মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩৩

স্মৃতিতে মাওলানা মোজাফফর স্যার

মো. জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়
স্মৃতিতে মাওলানা মোজাফফর স্যার

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে

আমি বাইবো না আর খেয়া তরী এই ঘাটে

তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে

তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে

তরুলতার মতই শাখা-প্রশাখা মেলে

থাকবো আমি সবার মাঝে

সেদিন ফেলে আসা স্মৃতিগুলোই কথা বলবে

প্রিয় পাঠক সত্যিই তাই, বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামেই আমার বেড়ে উঠা। বাবার সাথে প্রতি সপ্তাহে গ্রামে আসা-যাওয়া করতাম। আসা-যাওয়ার মধ্যে টামটা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় যাওয়া হতো। বাবা চাকরি জীবনের অবসরে যাওয়ার আগেই অষ্টম শ্রেণীতে টামটা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম, তার সুবাদে যখনই বাড়ি আসা হতো তখনই অন্যদের সাথে স্কুলে ক্লাস করতাম, এই ক্লাস করার মধ্য দিয়ে ছেলে বন্ধু হিসেবে পেয়েছি আনিস, কামাল, মানিক, তকদির, আলমগীর, মাহবুব, করিম, সুমন, জসিম, ফখরুল, ইমাম, ফয়েজ, আরিফ, আতিক, মিজান, মাসুদসহ অনেকেই এবং অন্যান্য স্কুলের অনেক সহপাঠীদের সঙ্গে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব।

বান সমতুল্য মেয়ে বন্ধুদের তালিকায় যারা সকল বন্ধুদের কাছে ছিল প্রিয় তারা হলো : সালমা, রেজিনা, লুৎফুন নাহার, হাসিনা, রেখা, উর্মি আক্তার বুলু (প্রয়াত), রেহানা, লুৎফুন নাহার লতা, উম্মে সালমাসহ অনেকেই সকলের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে ফেলে আসা স্কুলের স্মৃতিময় দিনগুলোতে। আজও তাদেরকে অনেক মিস করি। সেদিনের সময়গুলোকে যদিও আর ফিরে পাবো না, তবুও দোয়া করি সকলে বন্ধুদের জন্য। বন্ধু যেখানে থাকুক যেভাবেই থাকুক সম্প্রীতিময় ভালোবাসা থাকুক চির অটুট।

তবে হ্যাঁ বন্ধুদের কথাই তো বললাম এবার প্রিয় শিক্ষক, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক যার সাথে রয়েছে অসংখ্য স্মৃতি, পেয়েছি শিক্ষাজীবনে সহযোগিতা আমাদের পারিবারিকভাবে তিনি হলেন টামটা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, টামটা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী, আলোকিত মানুষদের মধ্যে অন্যতম প্রয়াত মাওলানা মোজাফফর হোসেন স্যার।

স্যারের সঙ্গে আমার প্রয়াত বাবা সরকারি কর্মকর্তা আব্দুল খালেক পাটোয়ারীর সঙ্গে পারিবারিক একই সখ্যতা ছিল সম্পর্ক ছিল যার মাধ্যমেই আমাদের পরিবারের আমার ভাই ও বোন সবাই স্কুলে লেখাপড়া করেছে সব শেষ আমি আমার ছোট ভাই ছোট বোন তারাও স্কুল থেকেই এসএসসি পাস করেছে।

আমরা পাঁচ ভাই, তিন বোন সংসারে আয়-রোজগারের মধ্যে ছিল শুধুই বাবার, অনেক সময় পড়ার খরচ চালাতে ,স্কুলের বেতন, পরীক্ষার ফি দিতে দেরি হতো, অনেক সময় দিতে কষ্ট হতো। হাসিমুখে মুজাফফর স্যারকে বলা হলে তিনি বলতেন অসুবিধা নাই তোমরা পড়ালেখা চালিয়ে যাও তোমার বাবা পাটোয়ারী সাহেব সময় করে দিয়ে দিবে এ নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না।

স্যারের আন্তরিক সহযোগিতায় আশেপাশের টামটা, কৃষ্ণপুর, ভাটুনিখোলা, কুলসী , শংকরপুর, শিবপুর থেকে শুরু করে এমন কোন গ্রাম নেই সেই গ্রামের সন্তানরা শিক্ষাক্ষেত্রে স্যারের আন্তরিক সহযোগিতা পায়নি। যখন যার আবদার ছিল তিনি চেষ্টা করেছেন স্কুলের পক্ষ থেকে ব্যক্তির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করতে।

কারণ এ গ্রামগুলোর বেশিরভাগ লোক ছিল কৃষক। কৃষিকাজ করেই সবার জীবন জীবিকা নির্বাহ করতেন। টামটা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে তাদের সন্তান পড়াশোনা করে আজ অনেকেই বড় অফিসার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি, বেসরকারি চাকরি করছেন,পুলিশ কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষিকা, প্রবাসে আছেন, ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন সেক্টরে অবদান রাখছেন।

মাওলানা মোজাফফর হোসেন স্যার সহ সকল শিক্ষকের অবদান রয়েছে শিক্ষা খাতে। প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ উল্ল্যা স্যার, মোশারফ হোসেন স্যার,খোকন স্যার, আতিক স্যার, অহিদ স্যার, নুরুজ্জামান স্যার, গোলাম রহমান স্যার, আবু সাঈদ স্যার, হুজুর স্যার, বর্তমান এইচএম বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ভাই।

স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে যারা খুব প্রিয় ছিলেন প্রয়োজনে তাদের মাধ্যমে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি আমরা শিক্ষার্থীরা খেলার মাঠ থেকে শুরু করে সকল জায়গায় তাদের মধ্যে রয়েছেন : জাহাঙ্গীর ভাই, আয়েশা আপা, সুলতান ভাই প্রমুখ।

