রবিবার, ০৮ জুন, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫, ২১:২৮

ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বেই হচ্ছে কারসাজি

প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে নদীর ঘাট দখল করে রাতের আঁধারেই চলছে গণশৌচাগার নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে নদীর ঘাট দখল করে রাতের আঁধারেই চলছে গণশৌচাগার নির্মাণ

ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান পাটওয়ারী। সরকারি সম্পত্তি নিরাপদ রাখা তার দায়িত্ব। অভিযোগ উঠেছে তিনিই দখলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ডাকাতিয়ায় ঐতিহ্যবাহী পাকাঘাট বন্ধ করছেন তিনি। সেখানে (নদীতে) টয়লেট নির্মাণ করবেন। যা একাধারে জনস্বার্থ বিরোধী ও সরকারি নিয়ম-নীতির লংঘন। তার সাথে রয়েছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। ব্যবসায়ীদের অপর অংশ ও এলাকাবাসী এটা চায় না। কিন্তু চেয়ারম্যান পক্ষ নেয়ায় তারা জোরালো ভূমিকা নিতে পারছেন না। চলছে উত্তেজনা। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে- দাবি এলাকাবাসীর। ঘটনাস্থল ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের গল্লাক বাজার।

এদিকে চেয়ারম্যানের এমন ভূমিকায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী ও সমাজের সচেতন মহল।

সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বাজার গল্লাক বাজার। বাজারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেকগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাজারের পাশেই আছে কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা এবং মসজিদ। ঘাটে নেমে ও বসে নদীতে প্রবাহমান পানি ব্যবহার করেন প্রায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ।

স্থানীয় ও উপজেলা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করা হয়েছিলো। দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ রেকর্ড দেখে জানিয়েছেন ডাকাতিয়া নদী ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত। এসব ভূমি দখল করা বেআইনি। অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোনোভাবেই এ কাজ সমর্থন করা যাবে না। বরং তা বন্ধ করাই সরকারের দায়িত্বশীলদের কাজ। খাস ভূমিতে সরকারি কর্তৃপক্ষ ব্যতীত কেউ কোনোপ্রকার স্থাপনা করতে পারেন না। করলে আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ।

সরজমিনে দেখা গেছে, ঐতিহ্যবাহী ও জনগুরুত্বপূর্ণ ওই খেয়াঘাটটি বন্ধ করা হয়েছে। একই সাথে ঘাট দখলে নিয়ে শৌচাগার নির্মাণ কাজ চলমান আছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান পাটওয়ারী শৌচাগার নির্মাণের জন্য জায়গাটি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ কথা বলেছেন বাজার ব্যবসায়ী কমিটির আহ্বায়ক মোঃ ইমান হোসেন। শৌচাগার নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে প্রকল্পের ব্যবস্থাও করে দেন তিনি।

নির্মাণ কাজ শুরুর পর ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের একাংশ সরকারি সম্পত্তি দখল এবং সম্ভাব্য পরিবেশ দূষণের আশঙ্কায় আপত্তি তোলেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিক দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপাতত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু নির্দেশনা অমান্য করে উল্টো কাজের গতি দ্বিগুণ করা হয়েছে। বরং দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে রাতের অন্ধকারে তড়িঘড়ি কাজ চলছে। এ জন্য সরকারের দায়িত্বশীলদের উপর ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর।

অধিকাংশ এলাকা সিআইপির আওতায় থাকা সত্ত্বেও গত বছর ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় ফরিদগঞ্জ উপজেলা ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়। পরবর্তীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন দুলালের নেতৃত্বে ডাকাতিয়া নদী ও খালগুলোকে স্বাভাবিক রূপে ফিরিয়ে দিতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে 'ডাকাতিয়া নদী ও খাল খনন সংগ্রাম কমিটি'। জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় প্রশাসনও তাতে সাড়া দিয়ে উপজেলাব্যাপী সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরই মধ্যে খেয়াঘাট দখল করে নদীর তীরে শৌচাগার নির্মাণ কার্যক্রম জন্ম দিয়েছে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের।

খাস ভূমিতে শৌচাগার নির্মাণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়া হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নে, 'না' সূচক জবাব দিয়েছেন গল্লাক বাজার ব্যবসায়ী কমিটির আহ্বায়ক মোঃ ইমান হোসেন। বাজার ব্যবসায়ী কমিটি সংঘবদ্ধভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে শৌচাগার নির্মাণ করছে, বিষয়টি ন্যায়সঙ্গত কিনা? খেয়াঘাট ভেঙ্গে শৌচাগার নির্মাণ বাজারকেন্দ্রিক সম্ভাব্য শিল্পায়ন এবং ব্যবসায়ীদের বৃহত্তর স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে কিনা? খাস জমিতে ব্যক্তিগত ইচ্ছায় কোনো স্থাপনা করতে পারেন কি না। তিনি এসব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে জানতে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এআর জাহিদ হাসান বলেন, খোঁজ নিচ্ছি। এখানে আইন লঙ্ঘন হয়ে থাকলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।

একই বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়া বলেন, খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। কাউকে কাজের অনুমতি আমি দেইনি। সরকারি জায়গা দখল মুক্ত করতে শীঘ্রই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে বলেন, ঘাট বন্ধ করে ডাকাতিয়ায় শৌচাগার নির্মাণে ইউপি চেয়ারম্যানের ভূমিকা থাকলে আমি তাকে এ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলবো।

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। কিছু করণীয় থাকলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়