রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০০

শিশুর হৃদরোগ

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
শিশুর হৃদরোগ

হার্টের সমস্যা মানেই বড়দের রোগ নয়। এটি শিশুদেরও হতে পারে। শিশুর জন্মগত রোগের মধ্যে হৃদরোগ অন্যতম, যার শুরু মায়ের গর্ভ থেকেই। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি হাজার জীবিত শিশুর মধ্যে আটটি শিশু জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। এই আটজনের মধ্যে দুই-তিনজনের লক্ষণ জন্মের প্রথম ছয় মাসেই প্রকাশ পায়। গর্ভে থাকাকালীন হৃৎপিণ্ডের ত্রুটির মধ্যে আছে ছিদ্র, ভালভ জটিলতা, সরু রক্তনালি ইত্যাদি। পরে দেখা যাওয়া রোগের মধ্যে রিউমেটিক ফিভার, ভাসকুলাইটিস, মায়োপ্যাথি ইত্যাদি দেখা যেতে পারে।

কারণ

* অন্যান্য জন্মগত ত্রুটি বা সমস্যার মতো শিশুর হৃদরোগ বংশগত কারণে হতে পারে।

* বাবা-মায়ের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক থাকলে হতে পারে।

* মায়ের বয়স অপেক্ষাকৃত বেশি হলেও অনেক সময় শিশু ডাউন সিনড্রোমজনিত ত্রুটি নিয়ে জন্মাতে পারে।

* মা যদি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তাতেও শিশুর হৃদরোগ হতে পারে।

* গর্ভাবস্থায় মায়ের ভাইরাল ডিজিজ হলে, ঘনবসতি এলাকায় জীবাণুর সংক্রমণজনিত কারণে, কিছু কিছু রোগের জটিলতার কারণে শিশুর হৃৎপিণ্ডের রক্তনালি সরু হলেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শিশুর হৃদরোগের উপসর্গ

হৃদরোগ আক্রান্ত শিশুরা ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়।

কিছুদিন পরপর শ্বাসকষ্টে ভোগে ও বুকে ঘড়ঘড় শব্দ হয়।

শিশুর পর্যাপ্ত ওজন হয় না।

অক্সিজেনের অভাবে অল্প পরিশ্রমেই মুখ নীলাভ বর্ণ ধারণ করে ও অল্পতে ক্লান্ত হয়ে যায় (বিশেষত খাবারের সময় ও মলত্যাগের সময়)।

হাত-পায়ের নখ ফুলে যায়।

হৃদযন্ত্রে ছিদ্রের কারণ

হৃদযন্ত্রের চারটি চেম্বার থাকে। দুটো এট্রিয়াম, দুটো ভিট্রিক্যাল। দুটো এট্রিয়ামের মাঝে থাকে ইন্টারেট্রিয়াল সেপট্রাম। দুটো ভেন্টিকুলারের মাঝে একে বলা হয় ইন্টারভেন্টিকুলার সেপট্রাম। এই সেপট্রামে ছিদ্র হতে পারে। কেননা এরা সম্পূর্ণ পর্দা হিসেবে তৈরি হয় না। এটা বিভিন্ন জায়গা থেকে তৈরি হয়ে পর্দাকে সম্পূর্ণ করে। এ সম্পন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে বা কোনোটাতে ত্রুটি থাকলে তা জন্মের পর সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়। তিনটি পরীক্ষায় এ রোগ নির্ণয় করা হয়Ñইসিজি, চেস্ট এক্স-রে, কালার ডপলার ইকো।

গর্ভবতী মায়ের করণীয়

* গর্ভধারণের তিন মাস আগে জঁনবষষধ ঠধপপরহব দিলে শিশুর Congenital Rubella Syndrome জনিত হার্টের রোগ হয় না।

* গর্ভকালীন যতটা সম্ভব ওষুধ সেবন ও এক্স-রে করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

* অতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না। মাকে বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

* এছাড়া শিশুর জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব একজন ডাক্তারের মাধ্যমে শিশুকে পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হতে হবে শিশুর বুকে কোনো অস্বাভাবিক শব্দ আছে কি না। শিশুর টনসিলাইটিস, নেফ্রাইটিস, ভাইরাল রোগ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করানো উচিত।

* ওষুধের মাধ্যমে কিছু হৃদরোগ ভালো হয়ে যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। তাই আতঙ্কিত হয়ে বসে না থেকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করাতে হবে। বিশেষ করে লক্ষণগুলো সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকলে অনেক সময় শিশুর হৃদরোগ দ্রুত ধরা পড়ে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়