ‘বিদ্যুৎ ভোগান্তিতে এজিএমের মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ!’ শিরোনামের সংবাদটিতে হাইমচর প্রতিনিধি লিখেছেন, হঠাৎ করেই পল্লী বিদ্যুতের এজিএমের মৃত্যুর সংবাদ ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এজিএম’র রুহের মাগফেরাত কামনায় একের পর এক পোস্ট ভাইরাল নেট জগতে। কতোটা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হলে একজন জীবিত মানুষকে নিয়ে মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে উপহাস করা হয়! এমনই ঘটনা ঘটে চলছে হাইমচর উপজেলায়। পূর্ব ঘোষণা ব্যতীত ভোর থেকে উপজেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় ভোগান্তির শিকার হয় উপজেলাবাসী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ বিদ্যুৎ অফিস অভিমুখে লং মার্চের ঘোষণা দেয়ার কথাও বলেছেন। একজন লিখেছেন, অযোগ্য, মূর্খ এজিএম আসার পর থেকে হাইমচরে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানে গ্রাহকরা এজিএমের পক্ষ থেকে চামারের ন্যায় ব্যবহারের সম্মুখীন হচ্ছেন। একজন লিখেছেন, বিদ্যুৎ নাই কেন? কখন আসতে পারে? জানতে চাইলে তিনি আমাকে তার চেয়ারে বসে জানতে বলেন। একজন লিখেছেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে কষ্টের চাইতে এই লোকের ব্যবহার আরও বেশি খারাপ।

বিদ্যুৎ গ্রাহকদের দাবি, এজিএম তরিকুল আলমকে ফেরত নিয়ে পূর্বের এজিএম হাফিজুর রহমানকে হাইমচরে চান উপজেলাবাসী। আগের এজিএমের মুখের হাসিমাখা কথায় বিদ্যুতের ভোগান্তি কেটে যেতো। বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানান, বরাবরই মানুষের মৃত্যুর সংবাদে শোকের ছায়া থাকলেও তার এ সংবাদে সাধারণ্যে ঘটে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। বিদ্যুৎ কর্মকর্তার মৃত্যুর সংবাদ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মনে এতোটাই উপহাসের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, জনগণ জানে তার মৃত্যু মানে বিদ্যুৎ নেই। মানুষ মারা গেলে ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়াটা স্বাভাবিক। আর হাইমচরে বিদ্যুৎ চলে যেতে দেখলে মানুষ তেমনটাই পড়েন। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ক্ষোভের কারণ হিসেবে জানা যায়, ঘন ঘন লোডশেডিং, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল, এজিএমের চামারের মতো ব্যবহার।

বিদ্যুৎ বিলে প্রি-পেইড সিস্টেম চালু হওয়ায় প্রায় সকল জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলা শহরের গ্রাহকদের ক্ষোভ নেই বললেই চলে। তবে লোডশেডিং নিয়ে কম-বেশি ক্ষোভ আছেই। যেটা সহনীয় মাত্রায়। তবে হাইমচরের মতো নদী ভাঙ্গন-বিপন্ন উপজেলায় ঘন ঘন লোডশেডিং ও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। সেটা ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা ও আচরণগত মিষ্টতা দিয়ে মোকাবেলা করার মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলে দুর্ভোগের শিকার গ্রাহকরা ধৈর্য ধরে, কষ্ট মেনে নেয়। কিন্তু হাইমচরে সেটা না থাকায় পল্লী বিদ্যুতের এজিএমের মৃত্যুর গুজব ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, যেটা তার কর্মকুশলতার প্রতি উপহাস। এমন উপহাস নিঃসন্দেহে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য। তারপরও বলছি, এমন উপহাসের হাত থেকে এজিএমকে পরিত্রাণ দিতে নিশ্চয়ই পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের বিষয়টি ভাববে। তবে আমরা এমন উপহাসকে হালের মবের চেয়ে ভালো বলছি, যেটা খুব দোষের হবে বলে মনে করছি না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়