বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫০

আলঝাইমার্স মোকাবিলায় এনজিওর ভূমিকা

হাসান আলী
আলঝাইমার্স মোকাবিলায় এনজিওর ভূমিকা

আলঝাইমার্স হলো মস্তিষ্কজনিত একটি রোগ, যেখানে ধীরে ধীরে স্মৃতি, চিন্তাশক্তি ও দৈনন্দিন কাজকর্ম করার ক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। সাধারণত ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এটি ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ ধরণ।

মোকাবিলা মানে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে তাকে প্রতিহত বা সমাধানের প্রচেষ্টা। এনজিও হলো জনগণের কল্যাণে কাজ করে কিন্তু সরকারি ভাবে পরিচালিত হয় না।

ভূমিকা মানে পরিচয়, অংশগ্রহণ, দায়িত্ব বা অবদান। এনজিও গড়ে ওঠার প্রেক্ষাপট হলো, স্বাধীনতার পর দেশজুড়ে গৃহহীন ও অসহায় মানুষের সংখ্যা ছিলো বিপুল। তাদের পুনর্বাসন, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে দেশি বিদেশি অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এগিয়ে আসে। এনজিওগুলো তখন প্রধানত মানবিক সহায়তাকে কেন্দ্র করে কাজ শুরু করে। গড়ে উঠে বাংলাদেশি এনজিও ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রশিকা, আশা, গণসাহায্য সংস্থা সহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান।

গ্রামীণ বাংলাদেশে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী প্রায় সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলো। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানে বৈষম্য ছিলো প্রকট। এনজিওগুলো নারী শিক্ষা, টিকাদান কর্মসূচি, পরিবার পরিকল্পনা, ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান, সচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি ও সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। এনজিওরা এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় এক অনিবার্য সহায়ক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

আলঝাইমার্স নামক একটি রোগ দ্রুত গতিতে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে। অনিরাময়যোগ্য এই রোগটি শুধু পরিবারের পক্ষে মোকাবিলা করা খুবই কঠিন। সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া একার পক্ষে এই রোগ মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব। আমাদের দেশে এই রোগের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা একদম প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। রোগটির বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ অতি সামান্য। মানব জাতির দিকে ধেয়ে আসা স্মৃতি ক্ষয়জনিত রোগ আলঝাইমার্স সম্পর্কে আমাদের প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। এখন মোক্ষম সময় আলঝাইমার্স রোগ মোকাবিলায় এগিয়ে আসার। এনজিওরা এগিয়ে আসলে আলঝাইমার্স মোকাবিলা সহজ হয়ে যাবে।

এনজিওরা কী ভূমিকা পালন করতে পারে তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো--

১. সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে গ্রামে-শহরে সেমিনার, কর্মশালা, সমাবেশ, উঠোন বৈঠক, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, নাটক, কবিতা, গান, লিফলেট, খেলাধুলা, জারি সারির আয়োজন করা। এ সবের মাধ্যমে মানুষকে বোঝানো প্রবীণ হলেই আলঝাইমার্স হবে এমন নয়, বরং এটি একটি অনিরাময়যোগ্য রোগ।

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে প্রচারণা চালানো, যাতে করে সচেতনতার মান দ্রুত গতিতে বেড়ে যায়।

২. রোগের প্রাথমিক শনাক্তকরণে কমিউনিটি ক্লিনিক বা স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্পের আয়োজন করে মেমোরি টেস্টের ব্যবস্থা করা। পরিবারগুলোকে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ চিনতে সহায়তা করা।

৩. রোগীর যত্ন নিতে পরিবারের সদস্যদের জন্যে কেয়ার গিভার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। রোগী ও পরিবারের জন্যে সাপোর্ট গ্রুপ তৈরি করা।

৪. স্থানীয় হাসপাতাল বা চিকিৎসকের সাথে সমন্বয় করে রোগীদের চিকিৎসায় সহায়তা করা। দিনব্যাপী ডে কেয়ার সেন্টার বা বৃদ্ধাশ্রমে বিশেষায়িত কক্ষ চালু করা।

৫. কর্ম এলাকায় রোগীর সংখ্যা, অবস্থা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করা। আলঝাইমার্স নিয়ে নতুন গবেষণায় সহায়তা এবং আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর সাথে কার্যকর যোগাযোগ রক্ষা করা।

৬. সরকারকে নীতিমালা গ্রহণে সহায়তা কিংবা চাপ সৃষ্টি করা, যেমন মানসিক সক্ষমতা আইন প্রণয়ন, স্বাস্থ্য বীমা, বিনামূল্যে পরীক্ষা ও ওষুধের ব্যবস্থা করা। আন্তর্জাতিক তহবিল সংগ্রহ বা প্রকল্প আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিএসআর (কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি) থেকে তহবিল সংগ্রহ করার প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালা আলঝাইমার্স বান্ধব করার চেষ্টা অব্যাহত রাখা।

৭. মানবিক সহমর্মিতা বৃদ্ধির জন্যে স্বেচ্ছাসেবক নেটওয়ার্ক তৈরি করে রোগীদের নিয়মিত দেখা করা, গল্প করা, হাঁটাহাঁটি করানো কিংবা পরিচিত জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়া। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম জোরদার করে রোগীদের অংশ বাড়ানোর চেষ্টা করা। পছন্দের গান, নাটক, সিনেমা অথবা পুরানো দিনের সাংস্কৃতিক চর্চার পুনরাবৃত্তি করা। সহজভাবে বললে, এনজিওগুলো আলঝাইমার্স মোকাবিলায সচেতনতা, যত্ন, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও নীতি সহায়তা এই কাজ করতে পারে। এনজিওদের এসব কাজ করতে হবে সামাজিক দায় হিসেবে। আলঝাইমার্স মোকাবিলা শুধু ব্যক্তি বা পরিবারের দায় নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়।

লেখক-প্রবীণ বিষয়ে লেখক, গবেষক ও সংগঠক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়