প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৫, ১০:০৪
জেলা প্রশাসক এসএম শামসুল আলম হতে মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন
সাহিত্য একাডেমি পরিক্রমা

সাহিত্য হচ্ছে সভ্যতা বিকাশের এক অনিন্দ্যরূপ। এই রূপের ঝলমলে চাঁদপুরের জ্ঞানী-গুণীজন নিজেদের বিকশিত-আলোকিত করতে সাহিত্যচর্চার আড্ডায় মশগুল হন। আড্ডা মানে একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্বাধীনভাবে আশ্রয় খোঁজা। যেখানে সমবেত হয় সব ধরনের সাহিত্যের নির্যাস খোঁজা কলম চাষারু।
১৯৮৬ সালের চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক এসএম শামসুল আলম ও তাঁর সহধর্মিণী ছিলেন সাহিত্যপ্রিয়াসী। বিশেষ করে সহধর্মিণীর সাহিত্য ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশে বাংলাদেশে প্রথম ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং দ্বিতীয় চাঁদপুরে সরকারি আবহে সাহিত্য একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়।
চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমি প্রতিষ্ঠায় যুক্ত হন তৎকালীন কবি, লেখক, সাংবাদিক, সুধীজন ধনাঢ্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিশেষ। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অবকাঠামো হতে একটি শৃঙ্খল গঠনতন্ত্রে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে স্থায়ী সভাপতি নির্ধারণে পরিচালিত হয় সাহিত্য একাডেমি, চাঁদপুর। সেই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ চল্লিশ বছর সাহিত্যকর্ম পরিচালিত হয়ে আসছে।দীর্ঘ পরিক্রমার হিসেব-নিকেশ কষে সময়ের কলম সুশীলসমাজ গণতান্ত্রিক ধারায় সাহিত্য একাডেমি পরিচালনার তাগিদ অনুভব করেন। যার ফলে ২০২৪ সালে নির্বাচনী কলি ফোটে। অনুভবের-অনুভূতিতে বাস্তবতায় এবারেই প্রথম জেলা প্রশাসক মহোদয় একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান করে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমি কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন-২০২৫ ঘোষণা করেন। একঝাঁক প্রবীণ-নবীন দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন সাহিত্যকর্মের আসন পেতে। শুরু হয় সশরীরে, প্রযুক্তিতে প্রার্থিতা জানান দেওয়া। চাঁদপুর সাহিত্য মহল ভোটের কদরে সরগরম হয়ে উঠে। আমিও কাক্সিক্ষত ‘নির্বাহী সদস্য’ পদে ভোটের মাঠে চষে বেড়াই নবীন-প্রবীণ, চেনা-অজানা কলম অনুরাগীদের সান্নিধ্যে। গতানুগতিক নির্বাচনের চেয়ে স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক ধারায় নির্বাচনের আমেজ প্রত্যক্ষ উপভোগ করেন চাঁদপুরের সুধীমহল। চাঁদপুরের বাহিরেও সাহিত্যপাড়ার আড্ডায় চলে আসে নির্বাচনের আমেজ। ঢাকায়ও চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ। পক্ষ-বিপক্ষ প্রার্থী হিসেবে আমিও দারুণ উপভোগ করি। সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে শুরু হয় অতীতের রিক্ত-তিত্ত আনন্দ ভালোবাসা ক্ষোভঝড়া মন্তব্যের কারিশমা।
