শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫  |   ৩৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৫, ০৯:৫৭

যে কথা হয়নি বলা

উজ্জ্বল হোসাইন
যে কথা হয়নি বলা

 দশ বছর আগে উচ্চ মাধ্যমিকের শুরুতে হৃদিতাকে  প্রথম দেখি। সেও এসেছিল নতুন ছাত্র হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিকে। তার মধ্যে ছিল আত্মবিশ্বাস, চোখে স্বপ্ন, আর মুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। তাকে দেখলে যে কেউ প্রেমে পড়বে। প্রথম দেখাতেই কী এক অজানা অনুভূতি আমার বুকে ধাক্কা দিয়েছিল। আমি চুপচাপ বসে স্যারের পাঠদানের পাশাপাশি তার দিকে তাকাচ্ছিলাম, আর মনে মনে ভাবছিলাম এই মেয়েটি যেন ক্লাসে আলাদা।

কয়েকদিন পর ওর সাথে বাসা থেকে একসাথে কলেজে আসা, কলেজে পাশের বেঞ্চে বসার সুযোগ হয়। বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে সে হেসে বলেছিল, তুমি খুব চুপচাপ, তাই না? আমি মাথা নেড়ে একটু হাসলাম। বলার ছিলো অনেক কিছু, কিন্তু কিছুই বলিনি। সময়টা যেন থেমে গিয়েছিল আমাদের চারপাশে।

ধীরে ধীরে একটা অদ্ভুত বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। ওর হাসি, ওর রাগ, ছোট ছোট কথায় অভিমান করা সবই আমার জীবনের এক অভিন্ন অংশ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আমি কখনোই বলিনি আমার মনের কথা। ভাবতাম, যদি বলার পর বন্ধুত্বটাই নষ্ট হয়ে যায়? যদি ও একেবারে দূরে সরে যায়?

কলেজ জীবন শেষ হলো। সবাই ছড়িয়ে পড়লো যার যার জীবনের পথে। হৃদিতা চলে গেল শহরে, আর আমি থেকে গেলাম গ্রামে, বাবার ব্যবসা ও পড়াশোনা দুটো সামলাতে। মাঝে মাঝে ওর মেসেজ আসত, কেমন আছো? আর আমি এক লাইন লিখতাম ভাল আছি। তুমি? সেও লিখতো কেমন আছো, তারপর? অথচ মনের ভিতরে জমে থাকত শত শত না বলা কথা। প্রতিবারই ভাবতাম, এবার বলবো। কিন্তু বলা আর হতো না।

এরপর এক দশক কেটে যায়। একদিন হঠাৎ খবর পেলাম, হৃদিতার বিয়ে ঠিক হয়েছে। বুকের ভেতরটা হঠাৎ করে ফাঁকা হয়ে গেল। মেসেঞ্জারে শুধু লিখলাম, শুভ কামনা রইল। ও উত্তর দিল, ধন্যবাদ, জানতাম তুমি খুশি হবে। সেই দিন খুব কেঁদেছিলাম। কারো না বলা কথায় এত কষ্ট হতে পারে আগে জানতাম না।

আজ দুই যুগ পর, আমি দুই সন্তানের বাবা। স্ত্রী খুব ভালো, সংসার সুন্দর। তবুও কোনো এক একলা দুপুরে হৃদিতার কথা মনে পড়ে যায়। হঠাৎ ফেসবুকে দেখি, হৃদিতার স্বামী মারা গেছে, সেও দুই সন্তান নিয়ে বেঁচে আছে। বুকের ভেতর আবার হালকা কিছু কাঁপে।

আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকি স্ক্রিনে। লিখি কেমন আছো, হৃদিতা? কিন্তু পাঠাই না। আবার মুছে ফেলি। কারণ আমার সেই না বলা কথাগুলো আজও আগের মতোই রয়ে গেছে অব্যক্ত, নিঃশব্দ।

লেখক পরিচিতি: উজ্জ্বল হোসাইন, নির্বাহী সদস্য, চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়