রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৫

শাহরাস্তিতে আনসার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ

শাহরাস্তি ব্যুরো।।
শাহরাস্তিতে আনসার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ

শাহরাস্তি উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তুলসী দেবনাথের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তর সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করেছে।

স্থানীয় আনসার-ভিডিপি সদস্যদের অভিযোগ অনুযায়ী, দীর্ঘ ৮–১০ বছর ধরে একই উপজেলায় কর্মরত থেকে তুলসী দেবনাথ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নানাভাবে আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিউটির জন্যে নিয়োগ দিতে জনপ্রতি ৫০০–১০০০ টাকা ঘুষ গ্রহণ, মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ৫০০০–৮০০০ টাকা দাবি, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণে ২০০–২৫০০ টাকা উৎকোচ, দলনেতা-দলনেত্রীদের মাসিক ভাতা পাওয়ার পর তাদের থেকে নিয়মিত টাকা কর্তন, এমনকি নির্বাচনকালীন সরকারি ভাতা বণ্টনেও ব্যাপক অনিয়ম করেছেন তিনি।

অভিযোগের ভিত্তিতে কুমিল্লা রেঞ্জ পরিচালক আশীষ কুমার ভট্টাচার্য ও ১৭ আনসার ব্যাটালিয়নের পরিচালক ফাতেমাতুজ জোহরার নেতৃত্বে তদন্ত পরিচালিত হয়।

এদিকে দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় উত্তর ইউনিয়নের দলনেতা মো. মোস্তফা কামালকে ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে। দীর্ঘ ২০ বছরের কর্মজীবনে সততার সাথে দায়িত্বপালনকারী এ সদস্য ২০১৬ সালে 'প্রেসিডেন্ট ভিডিপি সেবা পদক' অর্জন করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, এটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক। দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি পুনর্বহাল ও স্থগিত ভাতা চালুর দাবি জানিয়েছেন।

মোস্তফা কামাল সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে আবেদন দাখিল করে বরখাস্ত আদেশ বাতিল ও পুনর্বহালের অনুরোধ করেছেন। তিনি তার আবেদনে উল্লেখ করেন, ২০০৪ সাল থেকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করলেও উপজেলা আনসার কর্মকর্তা তুলসী দেবনাথ ও প্রশিক্ষক পিন্টু চন্দ্র দাসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণেই তাকে এবং আরও কয়েকজন দলনেতাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

তিনি জানান, তদন্তে মৌখিক ও লিখিতভাবে তথ্য-প্রমাণ দেওয়ার পরও উল্টো তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। জেলা ও রেঞ্জ পর্যায়ের কয়েক দফা তদন্তে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়লেও শেষ পর্যন্ত যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে বরখাস্ত করা হয়। এতে শুধু তিনি নন, তার সঙ্গে দুইবার 'প্রেসিডেন্ট আনসার সেবা পদক' অর্জন করা কোম্পানি কমান্ডার আব্দুস ছাত্তার ও পৌর দলনেতা মোজাম্মেল হোসেনকেও একই অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়। মোস্তফা কামাল আরও বলেন, “আমি ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট ভিডিপি সেবা পদক পাই। অথচ জুলাই ২০২৪ থেকে আমার সম্মানী ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে গ্রামভিত্তিক ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণের ঘোষিত ৭০ জন প্রশিক্ষণার্থীর স্থলে উপস্থিতি কম থাকলেও অন্য সদস্যদের নামে প্রশিক্ষণ দেখিয়ে নিজেই বিভিন্ন নাম্বারে ভাতা উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় ভিডিপি সদস্যরা দাবি করেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আস্থাভাজন সরকারি কর্মকর্তা তুলসী দেবনাথ ও পিন্টু দাসের এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু সদস্যদের ক্ষতিই করছে না, বরং পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যারা অনিয়মের প্রতিবাদ করেন, তাদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হয়। ভুক্তভোগী সদস্যরা সরকারের কাছে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা আনসার কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তুলসী দেবনাথ বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। কমান্ডার ছাত্তার ও মোস্তফা সহ কয়েকজন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়