প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৮
নদীর ধারে ছোট্ট নীলু

একটা ছোট্ট গ্রামে থাকত একটি ছেলে, তার নাম নীলু। নীলুর বয়স খুব বেশি না, কিন্তু তার মনটা ছিল খুব বড়। নীলুর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছিল গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটি। স্কুল থেকে ফিরে সে প্রতিদিন নদীর ধারে বসে মাছ দেখত, পাখির ডাক শুনত আর নদীর জলের ঢেউ গুনত।
নীলুর দাদু তাকে প্রায়ই বলতেন,
“নদী আমাদের মা। নদী বঁাচলে আমরাও বঁাচব।”
একদিন নীলু নদীর ধারে গিয়ে দেখল, নদীর পানি আগের মতো পরিষ্কার না। প্লাস্টিক, পলিথিন আর আবর্জনায় ভরে গেছে চারপাশ। মাছগুলোও আর আগের মতো দেখা যায় না। নীলুর চোখে জল চলে এলো। সে ভাবল, “আমার প্রিয় নদীটা কি অসুস্থ হয়ে গেছে?”
নীলু দৌড়ে দাদুর কাছে গেল। সব কথা শুনে দাদু বললেন,
“নদী অসুস্থ হয় যখন মানুষ তাকে কষ্ট দেয়। কিন্তু মানুষই পারে তাকে আবার ভালো করতে।”
সেদিন থেকেই নীলু একটা সিদ্ধান্ত নিল। সে একা বসে থাকবে না। পরদিন স্কুলে গিয়ে সে তার বন্ধু রিমা, টুটুল আর হাসানকে সব বলল। সবাই রাজি হলো নদী পরিষ্কার করবে।
রবিবার সকালে তারা হাতে গ্লাভস, বস্তা আর লাঠি নিয়ে নদীর ধারে গেল। প্রথমে সবাই একটু ভয় পেলÑএত ময়লা! কিন্তু নীলু বলল,
“আমরা যদি শুরু না করি, তাহলে কে করবে?”
সবাই একসঙ্গে কাজ শুরু করল। প্লাস্টিক তুলে বস্তায় ভরল, পলিথিন আলাদা করল। গ্রামের কয়েকজন বড় মানুষ তাদের দেখে এগিয়ে এল। কেউ বলল,
“এই ছোট ছেলেমেয়েগুলো যখন পারে, আমরা কেন পারব না?”
ধীরে ধীরে নদীর ধারের চেহারা বদলাতে লাগল। পানি একটু একটু করে পরিষ্কার হলো। কিছু মাছ আবার দেখা গেল। নীলুর মন আনন্দে ভরে গেল।
কয়েকদিন পর গ্রামের স্কুলে এক সভা হলো। নীলুকে মঞ্চে ডাকা হলো। সে একটু লজ্জা পেলেও সাহস করে বলল,
“নদী, গাছ, পশু—সবাই আমাদের বন্ধু। আমরা যদি তাদের নষ্ট করি, আমরাই কষ্ট পাব।”
সবাই হাততালি দিল। গ্রামের মানুষ সিদ্ধান্ত নিল—আর কেউ নদীতে ময়লা ফেলবে না। প্লাস্টিক কম ব্যবহার করবে। নদীর পাশে গাছ লাগাবে।
কয়েক মাস পর নীলু আবার নদীর ধারে বসে। নদী এখন পরিষ্কার, বাতাস ঠান্ডা, পাখিরা গান গাইছে। দাদু এসে পাশে বসলেন।
দাদু হাসতে হাসতে বললেন,
“দেখলে নীলু, ছোট কাজও বড় পরিবর্তন আনতে পারে।”
নীলু নদীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
“আমি সবসময় তোমার যত্ন নেব।”
শিক্ষা: প্রকৃতিকে ভালোবাসলে প্রকৃতি আমাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ দেয়।
জাফরিন জাকারিয়া : ইংরেজি বিভাগ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি।








