সোলার লাইট মেরামতে যখন ইসলামী আন্দোলন!

চাঁদপুর কণ্ঠের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মো. আবদুর রহমান গাজী গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে একটি নজরকাড়া রিপোর্ট করেছেন। এমন রিপোর্টের উপজীব্য আমাদের দেশে খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি লিখেছেন, চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচণ্ডী ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লা ও গ্রামীণ সড়কগুলোর পাশে স্থাপিত বহু সোলার লাইট দীর্ঘদিন ধরে অচল অবস্থায় পড়েছিলো। এসব সোলার লাইট রাতের বেলা আলো বিলাতে না পারায় পুরো এলাকাই অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকতো। এতে করে পথচারী, বিশেষ করে নারী ও ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। নিরাপত্তার অভাব, চুরি-ছিনতাইয়ের ঝুঁকি এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছিলো দিনের পর দিন। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তরপুরচণ্ডী ইউনিয়ন শাখা সম্প্রতি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নষ্ট সোলার লাইট মেরামতের। রোববার (২৫ মে ২০২৫) দিনব্যাপী ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করেন। তারা নিজস্ব উদ্যোগ ও অর্থায়নে নষ্ট লাইটগুলো খুলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যেগুলো মেরামতযোগ্য ছিলো তা ঠিক করেন এবং যেগুলো সম্পূর্ণ অকেজো সেগুলো রিপ্লেস করার ব্যবস্থা নেন।

সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল্লাহ বলেন, ঝড়-তুফান এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব সোলার লাইট বহুদিন ধরেই অচল হয়ে আছে। অনেকেই ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা সদর উপজেলা ভূমি অফিসে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি। আমাদের সংগঠন মনে করে, মানুষের নিরাপদ চলাচল ও জনসেবার জন্যে কাজ করাই ঈমানী দায়িত্ব। তাই আমরা মেরামতের কাজ হাতে নিয়েছি এবং ধাপে ধাপে পুরো ইউনিয়নজুড়ে এই কাজ চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও জানান, কোনোটির ব্যাটারী নষ্ট, কোনোটির লাইট-হোল্ডার বা সেল সিস্টেমে ত্রুটি, এসব আমরা পর্যায়ক্রমে শনাক্ত করে ঠিক করছি। কয়েকটি ক্ষেত্রে পুরাতন সোলার প্যানেল পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, এই লাইটগুলা ২-৩ বছর হতে বন্ধ। আমরা কতবার চেয়ারম্যানের অফিসে গেছি, কেউ কানেই তোলেনি। এখন ইসলামী আন্দোলনের ছেলেরা নিজেরা এই কাজ করছে, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। অন্যদিকে নারীদের পক্ষ থেকে হালিমা বেগম জানান, রাতে রাস্তা অন্ধকার থাকলে ভয় লাগে, বিশেষ করে মেয়েদের চলাচল অনেক কষ্টকর। এখন অন্তত কিছুটা আশার আলো দেখছি।

উল্লেখ্য, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শুধু রাজনৈতিক দল হিসেবেই নয়, সামাজিক ও মানবিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সময়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। করোনা মহামারী, বন্যা, শীতবস্ত্র বিতরণ কিংবা এলাকার উন্নয়ন সব ক্ষেত্রেই তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে আসছে।

আমরা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নয় কিংবা সমর্থন করার কারণে নয়, এটা অকপটে বলতেই হবে যে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তরপুরচণ্ডী ইউনিয়নে সরকারি সোলার লাইট মেরামত ও প্রতিস্থাপনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা বিরল ঘটনা। সারাদেশে কী করেছে সেটা জানি না, তবে চাঁদপুরে করোনাকালে ইসলামী আন্দোলনের সদ্য সাবেক জেলা আমীর মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে করোনায় প্রাণ হারানো মুসলমানদের লাশ দাফন, এমনকি খ্রিস্টান ও হিন্দুদের শেষকৃত্য সম্পাদনে ইসলামী আন্দোলন যে সহযোগিতা করেছে, সেটা অবিস্মরণীয়। এবার স্থানীয় সমস্যার সমাধানে জনস্বার্থে তরপুরচণ্ডী ইউনিয়নে যা করলো, সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ইসলামী আন্দোলন তাদের সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর গতানুগতিক চরিত্র পাল্টানোর ইঙ্গিত যে দিচ্ছে, সেটা অনুমান করা যায়। ভোটের রাজনীতি করা ও ক্ষমতায় যাওয়ার প্রত্যাশা ছাড়া আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর সামাজিক ও মানবিক কাজে অংশ নেয়ার চর্চা জনসমর্থন বাড়াবে, কোনোভাবেই কমাবে না বলে আমরা মনে করি।