বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:২২

মঞ্চ অভিনেতা সুনীল দাস মৃত্যুর পূর্বে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন

অনলাইন ডেস্ক
মঞ্চ অভিনেতা সুনীল দাস মৃত্যুর পূর্বে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন

শিল্পী ও শিল্পের মানুষ নাট্যশিল্পী সুনীল দাস। শিল্পকে ভালোবেসেই চলছিলো তার জীবনের জয়োল্লাস। নাট্যশিল্পী সুনীল চন্দ্র দাস ফরিদগঞ্জের সংস্কৃতি অঙ্গনে একটি আলোকিত নাম। যার অভিনয়ে ছিলো দর্শক মুগ্ধ করার মতো। জাগ্রত ও প্রাণবন্ত অভিনয়। আশির দর্শকের মঞ্চে সাড়া জাগানো হাস্যোজ্জ্বল প্রাণ এই গুণীশিল্পীর জন্ম ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি ফরিদগঞ্জ সদরের পূর্ব দাসপাড়ায়। পিতা কামিনী ঝুম দাস, মাতা রাজ রাণী দাস। তিন ভাইয়ের মধ্যে সুনীল দাস হচ্ছেন মেঝো। স্ত্রী মঞ্জু রাণী সাহা। দাম্পত্য জীবনে দু ছেলের জনক ছিলেন নাট্যশিল্পী সুনীল দাস। প্রিয় স্ত্রী মঞ্জু রাণী সাহাকে হারিয়েছেন আরো কয়েক বছর আগেই। মঞ্চ নাটক আপন দুলাল, নিমাই সন্ন্যাস, নৌকাবিলাস, এই পৃথিবীটা টাকার গোলাম, ভিখারির ছেলে, রামপ্রসাদ, রিক্সাওয়ালা, সিদুঁর নিওনা মুছে, রত্ননগর দর্শন, গরীবের মেয়ে, অহল্লাযাত্রা, দাতাকন্যা, হৃদয় উরমাধীনি’র মতো অসংখ্য মঞ্চ নাটক করে হয়ে উঠেছেন সকলের প্রিয় মঞ্চ অভিনেতা। অর্জন করেছেন অসংখ্য মানুষের সম্মান ও দশর্কদের ভালোবাসা।

‘নৃত্যবিদ্যা পাড়ার গুণীশিল্পী সম্মাননা-১৭’- এর অন্যতম গুণীশিল্পী হচ্ছেন সুনীল দাস। ২০২৪ সালের ১২ জুলাই তিনি পরলোকগমন করেন। তার অভিনয় জীবনের আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে মৃত্যুর ক’দিন আগে তার এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন নৃত্যশিল্পী ক্লিন্টন সরকার লিখন। নিচে তার কথোপকথন তুলে ধরা হলো--

১. কেমন আছেন?

সুনীল-অসুস্থ। তবে, এখন একটু ভালোই আছি।

২. অসুস্থ, তাহলে এখন কি আর অভিনয় করা হয় না?

সুনীল-হয়, কিন্তু ফরিদগঞ্জে তো তেমন কোনো নাট্য সংগঠন, শিল্পকলা নেই বললেই চলে। আমাদের সময়ে যেমনটা ছিলো। তাই, অভিনয় আগের মতো এখন আর হয় না। করি, এখন নিজের ভালো লাগা থেকেই করি। ইচ্ছে আছে একটা--সবশেষ এবারের পূজায় শেষবারের মতো ‘নৃত্যবিদ্যা’র নবীন শিল্পীদের নিয়ে ‘কাছনাচানি’ দেখানোর।

৩. কাছনাচানি মানে ছৌ নৃত্য--আমরা ছোটবেলায় দেখতাম খুব ভোরে ডাক, কাঁসা নিয়ে মুখে মুখোশ পরে কী সুন্দর নাচ দেখাতো?

সুনীল-হ্যাঁ। এখন আর তেমনটা দেখা যায় না। আমার কিছু কাছনাচের জিনিসপত্র ছিলো, এখন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অভিনয় করা হয় না তো, তাই।

৪. মঞ্চে প্রথম অভিষেক হয়েছিলো কোন্ চরিত্র নিয়ে?

