প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৮
এ সপ্তাহের লেখক
‘সৃজনশীলতায় খুঁজে পাই নতুন ভাবনার জগৎ’

লেখালেখির প্রতি আপনার আগ্রহ কবে থেকে এবং কীভাবে শুরু হলো?
ধন্যবাদ জানাই আপনাকে। আমি সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনস্ক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি ও বড় হয়েছি। আমার বাবা একজন সংস্কৃতিপ্রেমী ও বইপ্রিয় মানুষ। পারিবারিক পরিবেশ থেকেই লেখালেখির প্রতি আগ্রহ জন্মায়। সংগীতচর্চা, কবিতা ও গান লেখার চেষ্টা থেকেই আমার সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগতে প্রবেশ।
কবিতা লেখার সময় কোন বিষয় বা অনুভূতি আপনাকে সবচেয়ে বেশি টানে?
কবিতা লেখার সময় আমি প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলি। আমার জীবনের নানা স্মৃতি ও সামাজিক বাস্তবতা আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে। বাস্তবতা ও প্রকৃতির মধ্যেই আমি কবিতার উপাদান খুঁজে পাই এবং যেকোনো বিষয় নিয়েই কবিতা লেখার চেষ্টা করি।
আপনার কবিতায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও কল্পনার মিশ্রণ কতটা থাকে?
জীবনের পথে বহু আঘাত ও মানসিক কষ্টের অভিজ্ঞতা জমা হয়েছে, যা আমাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। আমি বিশ্বাস করি, দুঃখ-কষ্ট, রাগ ও অভিমান ছাড়া কোনো মানুষ পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। আমার কবিতায় কল্পনার উপস্থিতি খুব সামান্য, বেশিরভাগই প্রকৃতি ও বাস্তব জীবনের মিশেল।
প্রবন্ধ লেখার সময় আপনি কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেন?
আমরা সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি হিসেবে শ্রেষ্ঠ জীবÑমানুষ। আমাদের প্রত্যেকের চিন্তা ও মানসিকতা ভিন্ন। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রগতিশীল সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ানুরাগী মানুষদের বেশি পছন্দ করি। প্রবন্ধ লেখার সময় আমি দায়িত্ববোধসম্পন্ন, সৃষ্টিশীল ও মানবিক মানুষ ও কাজকে প্রাধান্য দিই। তাছাড়া স্মৃতির জগতে ফিরে যাওয়ার মধ্যেও আমি লেখার অনুপ্রেরণা খুঁজি।
স্মৃতিচারণমূলক লেখার ক্ষেত্রে কোন ধরনের স্মৃতি আপনাকে সবচেয়ে টানে?
পুরোনো স্মৃতিগুলো মনে এলেই আমি স্মৃতিমগ্ন হয়ে পড়ি। পুরোনো দিনের সিনেমার গান বা আধুনিক গানের কিছু অংশ মনে পড়ে যায়। জীবনের পথে বহু স্মৃতির অভিজ্ঞতা হয়েছেÑকখনো আনন্দ, কখনো বিষাদ। স্মৃতিগুলো কখনো কাঁদায়, কখনো হাসায়। আমি মনে করি, যারা অতীতকে ভুলে যায়, তারা আদৌ কতটা মানুষ হয়ে উঠতে পারে তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। মানুষের একমাত্র স্থায়ী সঙ্গীÑতার স্মৃতি।
কোন লেখক বা কবির কাছ থেকে আপনি সবচেয়ে বেশি প্রেরণা পান?
ছোটবেলা থেকেই গান শুনতে ভীষণ ভালোবাসি। গান আমার কাছে এক ধরনের নেশা। প্রিয় কোনো শিল্পীর গান শুনলে গানটির সঙ্গে গাওয়ার চেষ্টা করি। সৃষ্টিশীল কবি, লেখক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী, গল্পকার ও আবৃত্তিশিল্পীদের সংস্পর্শে আসার তীব্র আকাক্সক্ষা কাজ করে। আমি সবসময় গান শেখার চেষ্টায় আছি। প্রয়াত গীতিকবি পুলক গঙ্গোপাধ্যায়, চাঁদপুরের গর্ব প্রয়াত মুখলেসুর রহমান মুকুল, গীতরত্ন মিলন খান, বিশিষ্ট গীতিকবি কবির বকুলসহ অনেকের গান ও গানের কথায় আমি আমার কবিতা লেখার প্রেরণা খুঁজে পাই।লেখালেখির বাইরে কোন বিষয়গুলো আপনার সৃজনশীলতাকে সমৃদ্ধ করে?
আমি বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিই। সামাজিক ও সেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করি। জীবনের অতীত অভিজ্ঞতাগুলোকে মনে রেখেই সামনে এগিয়ে যাই। সৃজনশীলতার মধ্যেই আমি নতুন ভাবনার জগৎ খুঁজে পাই। লেখালেখির মাধ্যমে সেই সৃজনশীল পথে চলতেই আমি আগ্রহী।
পাঠকের প্রতিক্রিয়া আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করে?
একজন লেখকের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তার পাঠক। বলা চলে, পাঠকরাই একজন লেখককে গড়ে তোলেন। লেখকের কোনো লেখা যদি পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়, তাহলে সেটিই লেখকের সার্থকতা। পাঠকের আলোচনা-সমালোচনা, যা-ই হোক, তা একজন লেখককে আরও ভালো লেখার উৎসাহ দেয়। একজন ক্ষুদ্র লেখক হিসেবে আমার ক্ষেত্রেও তাই।
বর্তমানে কী নিয়ে লিখছেন বা কোনো বইয়ের কাজ করছেন কি?
সময়োপযোগী নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখি করছি। আমার লেখা নিয়মিতভাবে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ, চাঁদপুর প্রবাহ, দৈনিক শপথ, ইল্শেপাড়সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। কিছু লেখা জাতীয় দৈনিকেও প্রকাশিত হয়েছে। মাঝেমধ্যে কবিতাও ছাপা হয়। ভবিষ্যতে একটি বই প্রকাশ করার ইচ্ছা আছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বা স্বপ্ন কী লেখালেখি নিয়ে?
মহান সৃষ্টিকর্তা যদি সুস্থ রাখেন, তবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চা চালিয়ে যেতে চাই। কবিতা ও গল্প লেখাও চলমান থাকবে। তবে আমার আসল স্বপ্ন হলো ভালোবাসা নিয়ে সৎভাবে মানুষের সঙ্গে বেঁচে থাকা। আমার কোনো আচরণে কেউ যেন কষ্ট না পায়, সেটাই আমার মনের গভীর কামনা। আমি চাই সাহিত্য-সংস্কৃতির মানুষদের সান্নিধ্যে থাকতে এবং তাদের ভালোবাসা ও স্নেহে জীবনের পথ পাড়ি দিতে।