প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫, ০৯:২৫
পাঠক ফোরামের কবিতা

আবদুর রাজ্জাক শূন্যতার অনুবাদ
তুমি গেলে নাÑ
তুমি ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হলে
আমার চেতনার ব্যাকরণ থেকে
ঠিক যেভাবে কোনো ভাষা
ভুলে যায় নিজের উৎপত্তি।
তোমাকে আর ডাকি না নামে,
কারণ ‘তুমি’ নিজেই এক মিথ
যার মানে প্রতিবার বদলে যায়
আমার অভ্যন্তরের ঋতুচক্রে।
আমি জানি
তুমি ছিলে না কোনো মানুষ
ছিলে সময়ের এক ছায়া,
যার নিচে দাঁড়িয়ে আমি উপলব্ধি করতাম
জীবনের প্রতিটি ফাঁকা গহ্বর।
তুমি ছিলে আমার অন্তর্জগতে
লেখা এক কবিতা,
যার শব্দগুলো
আমি নিজেই বুঝি না আজ;
তোমার স্পর্শ ছিল না স্পর্শ,
ছিল মহাবিশ্বের অভিকর্ষের মতোÑ
অদৃশ্য, অথচ অবিচল।
আমরা একে অপরকে ভালোবাসিনি,
আমরা ছিলাম দুই বিপরীত মেরুÑ
যারা একে অপরের অস্তিত্বে ব্যাখ্যা পেতো,
ঠিক যেভাবে শূন্য ব্যাখ্যা দেয় অসীমকে।
তুমি এখনো আছো,
তবে শরীরের বাইরে, চিন্তার ভেতরে,
নির্বাক এক অনুরণন হয়েÑ
যেখানে প্রেম আর মানুষে ফারাক থাকে না,
থাকে কেবল অর্থহীন অথচ অপরিহার্য উপস্থিতি।
আমি আর প্রেম করি না,
আমি এখন প্রেম হয়ে আছিÑ
একটি উন্মুক্ত প্রশ্নচিহ্নের মতো,
যা প্রতিটি হৃদয়ের প্রান্তে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করে :
‘তুমি কি এখনো অনুভব করো হারিয়ে যাওয়াকে?’***
বিদায় সারথীরা
দুঃখের আগুনে মন পুড়ে পুড়ে
ছাঁই হয়ে যায়
অনন্ত আলোকে এ এক বিহিত
তবুও, পথ সম্মুখে চলে যায়
পেছনে রেখে
এক অনন্ত হৃদয়ের ছায়া।
যেখানে প্রতিটি বৃক্ষ জানে
করুণ হৃদয়ের স্পর্শ,
প্রতিটি পথ জানে কবলিত পায়ের মানচিত্র।
সময়ের বিস্তৃর্ণ হাহাকারে
যেখানে মানুষ হারায় চেনা মুখ।
এক অন্তর্জলী যাত্রায় চলে যেতে হয়
পুরাতনকে ভুলে।
আবার বেরে উঠে নশ্বর জগতের
চাওয়া পাওয়া, হা-হুতাশ।
ক্ষণকালের আভা হতে
রয়ে যায় গোধূলির অন্ধকার,
পাতা ঝরার শব্দ, নীরবতা
আর তোমাদের শব্দহীন মুখ।
মুসাদ্দেক আল আকিব বর্ষার ছন্দমালা
বর্ষাকাল এলো বলে শুরু হলো গান, আকাশে মেঘ ডাকে, হৃদয় ভিজে প্রাণ।
বর্ষাকালে বৃষ্টি পড়ে টুপটাপ করে, সবুজে শ্যামল রঙে প্রকৃতি মেতে উঠে।
বর্ষাকালে নদীর বুকে ঢেউ খেলে যায়, নৌকা ভাসে জলরাশিতে, স্বপ্নে পথ পায়।
বর্ষাকালে কদম ফুলে সজল চোখ ভরে, গন্ধে ভরে পথঘাটে, মন খুশি করে।
বর্ষাকালে শিশিরে ভিজে পাতার কোলে, জীবন যেন স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ হয়ে দোলে।
বর্ষাকালে মাটির ঘ্রাণে উতলা হয় মন, জমে থাকা কষ্টগুলো যায় হারিয়ে ক্ষণ।
বর্ষাকালে কৃষকের মুখে ফোটে হাসির আলো, ধানের শীষে বোনা সোনা, স্বপ্নরা দেখা দিলো।
বর্ষাকালে ইলিশে ভরা পদ্মার স্রোত, আনন্দে ভরপুর গ্রাম, খুশির উচ্ছ্বাসে হোট।
বর্ষাকালে মেঘে ঢাকা দিগন্ত প্রান্তর, রঙিন ছাতা, বৃষ্টি ছোঁয়া প্রেমের অন্তর।
বর্ষাকালে সুরের মূর্ছনা, বাউলের গান, প্রকৃতি মাতোয়ারা হয়ে, নতুন করে প্রাণ।
মুহাম্মদ কাউছার আলম রবি
বৈষম্য উৎসর্গ : বৈষম্যের স্বীকার সকল ভাই-বোনদের।আন্দোলন থেকে নব জাগরণ তবুওÑ
বৈষম্য চলছে আমরণ!
