বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩২

মানিক দাস মঞ্চ আর সংবাদপত্রে সমানতালের এক যোদ্ধা

কবির হোসেন মিজি
মানিক দাস মঞ্চ আর সংবাদপত্রে সমানতালের এক যোদ্ধা

চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনে নাটক বহুদিন ধরেই এক উজ্জ্বল মাধ্যম। মঞ্চশিল্পকে ঘিরে বেড়ে উঠেছে অনেক স্বপ্ন, সৃষ্টি হয়েছে বহু সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিল্পীর। তাঁদেরই একজন মানিক দাস, যিনি নাটকের মঞ্চে দীর্ঘদিন ধরে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শককে মুগ্ধ করে আসছেন। পাশাপাশি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও তিনি সমানভাবে সক্রিয়, স্থানীয় পত্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। অভিনয় ও সংবাদপত্র—দুই অঙ্গনেই তিনি নিজের পরিচয় তৈরি করেছেন একাগ্রতা, পরিশ্রম ও নিবেদনের মাধ্যমে।

মানিক দাসের নাটকের সঙ্গে যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৬-৮৭ সালে শিশু-কিশোর নাট্য উৎসবের মাধ্যমে। শিশু সংগঠন খেলাঘর আসরের হয়ে তিনি অভিনয় করেন ‘ভগবানের সাথে কিছুক্ষণ’ নাটকে। তখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ালেখা করেন। নাটকটিতে এক বাদাম বিক্রেতার চরিত্রে অভিনয় করে তিনি প্রথম দর্শকের প্রশংসা কুড়ান। সেটিই হয়ে উঠে তাঁর জীবনের নাট্যাভিনয়ের প্রথম অনুপ্রেরণা।

প্রয়াত সাংবাদিক, নাট্যাভিনেতা ও নাট্য সংগঠক অজিত কুমার মুকুলের ছোট ভাই মানিক দাস ১৯৭৫ সালে চাঁদপুর শহরের মেটারর্নিটি রোডে (বর্তমান প্রেসক্লাব সড়ক) মাতৃমঙ্গলে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব কেটেছে সংস্কৃতিমনস্ক পরিবারে। প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হয় কবি নজরুল সড়কের ১২৫ নং কেজি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে তিনি পড়াশোনা করেন চাঁদপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী, শতবর্ষের বেশি পুরানো প্রতিষ্ঠান গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে।

১৯৯১ সালে বড়ো ভাই অজিত কুমার মুকুলের মৃত্যুর পর তিনি সম্পৃক্ত হন তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন অনন্যা নাট্য গোষ্ঠীর সঙ্গে। ১৯৯৩ সালে এ সংগঠনের হয়ে তিনি প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন মমতাজ উদ্দীন আহমেদের নাট্যরূপে কাজী নজরুল ইসলামের ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘রাক্ষুসী’ নাটকে। এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর নিয়মিত মঞ্চাভিনয়ের যাত্রা।

পরবর্তীতে তিনি অভিনয় করেছেন চাঁদপুরের বিভিন্ন মঞ্চ ছাড়াও ঢাকা মহিলা সমিতি মঞ্চ, চট্টগ্রাম দামপাড়া শিল্পকলা একাডেমি, কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমি, কুমিল্লা ঈশ্বর পাঠশালা, ফেনী ও নোয়াখালীসহ দেশের নানা অঞ্চলের মঞ্চে।

এ পর্যন্ত মানিক দাস প্রায় ১৫টি নাটকের আড়াই শতাধিক প্রদর্শনীতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো : তোমরাই, ইঙ্গিত, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, দেশের মানুষ, রাক্ষুসী, একাত্তরের পালা, রূপভান, রাজাকারের ফাঁসি, বালক স্বরূপানন্দ, ভাঙ্গন, ফুল পরীর দেশে, জীবন যেখানে যেমন, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, সুবচন নির্বাসনে। তবে এসব নাটকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিনয় করেছেন ‘তোমরাই’ ও ‘ইঙ্গিত’ নাটকে। এ দুটি নাটকে তাঁর অভিনয় বারবার প্রশংসিত হয়েছে দর্শক ও নাট্যসঙ্গীদের কাছে।

শুধু নাটকেই নয়, অভিনয়শিল্পীর পাশাপাশি মানিক দাস একজন নিবেদিতপ্রাণ সংবাদকর্মী। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তিনি চাঁদপুরের জনপ্রিয় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠসহ পর্যায়ক্রমে চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করছেন। সমাজ, সংস্কৃতি, জনজীবন ও স্থানীয় সমস্যা-সংকট নিয়ে তাঁর লেখাগুলো পাঠকের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে। সাংবাদিকতার ভেতর দিয়ে তিনি যেমন মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন, তেমনি সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রাণবন্ত খবরও পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন।

একদিকে মঞ্চনাটক, অন্যদিকে সংবাদপত্র, দুই অঙ্গনেই মানিক দাসের সক্রিয়তা তাঁকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। নাটকের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা, আর সংবাদকর্মী হিসেবে তাঁর আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনের এক বহুমুখী ব্যক্তিত্ব।

আজ তিনি একজন মধ্যবয়সী অভিজ্ঞ শিল্পী ও সংবাদকর্মী। নাটক তাঁর কাছে কেবল বিনোদন নয়, বরং সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। আর সাংবাদিকতা তাঁর কাছে মানুষের কথা বলার সেতুবন্ধন। অভিনয় ও সংবাদপত্র, এই দুই অঙ্গনে নিরলস অবদানের মধ্য দিয়ে মানিক দাস হয়ে উঠেছেন চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনের এক অনন্য নাম।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়