রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৫, ০১:২৪

চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে একটিমাত্র ট্রলি দিয়ে চলছে সব ওয়ার্ডের চিকিৎসাসেবা

রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগ, নার্সদের বিরুদ্ধে বিরূপ আচরণের অভিযোগ

কবির হোসেন মিজি
রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগ, নার্সদের বিরুদ্ধে বিরূপ আচরণের অভিযোগ
ছবি :হাসপাতালের একমাত্র ট্রলি

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ হতে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগী বহন এবং মৃতদেহ নামানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভরসা বলতে একটিমাত্র ট্রলি ও একটি হুইল চেয়ার। যার কারণে প্রতিদিনই রোগী ও স্বজনদের পড়তে হচ্ছে দীর্ঘ অপেক্ষা ও চরম ভোগান্তিতে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কিছু নার্সের অমনোযোগী আচরণ ও সহযোগিতার অভাব, যা রোগী ও স্বজনদের হতাশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগী বহন, লাশ নামানো বা দ্রুত সেবা দেওয়ার মতো জরুরি কাজে ব্যবহৃত ট্রলিগুলো অনেকটাই ভাঙ্গা ও অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো তদারকি নেই বললেই চলে। ফলে একটি কার্যকর ট্রলির ওপরই পুরো চিকিৎসাসেবা ও পরিবহন ব্যবস্থা নির্ভর করছে।

চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে ওয়ার্ডবয় ও কর্মচারীরাও পড়ছেন চরম বেকায়দায়, আরো বেশি কষ্ট পেতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের, যাদেরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। কারণ একটি ট্রলি দিয়ে ৪ তলা কিংবা তিন তলা থেকে রোগী নামিয়ে আবার অন্য রোগীকে বহন করতে হয়।

সরজমিনে দেখা গেছে, গত সোমবার (২৮ জুলাই ২০২৫) রাতে মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঘোড়াধারী গ্রামের আশরাফ খান নামের এক রোগীর মৃত্যু হলে তার লাশ নামানোর জন্যে স্বজনদের প্রায় ৪০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ওয়ার্ড বয়দেরকে ট্রলির কথা জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, অন্যান্য ওয়ার্ডের ট্রলির চাকা ভাঙ্গা বা সমস্যা থাকায় একটিমাত্র ট্রলিতেই রোগী ও মৃতদেহ বহন করতে হচ্ছে।

মৃত রোগীর ছেলে আল-আমিন খান বলেন, দুপুরে বাবাকে ভালো অবস্থায় ভর্তি দেই। সন্ধ্যায় এসে দেখি নার্সরা সেবা দিচ্ছে না। রাতে বাবার মৃত্যু হলে লাশ নামাতে গিয়ে ট্রলির জন্যে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে।

ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা এক নারী রোগীর স্বামী শাহাদাত হোসেন বলেন, রোগীর সমস্যা বেড়ে গেলে ওয়ার্ড বয়দের ডাকি, কিন্তু তারা বলেন ট্রলি ব্যস্ত আছে। নার্সদের বললেও বলেন, অপেক্ষা করেন। এমন দেরি হলে বড় ক্ষতি হতে পারে।

আরেক বৃদ্ধ রোগী জমির উদ্দিন বলেন, আমার কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা। এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে যেতে প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি ট্রলির জন্যে। এতো বড়ো হাসপাতালে একটা ট্রলি, এটা কীভাবে চলে?

রোগী ও স্বজনরা আরও অভিযোগ করেন, রোগীর অবস্থার অবনতি হলে নার্সদের জানানো হলেও অনেকে তৎক্ষণাৎ সাড়া দেন না বা আগ্রহ দেখান না। এমন আচরণে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা স্বজনদের।

এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার বোনের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়েছিলো, নার্সদের বলার পরও তারা আসতে দেরি করেন। অমনোযোগী আচরণে আমরা খুব অসহায় বোধ করি। হাসপাতালের কয়েকজন ওয়ার্ডবয়ও স্বীকার করেছেন, রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি, কিন্তু সরঞ্জাম খুবই সীমিত।

একটি ট্রলি আর একটি হুইল চেয়ারে প্রতিদিনের সব রোগী বহন, লাশ নামানো সব সময় সম্ভব হয় না, বলেন এক ওয়ার্ডবয়।

এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, সব ক'টি ওয়ার্ডে আলাদা ট্রলি রয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। খবর নিয়ে জানা যায়, দোতলা বা অন্য ওয়ার্ডে থাকা একটিমাত্র ট্রলিতেই চলছে জীবিত/ মৃত রোগী বহন ও চিকিৎসাসেবা। এর সাথে একটিমাত্র হুইল চেয়ার, যা ওয়ার্ডবয়েরাও স্বীকার করেছেন।

জেলার প্রধান এই হাসপাতালে প্রতিদিন শত শত রোগী ভর্তি ও সেবা নিতে আসেন। যন্ত্রপাতি ও মানবসম্পদ অপ্রতুল হওয়ায় নতুন ট্রলি, হুইল চেয়ার এবং নার্সদের আচরণে মানবিকতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।

রোগী ও স্বজনদের প্রত্যাশা, খুব শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান হবে এবং সরকারি হাসপাতালে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়