প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৫, ১২:২৭
মুসকান নূরের পথচলা

ছোটবেলা থেকেই শখের বসে রান্না করে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করতেন। কে জানতো এটিই তার উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠবে। তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে নিজেকে বদলে ফেলার এক অন্যতম মাধ্যম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। অনেক তরুণ-তরুণী অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন উদ্যোক্তা। নিজে স্বাবলম্বী হয়ে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। নিজ ও পরিবারের আর্থিক চাহিদা পূরণ করে সঞ্চয় করছেন, বাড়িয়েছেন ব্যবসার পরিধিও। ক্ষুদ্র উদ্যোগকে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। জীবন-সংগ্রামের এই গল্পটা চঁাদপুরের হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার মুসকান নূরের। বলা চলে লড়াকু এক যোদ্ধা। যিনি নানা ঘাত-প্রতিঘাত জয় করেছেন, সমাজের বাধা-বিপত্তি ঠেলে জয়ের মশাল জ্বালিয়েছেন। নিজে সফল হওয়ার পাশাপাশি স্বপ্ন দেখেন উদ্যোক্তা তৈরির। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তা তৈরির। এতেও সফল তিনি। বলা যায় নারী উদ্যোক্তা তৈরির ‘উদ্যোক্তা’ এই মুসকান নূর। ২০১৯ সালে “লেডিস স্মাইল” নামে ফেসবুক গ্রুপ খুলে ভাগ্য খুলেছেন শত শত নারীর।
দুই সন্তানের জননী মুসকান নূর। জন্ম ও শশুরবাড়ি সূত্রে তিনি একই পৌর এলাকার বাসিন্দা। হাজীগঞ্জ পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও হাজীগঞ্জ মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে উচ্চতর পড়াশোনার জন্যে চলে যান ঢাকায়। মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া কলেজে বিবিএ অনার্স ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়ে যায় তার। বিয়ের পর যখন ঘরবন্দী হয়ে পড়েন তখনই তার মাথায় ভিড় করে ভিন্ন চিন্তা। সরকারি চাকরির পেছনে অন্যদের মতো না ছুটে নিজে কিছু করবেন এই ভাবনা ছিল মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়া মুসকানের। তিনি স্কুল জীবনে থাকতেই একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন সবসময়। ঘরে বসে কিছু করার চিন্তা নিয়ে ২০১৯ সালে অন্তঃসত্ত্বাকালীন ফেসবুকে “লেডিস স্মাইল” নামে একটা গ্রুপ খুলেন তিনি। সেই গ্রুপে এখন ২২ হাজারের বেশি সদস্য। নারী উদ্যোক্তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতার পাশাপাশি তিনি নিজেও দেশীয় শাড়ি, পাঞ্জাবি ও জুয়েলারি ব্যবসা চালু করেন। করোনাকালীন অনলাইন ব্যবসায় কিছুটা সংযত থাকলেও পরবর্তীতে ডাবের পুডিং, হোম মেইড কেক, আচার সহ বিভিন্ন খাবারের কাজ শিখে শুরু করে দেন এগুলোর ব্যবসাও। মোটামুটি ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়ে ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর চিন্তা মাথায় আসে এই নারী উদ্যোক্তার। তবে যেই ভাবা সেই কাজ। এবারের পরিকল্পনায় ছিল একটু ভিন্নতা। অনলাইনের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক কিছু করার চিন্তা। নয় বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে উপরোক্ত সকল ব্যবসার মধ্যে রেস্টুরেন্ট ব্যবসাটাই উত্তম মনে করে ২০২৩ সালে হাজীগঞ্জ পৌর বাস টার্নিমাল এলাকায় চালু করেন “টেস্টি বাইট রেস্টুরেন্ট এন্ড পার্টি সেন্টার” নামে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসা। এখানেও ব্যাপক সাড়া পান এই নারী উদ্যোক্তা। চলতি বছরে চালু করেন টেস্টি বাইট ০.২ নামে আরেকটি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এন্ড পার্টি সেন্টার। এছাড়াও শীতের সিজনে খেজুরের রস সহ বিভিন্ন সিজনাল খাবার পাওয়া যায় তার কাছে।