কথার ফুলঝুড়ি থাকলেই জনপ্রতিনিধিত্বের শীর্ষে পৌঁছা যায় না। কনিষ্ঠ সদস্য সাদ আল-আমিন প্রায়শই বলেÑভালো লেখক হলেই ভালো মানুষ বলা যায় না। বেশি পরিচিতির সাথে বেশি ভালোবাসার অর্থ বহন করে না। ভালোবাসা একটি নির্মোহ শব্দ। এটা হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করে নেতৃত্বের স্বপ্ন দেখাও গণতান্ত্রিক আচরণের বৈশিষ্ট্য।
সম্মানিত সদস্যগণ সচেতন হওয়ায় ভোটসীল অনুকূলে আনার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা প্রার্থীদের। অন্যদিকে ভোটারদেরও বেগ পেতে হচ্ছে দীর্ঘ পরিচিত অন্তরঙ্গ আড্ডার বন্ধু কাকে রেখে কাকে মূল্যবান ভোট দিবেÑএই হিসেব-নিকেষটা ছিল বড্ড জটিল সমীকরণ। কারণ সবাই ছিলেন যোগ্যতার মানদণ্ডের প্রার্থী। আমার সাথে ‘নির্বাহী সদস্য ‘সতেরজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সবার সাথে রয়েছে আমার চমৎকার সম্পর্ক। আমি এবং সুমন কুমার দত্ত নির্বাচনের প্রারম্ভিক হতে শেষ অবধি সকল কার্যক্রম মিলেমিশে করি। একই পদে (নির্বাহী সদস্য) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সার্বক্ষণিক যৌথ প্রচারণায় ভোটের ফলাফলে আমি মোখলেছুর রহমান ভূঁইয়া ৭৪, সুমন কুমার দত্ত ৭২ ভোট পাই। আমাদের বন্ধন যেমন অটুট রয়েছে, তেমনি ডিসি মহোদয় সৌহার্দ্য সম্প্রীতির যে বার্তা দিয়েছেন তা দৃষ্টান্ত হিসেবে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছি। চেষ্টা করেছি সবার সাথে ভালো সম্পর্কের যোগাযোগ করার। অন্ত পীড়ায় ভুগছি, অনিচ্ছায় যাদের সাথে দেখা ও কথা বলতে না পারায়।
আমার জন্য নির্বাচনটি ছিল একটু চ্যালেঞ্জিং। অনাকাক্সিক্ষত বৈরী বার্তায় কিছুটা সময় থমকে যাই। সাহিত্য সুহৃদের অমিত ভালোবাসায় বলীয়ান হয়ে ভোটের মাঠের মেঠোপথ জলপথ ইট-পাথরের সিঁড়ি ডিঙিয়ে ছুটে চলেছি। এই ছুটে চলায়, পিছনে ফেলে আসা জীবনাচরণের যোগফলের প্রাপ্তিতে আমি সত্যি অভিভূত। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু অধ্যাপক ইসমাইল হোসেন তরপদার (কাঞ্চন) স্যার, অধ্যাপক রুহুল আমিন স্যারদের পরম মমতায় ভাঁজ করে রাখা যে স্নেহাশিস দিয়েছেন ভাষায় প্রকাশ করা আমার পক্ষে দুরূহ। নির্বাচনী বৈতরণিতে বিরাজমান ছিল গুরুজনদ্বয়ের আশীর্বাদ। সহযোগী অধ্যাপক সাইদুজ্জামান ও শরীফ মোহাম্মদ চিশতির অকুণ্ঠ সমর্থন সচেতন ভোটের ফালে হাওয়া লেগেছে।
বেশি পরিচিত মানে বেশি ভোট নয়। নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা, কর্ম, পারিবারিক, সামাজিক অবস্থান একীভূত করে একটি সুক্ষ্ম সমীকরণ বের করেন সচেতন ভোটরগণ।
চাঁদপুরের সাহিত্য ও সামাজিক পরিমণ্ডলে কাজী শাহাদাত এক বিদগ্ধজন। অতীতকে স্মরণ করেন কথোপকথনে, চোখের মায়াতে, হৃদয়ের আয়নাতে, কলমের কালিতে। হৃদয় নিংড়ানো স্মৃতিতে স্মরণ করেন আমার প্রয়াত পিতা মরহুম উমেদ আলী ভূঁইয়াকে। নব্বইয়ের দশকে চাঁদপুর সরকারি কলেজের সামনে থাকা প্রেসের একজন কাস্টমার হিসেবে পরিচয়। আমার চাঁদপুর কণ্ঠে লেখালেখির হাতেখড়ি। বাবা সন্তানের মিশেল বন্ধনে একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কাজী শাহাদাত আপন করে নেন আমাকে। প্রকাশ্যে তাঁর পরিচিতজনদের কাছে আমার লেখালেখি ও পারিপার্শ্বিকতার অবস্থান তুলে ধরায় বিশেষ করে সিনিয়র ভোটাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হই।
