বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩১

জেলা শিল্পকলার নেপথ্যের মানুষ সাউন্ড অপারেটর মো. মামুন হোসেন

সংস্কৃতি অঙ্গন প্রতিবেদক
জেলা শিল্পকলার নেপথ্যের মানুষ সাউন্ড অপারেটর মো. মামুন হোসেন

চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনের আলোচিত আয়োজনগুলোতে আলোর ঝলকানি আর সুরের মূর্ছনার পেছনে যে মানুষটির পরিশ্রম ও দক্ষতার ছাপ লুকিয়ে আছে, তিনি হলেন মো. মামুন হোসেন। চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাউন্ড অপারেটর হিসেবে গত ১১ বছর ধরে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। একের পর এক বিভিন্ন সংগঠনের মঞ্চ নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি শুধু শব্দ প্রক্ষেপণ নয়, আলো, ছায়ার খেলায়ও মঞ্চকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন।

মামুন হোসেন এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি নাটকে সাউন্ড অপারেটিং করেছেন। নাটকের মঞ্চে সংলাপ, সঙ্গীত ও আবহ সঙ্গীত সঠিক সময়ে দর্শকের হৃদয়ে পৌঁছে দেওয়ার যে সূক্ষ্ম শিল্প, সেটিকে তিনি নিপুণভাবে আয়ত্ত করেছেন। শুধু তাই নয়, নাটকের মঞ্চ ব্যবস্থাপনা, সাজসজ্জা ও নির্মাণেও তিনি সহযোগিতা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে, যা তাকে সংস্কৃতি কর্মীদের কাছে আস্থার প্রতীক করে তুলেছে।

শুধু চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি নয়, চাঁদপুরের বাইরে কচুয়া উপজেলার বিজয় মেলাতেও সাউন্ড অপারেটর হিসেবে তার দক্ষতা প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়া লাকসাম ও বাবুরহাট সহ বিভিন্নস্থানেও তিনি এই লাইটিং ও সাউন্ড অপারেটর হিসেবে কাজ করেছেন। মঞ্চে যে কোনো আয়োজনকে সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে তিনি নিজেকে সর্বদা প্রস্তুত রেখেছেন।

নিজের কাজের মানোন্নয়নের জন্যেও মামুন হোসেন পিছপা হননি কখনো। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘শব্দ প্রক্ষেপণ যন্ত্রাদির নিরাপদ ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ’ কর্মশালায় অংশ নিয়ে তিনি সনদপত্র অর্জন করেন। এছাড়াও একই বিষয়ের ওপর আরো বেশ ক’টি কর্মশালায় অংশ নেন তিনি। এই প্রশিক্ষণ তার কর্মজীবনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে যদিও তার মূল পদ সাউন্ড অপারেটর, তবুও আলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে কেউ না থাকলে তিনিই এগিয়ে আসেন। তিনি দক্ষতার সঙ্গে লাইট অপারেটিং ও লাইটিং সহযোগিতার কাজও সামলে নেন সমান তালে। তার এ বহুমুখী দায়িত্ব পালনের মানসিকতা সংস্কৃতি অঙ্গনে তাকে আলাদা ভাবে সম্মান এনে দিয়েছে।

মঞ্চনাটক, নৃত্যানুষ্ঠান কিংবা সংগীতানুষ্ঠান--যে কোনো আয়োজনের সফলতার পেছনে দৃশ্যমান শিল্পীদের পাশাপাশি নেপথ্যের মানুষদের অবদানও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর সেসব নেপথ্যকর্মীর মধ্যে চাঁদপুরে অন্যতম নাম মো. মামুন হোসেন। নীরব কিন্তু নিবেদিতপ্রাণ এই মানুষটির হাতে মঞ্চের সুর ও আলো যেন নতুন প্রাণ খুঁজে পায়।

নিজের কাজ সম্পর্কে মো. মামুন হোসেন বলেন, আমি এই কাজকে শুধু চাকরি হিসেবে দেখি না, এটা আমার কাছে নেশার মতো। যখন দেখি মঞ্চে শিল্পীরা স্বাচ্ছন্দ্যে অভিনয় বা গান করছেন, আর দর্শকরা আনন্দ পাচ্ছেন, তখন মনে হয় আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। সাউন্ড আর লাইট হয়তো দর্শক সরাসরি খেয়াল করেন না, কিন্তু এগুলো ছাড়া কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পূর্ণতা পায় না। আমি চাই যতোদিন পারি এই কাজ করে যেতে।

চাঁদপুরের শিল্প-সংস্কৃতির পর্দার আড়ালে থেকে যারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে মো. মামুন হোসেন এক উজ্জ্বল নাম। তার মতো নিবেদিতপ্রাণ সংস্কৃতি কর্মীরাই আমাদের শিল্পকলা চর্চাকে টিকিয়ে রেখে সমৃদ্ধ করছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়