সুনীল-’এই পৃথিবীটা টাকার গোলাম’ নাটকের ‘রমাপ্রসাদ’ চরিত্রে। ফরিদগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে টিকেট কেটে শত শত মানুষ এসেছিলো আমাদের নাটক দেখতে। সহপাঠী নাট্যশিল্পী রবি ঠাকুর, আব্দুল রব, হারু, সুবল, সালাম, চাঁদপুরের ভারতী সহ বেশ ক’জনকে খুব মনে পড়ছে এখন।

৫. পরিবার (স্ত্রী) কীভাবে দেখতো আপনার এই শিল্পচর্চাকে?

সুনীল-খুব ভালোবাসতেন, পছন্দও করতেন। মাঝে মাঝে তো আমাকে সাজিয়েও দিতেন। খুব ভালো ছিলো সে।

৬. মঞ্চ নাটক নিয়ে আপনার তেমন কোনো স্মরণীয় ঘটনা রয়েছে কি, যা আপনাকে এখনো খুব কষ্ট দেয়?

সুনীল-না। ভালোবেসে কাজ করেছি।

৭. কোনো ইচ্ছে আছে? চলুন, আমরা বাইরে কোথাও বসি, চা খেয়ে আসি?

সুনীল-খুব অসুস্থ। শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। কথা কম বলতে হয়, তবুও শেষবারের মতো চেষ্টা করছি। এবার পূজোয় তোমাদের সাথে কিছু করবার। চলো, তবে চা খাবো না--নিষেধ......।

৮. ‘নৃত্যবিদ্যা পাড়ার গুণীশিল্পী সম্মাননা-১৭ পদক’ প্রাপ্তির অনুভূতিটুকু কেমন ছিলো আপনার?

সুনীল-এই প্রাপ্তিটা অনেক আনন্দের। পাড়ার গুণীশিল্পী হিসেবে যে সম্মানটা তোমরা আমাকে দিয়েছো, সেটা সত্যিই অনেক আনন্দের। সঙ্গীতশিল্পী কমল চক্রবর্তীকে নিয়েও তোমরা যে অনুষ্ঠান করেছো সেটা কিন্তু আমাদের দাসপাড়া ভক্তিবেদান্ত শ্রী শ্রী গীতা স্কুলের ছেলে-মেয়েদের করার প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তুমি সেটাই করিয়ে দেখিয়েছো। এই কথা আমি দাসপাড়ায় শারদ মঞ্চেও বলেছিলাম, আর এখনো তোমাকে বলছি।

৯. আরো কিছু প্রশ্ন ছিলো জানার। কিন্তু আপনার তো শরীরটা ভালো দেখছি না, শ্বাসকষ্টও হচ্ছে। কেমন করে দেখছেন এখন জীবনটাকে?

সুনীল-জীবন জীবনের গতিতেই চলছে। পারলে কিছু করছি, আর না পারলে তো নাই। বিকাল হলেই ডাক্তার সুকণ্ঠের ফার্মেসীতে এসে বসি। কথা বলি আর পত্রিকা পড়েই সময় কাটাই।

১০. আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মূল্যবান সময়টুকু দেওয়ার জন্যে।

সুনীল-ধন্যবাদ তোমাকেও। হাঁটতে হাঁটতে..... ‘প্রাণপাখি চলে যাবে এ দেহ ছেড়ে, মাটির দেহ মাটি হবে, রবে যে পড়ে....’

অবশেষে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আর আসবেন না ফিরে আমাদের এই শিল্পের জগৎ জুড়ে। গত বছরের ১২ জুলাই ২০২৪ এই গুণীশিল্পীকে হারিয়েছি আমরা আমাদের এই ‘সংস্কৃতি অঙ্গন’ থেকে। ‘নৃত্যবিদ্যা’ পরিবার তার সাথে কাটানো সমস্ত স্মৃতি আর ভালোবাসা রাখবেন স্মরণে। তার স্মরণেই অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকারটি আজ প্রকাশিত হলো দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের পাক্ষিক আয়োজন ‘সংস্কৃতি অঙ্গন’ বিভাগে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়