চাঁদপুরের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকা ভোটের মাঠে আমার সাথে যোগ দেন আমার প্রয়াত পিতা। নজরুল ইসলাম স্বপনের সাথে আমার বাবার সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। নজরুল ইসলাম স্বপন কাকা প্রকাশ্যে বলেন মোখলেছ আমার ভাতিজা। ভাতিজার পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়ান এবং আমাকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেন। এতে আমার ভিত আরো মজবুত হয়। মাহবুব আনোয়ার বাবলু, গিয়াসউদ্দিন মিলন, সুভাষ চন্দ্র রায় দের মত সিনিয়ররা ব্যবসায়িক এবং বাবার সম্পর্ককে এমনভাবে তুলে ধরেছেন, যা আমার ভোটব্যাংক সুসংহত হতে থাকে।
ভোটের মাঠে টান টান আবেগ, উরু কথা, কখনো হাসি, কখনো ক্লান্ত পথিকের ন্যায় জিমিয়ে যাই। জিমিয়ে থাকা মন উজ্জীবিত হয়ে যায় আরিফুল ইসলাম শান্ত, কামরুজ্জামান, উজ্জ্বল হোসাইন, আবু বকর বিন ফারুক, আহনাফ আবদুল কাদির, শাদমান শরীফ, ইয়াছিন দেওয়ান, ইমরান নাহিদ, রিয়াজ বেপারী, মাইনুল তোহা, আসাদুল্লাহ কাহাফ, দেওয়ান মাসুদুর রহমান, বাঁধন চন্দ্র শীল, সৌরভ সালেকীন, রোজিনা হাবিবদের সাথে ফোনালাপে মনোবল চাঙা করে দিয়ে বিজয়ীর বার্তা দেয় অন্তরাত্মা। বিজয় নিশান আরও কাছে এগিয়ে দেন আ ত ম আ. মতিন মোল্লা, ফতেহ উল বারী রাজা, খান-ই-আজম, শ্যামাপদ ঘোষ ভুলু, স্বপন ভঞ্জ, শামীম আহমেদ খান, অজয় কুমার ভৌমিক, রফিক আহম্মেদ মিন্টু, তপন সরকার, লিটন ভুঁইয়া, সোহেল রুশদী, শহীদ পাটোয়ারী, এসএম জয়নাল আবেদীনের মত সাহিত্য অনুরাগীদের ভালোবাসার কণ্ঠমিশেল শারীরিক ভাষায় আরো শক্ত মনোবলে বিচরণ করি শান্তি-সাহিত্য শহরের অলিগলি। বেশির ভাগ সদস্যদের জানাশোনা থাকা সত্ত্বেও সরাসরি মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে নিজেকে ভোটারদের হৃদয়ে এবং চোখ আয়নায় থাকার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা করি প্রতিনিয়ত। একাধিক ফোনালাপে বেশির ভাগ সদস্য ছিলেন প্রাণবন্ত। সদা হাস্যোজ্জ্বল মাহমুদ হাসান খান (নানাভাই) ছিলেন টপ প্রাণবন্ত। জসীম মেহেদী, এমআর ইসলাম বাবু, জহির উদ্দিন বাবর, আউয়াল হোসেন পাটোয়ারীর মিষ্টিমাখা হাসিতে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের সাথেও আমি একাধিক সাক্ষাৎ মোবাইলে যোগাযোগ করি। আমার ও সুমন কুমার দত্তের দৈত্য নির্বাচনী জনসংযোগে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্য প্রতিযোগীরাও শরীর এদিকে-ওদিক করেন।
