প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:০৭
দেবদাস কর্মকারের কবিতা

এই নদীটা
এই নদীটা যাচ্ছে কোথায় হয়তো অনেক দূরে
জন্ম থেকেই মুগ্ধ আমি তোমার জলের সুরে
তোমার পাশেই ছায়ায় ঢাকা ছোট্ট আমার বাড়ি
শ্যামল বনের অরূপ ছায়া পড়ছে জলে তারি।গাঁয়ের পরে গাঁ পেরিয়ে বন পেরিয়ে মাঠ
এপার ওপার করছে শুধু একটি খেয়াঘাট
এপাশটাতে গা এলিয়ে কৌড়িখাড়া গ্রাম
একটি নদী চলছে বয়ে, ধরেছে সন্ধ্যা নদী নাম।এই নদীটা যাচ্ছে কোথায় সামনে আছে আকাশ ছোঁয়া বাঁক
কাছের ঝোপে তেতুল গাছে নিরিবিলি জমছে মধুর চাক
ধনচে বনের পায়ের কাছে ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ খেলানো জল
একটি মেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে একটু যেন কাকে দেখার ছল।তুলোট মেঘ নীল আকাশে জ্যোৎস্না থাকে সকল ঋতুর পাশে
ফড়িং ওড়ে ঘাসের উপর নানান রঙে নিত্য বারো মাসে
হরেক রকম পণ্য নিয়ে নৌকা যে দেয় দূরের দেশে পাড়ি
সন্ধ্যা সকাল আকাশ পথে উড়ে চলে সাদা বকের সারি।এই নদীটা চলছে বয়ে সঙ্গে নিয়ে ইতিহাসের স্মৃতি
অন্তরে তার উজান ভাটির নানান সুরের গীতি
ভাঙা পারের জীবন গাঁথার নাই তো কোথাও ঠাঁই
একূল ওকূল সব কুয়াশা জীবনব্যাপি কূলকিনারা নাই ।১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ঢাকা, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২, শরৎকাল।
মানচিত্র
দুলছে মেঘ চিত্র আকাশমণ্ডলে ঝুলে
একটি মানচিত্র হয়তো এখনই ছিঁড়ে পড়ে যাবে,
সময়ের সুতোয় ঝুলছে স্বপ্নিল অতীত, ভঙ্গুর বর্তমান, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
কোটি কোটি মানুষের যুগলবন্দি হাত।বেদনা প্রেম দ্রোহ গচ্ছিত রেখে কী তীব্র আর্তনাদ
মহাবিশ্বের কোথাও ঠাঁই নেই যেন,
অসংখ্য শৃগাল শকুন শুধু মানুষের অবয়বে
হা করে আছে, নিচে ছিঁড়ে পড়ে গেলে গিলে খাবে,
জলে ভাসা পাতায় আশ্রিত বিশ কোটি মানুষ ।যারা আছে অনিচ্ছা নির্বাসনে, আত্মদংশনে তারা
শুধু অপেক্ষা শরত রাত্রির আলোকোজ্জ্বল ধ্বনিপুঞ্জের জন্যে,
আকাশ থেকে নেমে আসে যেন বেদনাময় প্রশ্বাস
পৃথিবীর দুই মেরুবৃত্তে ঘোলা জ্যোৎস্নার চাঁদ
রত্নাবলি ছায়া সন্ধ্যার জানালায় সমস্ত কষ্ট ঘুচিয়ে অদ্ভুত বিস্ময়ে চেয়ে আছো তুমি
একটি অরুণিত ঊষা দেখবে বলে,
যেখানে জ্বলজ্বল করবে একটি সবুজ মানচিত্র আর আমাদের উৎকণ্ঠাহীন নিকষিত প্রেমগাথা ।
৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ঢাকা, ২১ ভাদ্র ১৪৩২ শরতকাল।