নিজের উদ্যোগের বিষয়ে মুসকান নূর বলেন, ‘সমাজের অনেক নারীই উদ্যোক্তা হতে চান, কিন্তু উদ্যোগ থাকলেও সুযোগ হচ্ছে না। আমি তাদের উদ্যোগকে ছড়িয়ে দিতে চাই। এ কারণেই আমার স্বপ্ন নারী উদ্যোক্তা তৈরি করা, যারা সফল হয়ে অবদান রাখবেন দেশের অর্থনীতিতে। পাশাপাশি নিজেও হবো একজন সফল উদ্যোক্তা। বর্তমানে বেকারত্ব বেড়েই চলছে। তবে আমি কিছুটা সফলও হয়েছি। আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেক নারীর আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটাই আমার কাছে চরম পাওয়া।’ উদ্যোক্তা তৈরির স্বপ্ন দেখা এ নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘একজন নারী উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি অন্য নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর পরিসরে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। অনেক নারী আছেন যারা কোনো একটি পণ্য ভালো তৈরি করতে পারেন। সেটা নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নও দেখেন। এমন ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়ে নারীদেরকেও সহযোগিতা করার চেষ্টা করে থাকি। এছাড়াও বিভিন্ন হাতের কাজ শেখা সহ মার্কেটিং এর উপরও প্রশিক্ষণ নিয়েছি।’
পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের উৎসাহ পেলে এগিয়ে যাওয়া এই নারী উদ্যোক্তা আগামীতে আরো প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্ন দেখেন। মুসকান নূর বলেন, নিজের পরিচয় খুঁজেছি। সবসময় চেয়েছি নিজের একটি পরিচয় গড়ে তোলার। পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করার চিন্তা থেকে আমি অন্য ব্যবসার সাথে খাবারের ব্যবসা শুরু করি। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কথা চিন্তা করে কম দামে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বিক্রি করি। আমার তৈরি করা বিভিন্ন ফাস্ট ফুড ও বেকারি আইটেমের চাহিদা বেশি। সে থেকেই এই রেস্টুরেন্ট ও ফাস্ট ফুড ব্যবসাটি প্রাতিষ্ঠানিক হিসেবে নিয়েছি।’ শালীনতা বজায় রেখে মায়ের কাছ থেকে নেয়া ১ লক্ষ টাকা দিয়ে শুরু করা অনলাইন ব্যবসার পর ঋণ নিয়ে শুরু করা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায় মুসকানের এখন পুঁজি প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। প্রবাসী স্বামীর উৎসাহে দুই সন্তান ও সংসার সামলে সফল এই নারী উদ্যোক্তার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসাগুলোতে এখন কাজ করছেন ১৫ জন তরুণ-যুবক। বেকার না থেকে তারাও এখন নিজের পরিচয়ে জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন স্বাচ্ছন্দে। মুসকান নূর বলেন, স্বামী ব্যতিত তেমন কারো কোন সাপোর্ট না পেয়ে এতটুকু এসেছি। তবে বাহিরের কিছু মানুষ আমাকে ব্যাপক অপমান করার চেষ্টা করেছে। তাদের বিষয়ে কর্ণপাত না করে আমি আমার জায়গায় অটুট ছিলাম। সে থেকেই আমি নিজে সফল হয়েছি, তেমনি অন্য নারীদেরও সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিতে চেষ্টা চালাচ্ছি। অলরেডি প্রায় শতাধিক নারী এখন সফলতার সাথে কাজ করছেন। এমনকি আমার আত্মীয়স্বজনও অনেকে কাজ খুঁজছেন আমার কাছে। এর চেয়ে আর সফলতা কি হতে পারে। সবই সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত বলে মনে করি আমি। বেকারত্ব দূরীকরণে আগামীতে আরো শাখা-প্রশাখা চালু করার চিন্তা নিয়েই মুসকান নূরের পথচলা।