৩১ মে যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সাহিত্য জননেষুদের দোরগোড়ায় আমি। রোদ-বৃষ্টি কিছুই আমাকে আটকে রাখতে পারে না। রেকর্ড বৃষ্টিতে যখন হাজির ভোটারদের আঙ্গিনায় তাঁদের মন থেকে দিয়েছেন অঝোর ধারায় আশীর্বাদ। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি আবদুল্লাহ হিল কাফি, কাদের পলাশ, মাইনুল ইসলাম মানিক, আশিক বিন রহিম, ম. নূরে আলম পাটোয়ারীর উৎসাহ পরামর্শে জয়ের পাল্লা রশদে হয় ভরপুর। মধুর উৎসাহ-উদ্দীপনায় এইচএম জাকির ছিল আমার জয়ের বিশ্লেষক। একাধিকবার সর্বোচ্চ ভোটের আগাম বার্তা দিয়েছেন। যতবার বলছে, ততোধিক বেশি করে ভোটারদের সাথে সেতুবন্ধন করতে সচেষ্ট হয়েছি। কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ রেখেছে এইচএম জাকির। চট্টগ্রাম থেকে কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকা থেকে ইকবাল পারভেজ, মুহাম্মদ সালাউদ্দীন, ’সঞ্জয় দেওয়ান এসে স্বস্তি বয়ে দিয়েছেন। তাঁরা ছিলেন আমার নির্ভরতা।
চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির নির্বাচন ছিল একটি মাইলফলক। আমার প্রতি যে অকুণ্ঠ ভালোবাসা দেখিয়েছেন সম্মানিত সাহিত্য সারথিরা এবং লেখাকালীন যাদের নাম এই মুহূর্তে স্মরণে আসছে না সকলের প্রতি সবিনয়ে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ভালোবাসা দিয়ে এবং নিয়ে আপনাদের মণিকোঠায় থাকতে চাই। থাকতে চাই কলমের কালিতে।
নির্বাচনে ভোটার ছাড়াও অ্যাড. আবুল কালাম সরকার, অ্যাড. শেখ মুহাম্মদ হাছিব এবং আমার পরিবার। বিশেষ করে সহধর্মিণী ফরিদা ইয়াছমিন পান্না ছিল উদ্দীপকের অন্তরালে।
ভোটের দিন হাজির স্বয়ং আমার প্রয়াত দাদা আলহাজ্ব সৈয়দ আলী ভূঁইয়া। কুশল বিনিময়কালীন এমএ মাসুদ ভূঁইয়া সাহেব আমার দাদা ও বাবাকে আমাদের তিন পুরুষদের প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। এই কথোপকথনের প্রাপ্তি ছিল আমার নির্বাচনী প্রচারের ‘টপ অপ দ্যা গোল্ডেন হিস্টরি’।
স্মরণীয় টপ অপ দ্যা হিস্টরি আমায় উপহার দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। উল্লেখযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়ায় প্রশাসন প্রধানের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। ব্যক্তি আক্রোশের খেদোক্তি প্রকাশ করেও জেলা প্রশাসক অবিচল ছিলেন সাহিত্যের চারণভূমিতে জয়ধ্বনি ফোটাতে। অবশেষে ফুটে মধুমাসে নির্বাচনী ফুল। যা দেখল চাঁদপুরবাসী। হাসলো গণতান্ত্রিক সাহিত্যাঙ্গন। প্রথম যে ফুল ফুটিয়েছেন এসএম শামসুল আলম ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে। সাহিত্য একাডেমির দ্বিতীয় অধ্যায়ে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ নতুন ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক ধারার শুভসূচনা হয়। ইতিহাসের পাতা ছিঁড়ে ফেলে দিলেও ইতিহাস ইতিহাস হয়ে থাকে, থাকবে। চাঁদপুরের কলমখচিত ইতিহাসের সাথে সাথে স্মরণীয়-বরণীয় অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন সুদৃঢ় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
মোখলেছুর রহমান ভূঁইয়া : নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী সদস্য, সাহিত্য একাডেমি, চাঁদপুর।