প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:২৬
রায়পুরে দুই কাউন্সিলরসহ গ্রেপ্তার ৩, আত্মগোপনে ইউপি চেয়ারম্যান, আ. লীগ নেতারা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরপরই মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে নিজেরাও আত্মগোপনে চলে গেছেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। চেষ্টা করেও যারা দেশত্যাগে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। দলের দুঃসময়ে নেতাদের পাশে না পেয়ে আতঙ্ক আর হতাশায় দিন পার করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের অনেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন। ফলে দীর্ঘ ১৫ বছর রাজপথ দাঁপিয়ে বেড়ানো নেতাকর্মীরা অজানা শঙ্কায় দিন পার করছে।
|আরো খবর
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বিনা ভোটে সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমিদখল, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে অনেকে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশে আলিশান বাড়ি, গাড়িসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়লেও অনেকে মোটা অংকের অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। অর্থ সম্পদ ও বাড়ি-গাড়ি ফেলে এতেটা আকস্মিকভাবে দেশ থেকে পালাতে হবে, এমনটা তাদের কল্পনায়ও ছিলো না।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুরে লক্ষ্মীপুর সদরের পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ আহম্মদ পাটোয়ারী জামিনে বের হওয়ার সময় লক্ষ্মীপুর জেলগেট থেকে আবারও গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় বুধবার (২৪ ডিসেম্বর ২০২৫) রায়পুর পৌরসভার তিনবারের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামীলীগ নেতা মো. জাকির হোসেন নোমান ও আহসান উল্লা মাল, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মিজানুর রহমান, ছাত্রলীগ নেতা মো. শামিম হোসেন ও মো. আনোয়ার হোসেন বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে গ্রেপ্তার আতংকে বুধবার উপজেলা আইনশৃংখলা সভায় উপস্থিত হতে পারেননি ৬ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।
উল্লেখ্য, গত ১৭ ডিসেম্বর রায়পুরের বামনী ইউনিয়নে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী মশাল মিছিল, ফেসবুকে কার্যক্রম চালানোর অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ২২ জনের নামসহ অজ্ঞাত ৭০ জন আ'লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে রায়পুর থানার এসআই বলাই চন্দ্র দেবনাথ বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন। আরও মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্র আন্দোলনে দেশ যখন উত্তাল, ঠিক সেই সময়ে নিজেকে সেইফ জোনে নিতে জুলাই মাসের শেষ দিকে বিদেশে পাড়ি জমান লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নসহ রায়পুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ, পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট, আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক বাবুল পাঠান সহ তিনজন চেয়ারম্যান সহ শতাধিক নেতা। এমপি নয়ন ও উপজেলা আ'লীগের সভাপতি ও সম্পাদক পালিয়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হতাশায় ফেলে দেয়। তারা নিরাপদে ভারতে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালি পালিয়েছেন বলে মনে করছে অনেকে।
অনেক চেষ্টা করেও দেশ থেকে পালাতে না পারায় বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের মধ্যে সুরক্ষিত স্থানে আত্মগোপনে আছেন বলে মনে করছেন তাদের বিশ্বস্তজনেরা। সরকার পতনের পর তাদের খোঁজ নেই। এলাকার ঘনিষ্ঠজনরাও তাদের অবস্থান জানেন না। শুধু এই নেতারা নন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌর সভার মেয়রসহ ১০টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, তিনজন চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের খোঁজ নেই।
এদিকে, আ'লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান রাসেলসহ কয়েকজন নেতা আটক হয়ে কারাগারে থাকায় ও অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে থাকায় তুণমূলের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হতাশায় পড়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘‘কীভাবে নিজেদের সেইভ করবো জানি না। ক্ষমতায় থাকাকালীন শুধু নেতাদের হুকুম পালন করেছি। তারা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে আত্মগোপনে আছেন, আর আমরা কর্মীরা পালাতে না পেরে মার খাচ্ছি। রাতে ভয়ে নিজ বাড়িতে ও বাসায় ঘুমাতে পারছি না। জানি না আগামীতে কী অপেক্ষা করছে।’’