ছবি : ২৯
যে কারণে প্রতিদিনই বই পড়া উচিত
আপনার কি মনে আছে সর্বশেষ আপনি কবে একটি বই পড়ার জন্য হাতে তুলে নিয়েছেন? যদি না থাকে, তাহলে এখনই সময় সুস্থ থাকতে চাইলে একটি বই হাতে তুলে নিন। আর হ্যঁা, বই পড়া আপনাকে মানসকিভাবে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে। অজানা বিশ্বকে জানার পাশাপাশি বই আপনার মনোযোগের উন্নতিতে এবং ঘুমেও সহায়ক হবে। জানতে চান কীভাবে? তাহলে পড়ুনৃ
মানসিক উদ্দীপনা : ড্রিম থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও জিগি জর্জ অনুভব করেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি একটি বই পড়েন, তিনি যেহেতু সেটিকে চোখের সামনে ভিডিও কন্টেন্ট এর রূপে গড়ে উঠতে দেখেন না, তখন তার মনের ভেতর নানা ধরনের কল্পনা তৈরি হয়। এটি মনকে অনেক উম্মুক্ত করে।” অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিতভাবে বই পড়লে আলঝেইমার বা ডিমেনিশয়া রোগের ঝুঁকি কমে আসে।
শব্দভাণ্ডার উন্নত হয় : আমাদের উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হয়ত শুধু ক্ল্যাসিকগুলোকেই সত্যিকার সাহিত্য হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। যেগুলো পড়ে শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করা যায়। কিন্তু যখন পড়ার কথা আসে তখন বলতে হবে এমন কিছু বই রয়েছে যেগুলো আপনাকে নতুন নতুন শব্দ শিখতে সহায়তা করবে। সংক্ষেপে, পড়ুন, পড়ুন এবং পড়ুন। একটি সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডার আপনাকে শুধু পেশাগত উন্নতিতেই নয় বরং আত্মসম্মানবোধ গড়ে তুলতেও সহায়তা করবে।
মানসিক অবসাদ দূর করতে সহায়ক : বই আপনাকে বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ভিন্ন একটি জগতে নিয়ে যাবে। কর্মস্থলে একটি বাজে দিন কাটানোর পর বই আপনার জন্য উচ্চ আরামদায়ক হতে পারে। অথবা আপনি যদি এমন কোনো ব্যক্তিগত ইস্যুতে সংগ্রামরত থাকেন যা আপনাকে রেহাই দিচ্ছে না তখনও বই আপনার জন্য বেশ স্বস্তিদায়ক হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, নীরবে ছয় মিনিটের জন্য বই পড়লে আপনার হৃৎকম্পনের গতি ধীর হয়ে আসবে এবং টেনশন দূর হবে।
উন্নততর মনোযোগ : আপনার সাধারণ একটি কর্মব্যস্ত দিন সম্পর্কে ভাবুন। এমন একটি দিনের বেশির ভাগ সময়ই আপনি কাজ সংশ্লিষ্ট ই-মেইল ঘঁাটাঘঁাটি করেন, সামাজিক গণমাধ্যম পেইজগুলো চেক করেন, গৃহস্থালির টুকিটাকি কাজ এবং অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। এর ফলে আমাদের উৎপাদনশীলতা এবং একই সময়ে মাত্র একটি বিষয়ে মনোযোগদানের সক্ষমতা কমে আসে। কিন্তু আপনি যখন বই পড়ায় ডুবে যেতে পারবেন তখন এই পরিস্থিতি বদলে যাবে। আপনি আপনার চারপাশের ঘটনাঘটন সম্পরর্কে ভুলে যাবেন এবং আপনার সব মনোযোগ একটি মাত্র গল্পে ঢেলে দিতে পারবেন।
বই আপনাকে ভালোভাবে ঘুমাতে সহায়তা করবে : আপনার বিছানায় যাওয়ার রুটিনে বই পড়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে সর্বশেষ কাজ হিসেবে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে আপনি আপনার ঘুমানোর পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন। সূত্র : টাইমস অফ ইন্ডিয়া