বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৩৯

কুমিল্লার তিতাসে শিশু সায়মনকে হত্যার দায়ে ভগ্নিপতির মৃত্যুদণ্ড।। শ্যালিকার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুমিল্লার তিতাসে শিশু সায়মনকে হত্যার দায়ে ভগ্নিপতির মৃত্যুদণ্ড।। শ্যালিকার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

কুমিল্লা তিতাসে সাময়ন ওরফে আরিয়ানকে হত্যার অভিযোগে একজনকে মৃত্যুদণ্ড, আরেকজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত। বুধবার (২০ আগস্ট ২০২৫) দুপুরবেলা কুমিল্লার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক সাব্বির মাহমুদ চৌধুরী এ রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিল্লাল পাঠান হলেন কুমিল্লা তিতাস উপজেলার বিরামকান্দি পাঠান বাড়ির মো. খেলু পাঠানের ছেলে এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শেফালী আক্তার (৪৩) হলেন একই উপজেলার কলাকান্দি উত্তর পাড়া মাস্টার বাড়ির জামাল মিয়ার স্ত্রী।

মামলার বিবরণে জানা যায়, পূর্ব আক্রোশের বশবর্তী হয়ে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ভিকটিম সায়মন ওরফে আরিয়ান (৭) কে হত্যা করে কলাকান্দি বালুর মাঠে (কাশবনে) লাশ গুম করে।

জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট বিকেলবেলা ভিকটিম সায়মন ওরফে আরিয়ান আসামি শেফালী আক্তারের ছেলে রাফি'র সাথে খেলাধুলা করার জন্যে ঘর থেকে বের হয়ে বাড়িতে ফিরে না আসায় বাদিনী তার আত্মীয় স্বজনের সহায়তায় সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে বাদিনী তিতাস থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন এবং পরদিন ঘটনাস্থলে ভিকটিমের অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট নিহতের গর্ভধারিণী মাতা খোর্শেদা আক্তার (৪০) বাদী হয়ে তিতাস থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মো. নয়ন মিয়া ও সাব-ইন্সপেক্টর মো. জাহিদুল হক এবং জেলা গোয়েন্দা শাখার সাব-ইন্সপেক্টর জীবন বিশ্বাস তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০২৩ সালের ২২ আগস্ট আসামি শেফালী আক্তার ও একই বছর ৩১ ডিসেম্বর আসামি মো. বিল্লাল পাঠানকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করলে আসামি মো. বিল্লাল পাঠান ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের ১৬৪ ধারার বিধানমতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। তৎপর তদন্তকারী কর্মকর্তা জীবন বিশ্বাস ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর আসামি বিল্লাল পাঠান ও শেফালী আক্তারের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/৩৪ ধারার বিধান মতে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তৎপর মামলাটি বিচারের জন্যে বিজ্ঞ আদালতে আসলে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় চার্জগঠনক্রমে রাষ্ট্র পক্ষে ১৫জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে আসামি মো. বিল্লাল পাঠানের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে মহামান্য হাইকোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ড এবং এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ২০১ ধারার বিধানমতে তাকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। বিচারক রায়ে আরও উল্লেখ করেন যে, মৃত্যুদণ্ড না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে গলায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ প্রদান করা হলো।

আসামি শেফালী আক্তারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার বিধানমতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ২০১ ধারার বিধানমতে তাকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। বিচারক রায়ে আরও উল্লেখ করেন যে, আসামি শেফালীর উভয় দণ্ড একসাথে চলবে।

এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মো. ইকরাম হোসেন বলেন, শ্যালিকা-দুলাভাইয়ের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত দেখে ফেলায় আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে শিশু সায়মন ওরফে আরিয়ানকে হত্যা করে। আমরা আশা করছি শীঘ্রই উচ্চ আদালত এ রায় বহাল রেখে দ্রুত কার্যকর করবেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়