প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:১৪
লক্ষ্মীপুরে জনবল সংকটে বিএডিসির তিন প্রতিষ্ঠান, সেবাবঞ্চিত কৃষক

লক্ষ্মীপুরে চরম জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর তিন প্রতিষ্ঠান। কৃষকদের বীজ, সার ও সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই ভুগছেন চরম জনবল সংকটে। এর সাথে রয়েছে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে অনীহা, স্বেচ্ছাচারিতা ও সেবা প্রদানের নামে উৎকোচ গ্রহণের প্রবণতা। যার ফলে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা।
বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে বিএডিসির তিনটি প্রতিষ্ঠান বিএডিসি-সেচ, বীজ ও সার কাজ করে। বিএডিসি সেচ বিভাগে ১৩টি পদের মধ্যে ১১টি পদই শূন্য রয়েছে। ২ থেকে ২০ বছর ধরে উপ-সহকারী প্রকৌশলী, মেকানিক বা সহকারী মেকানিক, অফিস সহায়ক, গাড়ি চালক ও পিয়ন/দারোয়ানের পদ শূন্য রয়েছে। যার ফলে জনগণকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন এ দপ্তরের কর্মকর্তারা।
জনবল সংকটের অজুহাতে নিজেদের খনন করা খাল, চলমান কাজ ও কৃষকদের সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনেও যান না কর্মকর্তাগণ। সেচ সুবিধা প্রদান ও কৃষকদের ভাড়ায় শ্যালো মেশিন পাওয়ার ক্ষেত্রেও দপ্তরে আসতে হয় বার বার। অনেকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
রায়পুর থেকে বেনি আমিন ভুইয়া ও সদরের মজু চৌধুরীর ঘাট এলাকা থেকে মাইনুদ্দিন নামের দুই কৃষক বলেন, ‘ জেলা সদরে দুটি শ্যালো ম্যাশিন ভাড়া নিতে কয়েকদিন এসেছি। প্রথম দিন বলা হয়েছে, স্যার নেই, পরে আসেন। অফিস সহকারী বলেন, ভাড়া দেয়ার মত মেশিন নেই। এভাবে হয়রানি হলে কোথায় যাবো।’
খননকৃত খাল পরিদর্শন ও সেচ নালা পরিদর্শন না করার কারণ জানতে চাইলে বিএডিসি সেচ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুল্লা আল মামুন বলেন, যখন কাজ চলে তখন যাওয়া হয়। আবার সব জায়গায় নিয়মিত যাওয়া হয় না। লোকবলেরও সংকট রয়েছে। ঠিকাদারের কাজ ভাগাভাগির মাধ্যমে করার বিষয়টিও অস্বীকার করেন এই কর্মকর্তা।
এদিকে বিএডিসি সার বিভাগে একজনও স্টোর কিপার নেই। ৪শ’ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন গুদামে সরকারি বেতনভুক্ত কোনো কর্মচারী নেই। এই গুদাম থেকে ডিএপি, টিএসপি ও এমওপি তিন প্রকারের ৬ হাজার টনের বেশি সার বিক্রি হয়।
পিয়ন, নৈশপ্রহরী বা অন্যান্য কর্মচারী না থাকায় সেবা দিতে সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী বলেন, ‘আসলে অর্গানোগ্রামে কি আছে জানি না। বেসরকারি শ্রমিকরাই অনেক কাজে সহযোগিতা করছেন।’
বিএডিসি বীজ বিভাগের অবস্থাও একই রকম।কম্পিউটার অপারেটর মো. ইউসুফ একাই সামলাচ্ছেন পুরো অফিস। এই পদে সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় কেউ নেই।। এই দপ্তরের জেলা অফিসে ৮টি পদের মধ্যে সিনিয়র সহকারী পরিচালক, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা, স্টোর কিপার ও অফিস সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে। স্টোর কিপার নামে থাকলেও দায়িত্ব পালন করছেন সার বিভাগে। এতে নিয়মিত দাপ্তরিক কাজ ও কৃষকদের বীজসেবা দিতে বেগ পেতে হয় তাকে।
তিনি বলেন, ‘যখন ধান রোপণের মৌসুম আসে তখন অনেক চাপ থাকে। কখনও স্থানীয়ভাবে শ্রমিকের ব্যবস্থা করতে হয়, আবার কখনও নোয়াখালী অফিস থেকে কাউকে পাঠানো হয়। এভাবে কষ্ট করে অফিস চালাচ্ছি।’
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএডিসির প্রধান কার্যালয়ের সংস্থাপন বিভাগের সহকারী পরিচালক (নিয়োগ ও কল্যাণ বিভাগ) মো. লতিফুল হক বলেন, ‘একটা সময় বিএডিসির জনবল ছিলো প্রায় ৬ হাজার, পরে এটাকে ৫ হাজার করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতিও পাওয়া গেছে। কিন্তু জনবলের গ্রেডিং-কাঠামো নিয়ে মন্ত্রণালয়ে কিছু দাপ্তরিক কাজ প্রক্রিয়াধীন। এসব কাজ হলে আমরা নতুন জনবল নিয়োগ দিতে পারবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা বাংলাদেশেই বিএডিসির জনবল সংকট রয়েছে । বর্তমানে ২ হাজার ৭শ’ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে আমাদের। নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে, আমরা মাঠ পর্যায়ে জনবল পদায়ন করতে পারবো।’