সবশেষ যে ঘটনাটি ঘটেছে পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করতে হবে বাবা বাড়ি আসতে দেরি হচ্ছিল, ফরম ফিলাপের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছিল এসএসসি পরীক্ষার। তখন আমার মা মরহুমা ফিরোজা বেগম এবং আমি স্যারদের বাড়িতে যাই, স্যারের স্ত্রী চাচী আমাদের দেখে তাড়াতাড়ি বলতে লাগলেন কী ব্যাপার পাটোয়ারী ভাবি দেখি সাজ সকালে। কী হয়েছে? কোন সমস্যা? আম্মা বললেন না আপনার ভাই বাড়ি আসেনি তো তাই ফরম ফিলাপের আজকে শেষ দিন এটা বলতে এসেছি। ফরম ফিলাপের টাকাটা পরে দিয়ে যাবে।

চাচি আম্মা স্যারকে ঘুম থেকে উঠালেন বললেন দেখো পাটোয়ারী ভাইয়ের স্ত্রী এসেছে কৃষ্ণপুর থেকে, স্যার উঠে এসে বললেন কিরে জাহাঙ্গীর এত সকাল বেলা তাও আবার মাকে নিয়ে এসেছিস, তখন বললাম স্যার আজ তো ফরম ফিলাপের শেষ দিন আব্বা তো বাড়িতে আসেনি। স্যার হাসি দিয়ে বললেন এটার জন্যে অসুবিধা নাই, আমি দিয়ে দিব, মন দিয়ে পড়াশুনা কর ।বর্তমান আমার উকিল ভাই অ্যাডভোকেট শামসুল আলম পাটোয়ারী উনার ফরম ফিলাপের সময়ও আমি আর মা একসঙ্গে গিয়েছিলাম।

স্যার বললেন নাস্তা খেয়ে যাবে ,নাস্তা খাওয়া ছাড়া যাবে না চাচীও তাই বললেন ।শেষে আম্মা আর আমি নাস্তা খেয়ে বাড়ি চলে এলাম।

সংক্ষেপে লিখে স্যারের অবদান এবং স্মৃতির কথা শেষ করা যাবে না, ফুটবল খেলার মাঠ থেকে শুরু করে, সকল ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পেয়েছি স্যারের আন্তরিক সহযোগিতা। দেখলেই বলতেন পাটোয়ারীর ছেলে দিনকাল কেমন যাচ্ছে ভালো আছিস তো। দূর প্রবাসে আসার পরেও স্যারে খোঁজখবর নিতেন, আমিও প্রায় সময় ফোন দিয়ে কথা বলতাম , আমি দুটি পরিচয় নিয়ে চলতাম এক সাংস্কৃতিক কর্মী দুই গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে। আজও দেশ এবং প্রবাসে এই দুইটি পরিচয়ে আমি পরিচিত সকলেই আমার আমিও সবার ক্ষণিকের জীবনে পথ চলতে চাই সম্প্রীতিময় বন্ধনের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে চাই সকলের দোয়ায়।

সকলের সাথেই সামাজিক কর্মী হিসেবে আজও সম্পর্ক রয়েছে আগের মতই। শুধু নেই প্রিয় শিক্ষক মাওলানা মোজাফফর হোসেন স্যার স্মৃতির পাতায় উনি থেকে যাবেন ,ওনার অবদান কেউ অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

আসলেই আমরা অকৃতজ্ঞ মানুষ অনেক সময় অতীতকে মনে রাখি না ভুলে যাই আবার অনেকে অতীতকে মনে করেই এগিয়ে যায় চলার পথ মসৃণ হয় আসে সফলতা।

যারা অতীত মনে রাখে না মানুষের সহযোগিতার কথাগুলো মনে রাখে না, ভুলে যায় আমি আমরা গরিব ছিলাম এটা বলতে পারেনা বুক ফুলিয়ে তারা বেশিদূর এগোতে পারে না।

যাদের মধ্যে হিংসা, লোভ-লালসা, অহংকার কাজ করে তাদের ধ্বংস অনিবার্য।

আসুন আমার প্রয়াত বাবা প্রয়াত মা প্রয়াত শিক্ষক সহ যারা দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি মহান আল্লাহ তা’আলা যেন আমাদেরকে জান্নাতবাসি করেন আমিন।

আর যাদের পিতা-মাতা দুনিয়াতে বেঁচে আছেন তাদের খেদমত করার তৌফিক দান করুন আমাদের সকল সন্তানদের আমিন। ক্ষণিকের জীবনে মানুষের ভালোবাসা, মানুষের পাশে থাকা, মানুষের বিপদে এগিয়ে যাওয়া, বিবেক খরচ করে ভালো কাজের সঙ্গে থাকা এর চাইতে উত্তম কাজ আর কিছুই নেই। আল্লাহর রাসূল এর উম্মত হিসাবে আমাদের সবাইকে ভালো কাজের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ক্ষণিকের জীবনে মুসাফির হিসাবে আমরা সবাই খালি হাতে এসেছি, খালি হাতে ফিরে যেতে হবে কবর দেশে।

আসুন সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি, নিজে ভাল কাজ করি, অন্যকে ভালো কাজ করার পরামর্শ প্রদান করি, গুরুজনদের সম্মান করি ছোটদের স্নেহ করি সম্প্রীতিময় ভালোবাসা নিয়ে পথ চলি, আল্লাহ তাআলা আমাদের সেই তৌফিক দান করুন, হেদায়েত দান করুন আমিন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়