অফিস ব্যবসা রাজনীতি,
কোথাও নেই সুষ্ঠুনীতি,
সব জায়গায় চলছে দুর্নীতি,
আসবে না আর বঙ্গদেশে শান্তি প্রগতি।সব জায়গায় হায়নাদের আবাস,
কে জোগাবে সে সাহস,
কর্মচারীদের রক্তচোষা শকুনের করবে বিনাশ।ওহে নব জোয়ান হও আগুয়ান,
নিপাত করতে হবে রক্তচোষা হায়নাদের,
ধ্বংস রচনা করো কূটকৌশলীদের।আবু ইউসুফ
আবেদনস্নিগ্ধ ভোরের শিশির গ্রীষ্মের পুলক, বর্ষার তিক্ততা, শীতে অস্বস্তি; নাঙ্গা পায়ে,
ইচ্ছা অনিচ্ছায় দলিত হয়েছে যত পদযুগল স্নান।
ফুটফুটে ভোরের আলো, মিষ্টি মিষ্টি রোদের ভ্যাপসা ঘ্রাণ।
নান্দনিক অস্তাচলের আলো পুলকিত হৃদয়ে স্মৃতির স্লোগান।
আধো আলো আধো আঁধার কালো থেকে কালো ঔজ্জ্বল্যের আবরণে নব শশীর আগমন।
নিরেট খাঁটি কক্ষপথে ফিরে আসতে বারবার করি বিনীত আবেদন।***
স্ব-স্থানে পারাস্রিত
প্রভাত প্রতিশোধের আভায় আবেশিত হলে
কোথাও খুশি কোথাও ব্যথিত প্রাণ,
কোথাও ক্ষতবিক্ষত অসহ্য যন্ত্রণার আয়োজন।
কেউ মা-বাবা, ভাই-বোন হারায়, কোথাও জনমানবশূন্য।
দখলের ভাবনায়, বেদখল যত প্রাণ অর্ধশত বছরের পীড়ন।
মানবতার গানের আয়োজক যারা, তারাই ঘৃণ্য খেলায় মত্ত।
আশার বন্ধুত্ব, তলে তলে উচ্ছেদের হলিখেলা।
নবজাতকদের নিঃশেষ চিৎকারে বাতাস নিত্য ভারি ভারি।
কবে কখন কোথায় কীভাবে শেষ হবে তিমির পথ পাড়ি?আশরাফুজ্জামান কাজী রাসেল
ঘুড়িআকাশজুড়ে উড়ছে ঘুড়ি,
দেখছে সবাই সারি সারি।
রাতুল মৃদুল টানছে নাটাই,
মানজা নিয়ে আসছে কানাই।
হাতছানি দিয়ে ডাকছে ঘুড়ি,
দূর আকাশে চাঁদের বুড়ি।
হেমন্তের ওই মৃদু বাতাস,
ঘুড়ির রাজ্যে রঙিন আকাশ।
গোল পাকিয়ে উড়ছে ঘুড়ি,
সামলানো দায় বলছে আড়ি।মারিয়া ইসলাম অনুপমা
মশালআমি ঝড়ের দাবানল, আমি মৃত্যুর শপথ,
আমি লাল আগুন, আমি ন্যায়ের প্রবল রথ।
ধর্ষকের রাজ্যে আজ উঠবে যে ঝড়,
পুড়বে দানব, পুড়বে তাদের ঘর!আমার বুকে জ্বলে সহস্র চিতা,
আমি বিদ্রোহ, আমি ধ্বংসের নেতা।
শিশুর কান্না, মায়ের ক্রন্দন,
