শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে কচুক্ষেত থেকে কিশোরের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১৭

নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও, সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে : টিআই চেয়ারম্যান

অনলাইন ডেস্ক
নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও, সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে : টিআই চেয়ারম্যান

ঢাকা, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : বিশ্বব্যপী কর্তৃত্ববাদের উত্থানের স্রোতের বিপরীতে অভূতপূর্ব ত্যাগের বিনিময়ে কর্তৃত্ববাদের পতন ঘটিয়ে যে স্বপ্ন নিয়ে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে, সেই স্বপ্নপূরণের জন্য সংস্কারের ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখা জরুরি। কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পরও দুর্নীতি বিদ্যমান আছে; তাই এর বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। ঢাকায় তার প্রথম সফরের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সাথে 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ারম্যান ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং আউটরিচ ও কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

আলোচনার শুরুতে ভ্যালেরিয়াঁ গণমাধ্যমের সঙ্গে তার ঢাকা সফরের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। তিনি বলেন, ‘যদি প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার না হতো, তাহলে বাংলাদেশের জিডিপি আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ ছিলো। এ সময় তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াইয়ের জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা, নাগরিকদের জন্য মতপ্রকাশের উন্মুক্ত পরিসর এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘গতবছর এদেশে যে পরিবর্তন ঘটেছে তা প্রশংসনীয়; এর প্রেক্ষিতে যে সংস্কার শুরু হয়েছে, তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কারের পাশাপাশি ক্ষমতা প্রয়োগের প্রতিটি স্তরেও কীভাবে জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা যায়, সে বিষয়েও ধারাবাহিক প্রচেষ্টা থাকা জরুরি।’

অন্তর্বতীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি সরকারও তা জানে এবং আন্তরিকভাবে সবকিছু সমাধানের চেষ্টা করছে। কর্তৃত্ববাদের পতনের পরপরই দুর্নীতি গায়েব হয়ে যায় নি। তবে এরপর যে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং কিছু বাস্তবায়নের চেষ্টাও চলছে, তা অব্যাহত রাখা ও টেকসই করা গুরুত্বপূর্ণ।’

বৈশ্বিকভাবে দুর্নীতির বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী শাসনের সময় বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। বিভিন্ন স্তরের ক্ষমতাশালীরা এই অর্থ পাচারে জড়িত ছিল; এই অর্থ পাচার ‘‘দুর্নীতির বৈশ্বিক অর্থনীতি’’ বেগবান করেছে। এভাবেই বিশ্বব্যাপী বছরে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার চুরি হয় এবং উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পাচার হয়ে যায়। দুর্নীতির এই অর্থনীতি প্রকৃতপক্ষে অর্থের মূলমান নষ্ট করেছে। যে অর্থ জনস্বার্থে ব্যয়ের মাধ্যমে সামষ্টিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল্য তৈরি করতে পারত, তা অর্থহীন, অনুপার্জিত ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। যদি এ অর্থ চুরি না হতো, তাহলে বাংলাদেশের জিডিপি আরও বেশি হতো এবং তা ন্যায়সঙ্গতভাবে জনকল্যাণে ব্যবহার করা যেতো। এ অর্থ দারিদ্র্য হ্রাসেও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হতো।’

অর্থপাচার ঠেকাতে নাগরিক সমাজকে আরও সক্রিয় থাকতে হবে জানিয়ে টিআই চেয়ারম্যান বলেন, ‘যারা অর্থলুটের সঙ্গে জড়িত, তারা নানামুখী আইনি দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সুরক্ষার বলয়ে লুকিয়ে আছে। প্রতিটি দেশে কারা এই আইনি সুরক্ষার পেছনে কাজ করছে তা আমাদের জানতে হবে; যাতে অর্থ প্রত্যার্পণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় হতে পারে। তবে এটি তখনই সম্ভব হবে, যখন পাচারকৃত অর্থের গন্তব্য জেনে সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিক সমাজ তা ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট চাপ তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি যে দেশগুলোতে অর্থ পাচার হচ্ছে, সেখানেও পাচার হয়ে আসা অর্থ ফেরত পাঠানোর যথোপযুক্ত ব্যবস্থা ও পারস্পরিক সহযোগিতা থাকতে হবে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ভ্যালেরিয়াঁ বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় টিআইবি সবসময় ক্ষমতাবানদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছে। সব সরকারের সময়েই টিআইবি সরকারের ভুল-ত্রুটি তুলে ধরেছে, সমালোচনা করেছে। তাই টিআইবি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো সরকারই ক্ষমতায় এসে টিআইবির সমালোচনা থেকে বিরত থাকেনি। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পর যে সরকার আসবে, টিআইবির ওয়াচডগ ভূমিকার কারণে তারাও অস্বস্তিতে পড়তে পারে।’

ভ্যালেরিয়াঁর বক্তব্য সমর্থন করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের শাসনামলে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে যে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে এটা আংশিক; প্রকৃত অর্থপাচারের পরিমাণ আরো বেশি। কর্তৃত্ববাদের ছত্রচ্ছায়ায় দেশে শেকড় গেড়ে বসা বৈষম্যের মূল কারণই ছিল দুর্নীতি। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করা হয়েছিল এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি সহায়ক করে তোলা হয়েছিল। গত ১৫ বছরে দেশে বাৎসরিক যত বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে তার সাথে বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার অর্থ যোগ করে মোট যে পরিমাণ হয় তার দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার হয়েছে। এই অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে দুইটি বিষয়ে জোর দিতে হবে। প্রথমত, অর্থপাচার রোধের উপায় এবং দ্বিতীয়ত, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার উপায়। টিআইবি মনে করে বাংলাদেশ থেকে যাতে কোনোভাবেই অর্থপাচার সম্ভব না হয়, তা নিশ্চিত করার ওপরই প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি ও অত্যন্ত জটিল যে কারণে বৈশি^ক হিসাবে গড়ে পাচারকৃত অর্থের মাত্র এক শতাংশ ফেরত পাওয়া যায়। পাচারের সকল সুযোগ বন্ধ করতে পারাটাই বেশি কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা সাপেক্ষে তা অধিকতর বাস্তবসম্মত।’

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়