সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:০৭

হৃদয়বতী

মিজানুর রহমান রানা
হৃদয়বতী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

আট.

গাড়িটা থানার সামনে এসে ব্রেক করলো। তারপর ইরফানকে কনস্টেবলরা টেনে হিঁচড়ে নামালো। এ সময় লিয়াকত তার রাইফেলটা দিয়ে ইরফানের পিঠ বরাবর একটা আঘাত করলো। ইরফান আঘাতের ফলে মাটিতে পড়ে গেলো। এ সময় ওসি প্রদীপ থানা থেকে বের হয়ে এলো।

ইরফান মাটিতে পড়ে আছে। ওসি প্রদীপ তার পা দিয়ে ইরফানের মাথাটা চেপে ধরলো। তারপর কিছুক্ষণ মাটির সাথে পিষে দিয়ে বললো, ‘মাতাব্বরি করো না? মেয়ে মানুষ নিয়া ফুর্তি করো? এই এলাকায় ওসি প্রদীপের কথা ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না। আর তুমি সমুদ্র বিহারে বের হয়েছো তিন তিনটা সুন্দরী যুবতী নিয়া। ওগোরে তো আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়া ডন ইমতিয়াজ আজ রাতে ভোগ করে তিনদিন পর কানাডা চালান করবো ওর পতিতালয়ে। আর তোমার মরণ হবে আমার হাতে।’

ইরফান কিছুই বুঝতে পারছে না। এটা থানা, নাকি কসাইখানা? একজন ওসির কথাবার্তা আর চরিত্র এমন হতে পারে নাকি? এরা তো মানুষের জানমাল রক্ষার জন্যে চাকুরিতে জয়েন করেছে। কিন্তু তার পরিবর্তে মানুষের প্রতি জুলুম করছে কেনো? মানুষ নাকি পিশাচ?

ইরফানকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে প্রশ্ন করলো ওসি প্রদীপ, ‘কী ভাবছো মিয়া। তোমারে ছাইড়া দিমু?’

হাসতে লাগলো ওসি প্রদীপ। শোনো তুমি জানো না কে এ ইমতিয়াজ। যার কথায় বাংলাদেশের সব মাফিয়ারা বসে আর উঠে। তার কাছে আমার মতো একটা ওসি তো নগণ্য। সে তো খোদ সরকারকেই চালায়। বুঝলা? তোমারে মারলে তেমন কিছু যাবে আসবে না।’

ইরফান এবার মাথা উঠালো। তারপর বললো, ‘আমার পরিচয়টা জানা উচিত।’

‘আরে তোমার আর কি পরিচয়। শুনছি তুমি নাকি জামশেদ ডাকাত। কয়েকবার ধরা পইড়া জেলও খাটছো। তোমার মতো দাগী আসামীরে ক্রসফায়ার করলে তো আমার প্রমোশন হয়ে যাবে।’

লিয়াকত ইরফানকে দু বাহু ধরে মাটি থেকে টেনে উঠালো। তারপর নিজের পকেট থেকে রিভলবারটা বের করে ওসি প্রদীপের হাতে দিলো। ওসি প্রদীপ আর দেরি করলো না। ইরফানের বুক বরাবর গুলি চালালো।

গুলির বিশাল এক ধাক্কায় ইরফান মাটিতে পড়ে গেলো। জ্ঞান হারালো সে। ওসি প্রদীপ লিয়াকতকে আদেশ দিলো, ‘ওরে বস্তায় ভরে সাগরে ফেলে দিয়ে আসো, যাও।’

লিয়াকত সঙ্গীয় চার কনস্টেবলসহ ইরফানকে একটা মোটা বস্তায় ঢোকালো। তারপর গাড়িতে তুলে নিয়ে সাগরে ফেলে দিয়ে চলে গেলো।

ক্রমে ক্রমে ডুবে যাচ্ছে ইরফান। এ সময় সে দেখতে পেলো একটা স্পীডবোট এদিকেই আসছে। খুবই দ্রুত স্পীডবোটটা তার কাছ দিয়ে কয়েক চক্কর মোড় নিলো। একজন লোক ঝাঁপ দিয়ে ইরফানকে তুলে নিলো। তারপর বস্তা থেকে তাকে বের করে নিলো। ইরফান মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে যাকে দেখলো, তাতে সে হতবাক হয়ে গেলো।

‘তুষার তুই?’ কীভাবে জানলি আমার খবর? প্রশ্ন করলো ইরফান।

‘ওসি প্রদীপের মিথ্যা ক্রসফায়ার সংক্রান্ত একটা অনুসন্ধানী সংবাদের জন্যে প্রায় মাসখানেক কক্সবাজারে আছি আমি। আজ হঠাৎ তোমার বিষয়ে আমাকে ইরফরমেশন দিয়েছেন চীফ অফিসার অনির্বাণ আহমেদ। তুমি কক্সবাজার আসার সাথে সাথেই আমি তোমাকে ফলো করে এখানে এসেছি।’

‘কিন্তু ওরা যখন আমাকে উঠিয়ে নিলো। গুলি করলো তখন তুই কোথায় ছিলি?’

‘আমি জানতাম তুমি একাই একশ’। আর্মিতে দীর্ঘদিন যাবত তোমার সব ধরনের প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। তোমার বুকে যে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট আছে সেটাও আমি জানি। সুতরাং আমি চেয়েছি ওরা তোমাকে গুলি করুক, আর নিজেরা নিজেদের জালে জড়িয়ে পড়ে ধরা পড়ুক।’

‘ওসি প্রদীপের খবর কি?’

‘ওসি প্রদীপ আর লিয়াকত গ্রেফতার হয়েছে। আর্মির হেড কোয়ার্টার থেকে দ্রুতই সরকারের উচ্চমহলে রিপোর্ট করা হয়েছে। এবার তাদের এতোদিনের সব অপরাধচিত্র ফাঁস হয়ে যাবে। তারা যে টেকনাফের বুকে নিজেদের স্বার্থে প্রতিদিনই দু-চারটি ক্রসফায়ার করে লাখ লাখ টাকা ধান্ধা করতো, এখন সবই সরকারের উচ্চ মহলে পরিষ্কার হয়ে গেছে। তুমি সফল হয়েছো বন্ধু। এবার তোমার সঙ্গী মেয়েদেরকে মুক্ত করতে হবে।’

স্পীডবোট ছুটে চলছে। আর পেছনে সাগরের জলরাশি তাদের পথ ক্লিয়ার করে দিচ্ছে। ইরফান সেদিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। তারপর মনে মনে বললো, ‘হৃদয়বতী অনন্যা, তোমাকে আমার ভালোবাসতেই হবে। কারণ তুমি আসলেই অনন্যা।’ (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়