বৃদ্ধার রক্তÑতবুও নীরব জনপদ!না, আর নয়! আজ আগুন জ্বলবে,
প্রলয়ের মশাল হাতে জনতা বেরোবে।
শৃঙ্খল ভাঙবে, রাজপথ কাঁপবে,
ধর্ষকের শির নত হয়ে পড়বে!নারী আজ আর দুর্বল নয়, সে মহাকাল,
তার চোখে জ্বলে প্রতিশোধের জ্বলন্ত জ্বাল।
শপথ নে, রুখে দাঁড়া, ভাঙ শৃঙ্খল,
আজ বিদ্রোহের মশাল জ্বলবেইÑ
ধর্ষকের কবর হবে এ মাটিরই কোলে!নাহিদ হাসান পাটোয়ারী
অনন্ত আগ্রহআমরা কি সত্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, নাকি নিজেদের নিয়ে যাচ্ছি অন্ধকার ভবিষ্যতে?
মানবের আত্মা কলুষিত হয়ে যায়,
বিভ্রান্তিতে আমরা দিশেহারা হয়ে যাই।
নিজেদের খুঁজে বেড়াই,
খুঁজে পেয়েও হারিয়ে ফেলি!
আমরা অগ্রসর হই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে,
সহজ এক পথÑতবু কত কঠিন হয়ে যায়।ছুটে চলি আলোর সন্ধানে, এক ফিতনাপূর্ণ জগৎ হয়ে।
কতজন পথ হারায়, ফিতনায় ডুবে যায়,
সীমিত এই জগতে নিজেকে সঁপে দেয়।
তারাও আলো খোঁজে,
আলো পায় না।
আটকা পড়ে যায়,
অন্ধকারে ঢেকে যায়,
অতঃপর ছন্নছাড়া হয়ে যায়।আমরা কি নিজেদের অস্তিত্বের কারণ ভুলে যাই?
নাকি অস্তিত্বের মূল উদ্দেশ্য জেনেও অস্বীকার করি?
জন্মলগ্ন হতে আজ পর্যন্ত আমরা
কতজনই বা এর কারণ উপলব্ধি করেছি?অথচ আলোর পথ খুঁজতে গিয়ে, নিজেদের নিয়ে যাচ্ছি অন্ধকারের আরও গভীরে।
কিন্তু,
হয়তো আলো আত্মায় আগেই ছিল,
এটি কখনো অন্ধকারের কাছে হারায়নি।
আমরা যতই পথ হারাই,
আত্মজাগরণের আলো সেখানে অপেক্ষা করে।আমাদের ভুলে যাওয়া স্মৃতি,
আমাদের চিন্তাভাবনার গভীরে,
আলোকিত করি,
ফিরে পাই আমাদের শুদ্ধতা,
যেখানে অস্তিত্বের মূল সত্য কাছে স্পষ্ট হয়।সালাহ্উদ্দিন হাজরা
পরিশ্রমচোখ মেলেছে দিনের আলো
আঁধার গেছে কেটে,
আলোর ডাকে চারা গজায়
শক্ত মাটি ফেটে।তাই দেখে যে কৃষকের ওই
মুখে হাসি ফুটে,
কাকতাড়ুয়ার ভয়ে পাখি
দলে দলে ছুটে।সোনার ফসল যত্ন পেয়ে
চাঙ্গা হয়ে ওঠে,
পরিশ্রমে ধীরে ধীরে
খাঁটি সোনা জোটে।