প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৫, ০৯:২৯
চাঁদপুরে কোরবানির দেশি মাঝারি গরুর আধিক্য
গো-খাদ্য সংকটে গরুর দাম বেশি হতে পারে

চাঁদপুরে আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্যে দেশি মাঝারি আকারের গরুর প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। জেলার খামারগুলোতে এবার প্রস্তুত করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৯৮টি পশু। এর মধ্যে দেশি গরুর সংখ্যাই বেশি। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, চাহিদা রয়েছে ৭৬ হাজার ৩৫৪টি পশুর। সে হিসেবে আনুমানিক ১৪ হাজার ২৫৬ পশুর ঘাটতি রয়েছে। তবে আশপাশের জেলার পশু হাটে পশু এলে এই ঘাটতি পূরণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, জেলার তালিকাভুক্ত খামারির সংখ্যা ৩ হাজার ৭৭০ জন। তারা এবার মোট ৪২ হাজার ৪৯৭টি গরু উৎপাদন করেছেন। এর মধ্যে ষাঁড় ২৪ হাজার ২৪৭টি, বলদ ৭ হাজার ৭৮১টি এবং গাভী ১০ হাজার ৪৬৯টি। এছাড়াও মহিষ ২১৭টি, ছাগল ১৮ হাজার ৪৫৮টি, ভেড়া ৮৩০টি এবং অন্যান্য পশু রয়েছে ৯৬টি।
খামারিদের মতে, গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে গরুর দাম বাড়তে পারে। সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের খামারি সাইফুল ইসলাম শরীফ চৌধুরী জানান, “গত পাঁচ বছর ধরে দুগ্ধ উৎপাদনের পাশাপাশি কোরবানির জন্যে পশু পালন করছি। এবার শতাধিক ষাঁড় বিক্রির জন্যে প্রস্তুত। দাম ভালো পেলে লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবো।”
কল্যাণপুর ইউনিয়নের খামারি মো. রহিম গাজী জানান, “স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ঘাস ও দানাদার খাদ্যে আমাদের ষাঁড়গুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে শ্রমিকের হাজিরা ও খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় লাভ-লোকসান নির্ভর করছে বিক্রিমূল্যের উপর।” তিনি আরও জানান, তাদের খামারে দেড় লাখ থেকে শুরু করে পাঁচ লাখ টাকার ষাঁড় রয়েছে।
তরপুরচণ্ডী ইউনিয়নের কৃষক মো. বিল্লাল হোসেন গাজী জানান, “স্থানীয় খামারিরা নিজেদের উৎপাদিত খাবারে ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন। যদি ভালো দাম না পাওয়া যায় তবে খামারির সংখ্যা কমে যাবে এবং বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে।”
চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের খামারি আলী বাউল বলেন, “এখন গরুর সংখ্যা কম। বিক্রিতে খরচ উঠে আসে না। ফলে অনেকে আগ্রহ হারাচ্ছে।”
ফরিদগঞ্জ উপজেলার খামারি আশরাফ উদ্দীন জানান, “খড়ের ঘাটতি, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও শ্রমিক সংকটের কারণে অনেকেই গবাদিপশু পালনে আগ্রহ হারাচ্ছে। খামারিদের টিকিয়ে রাখতে সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন।”
সেই উপজেলার সকদীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন জানান, তাদের পরিবারিক খামারে ৫ থেকে ৭টি কোরবানির ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের পরিশ্রমেই গরুগুলো বড় করেছি। আশা করছি লাভবান হবো।”
চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, “এবার স্থানীয় খামারিদের মধ্যে মাঝারি আকারের গরু প্রস্তুত বেশি হয়েছে। পশুগুলো প্রাকৃতিক খাবারে বেড়ে উঠেছে। গো-খাদ্যের ঘাটতির কারণে দাম কিছুটা বেশি হতে পারে।”
তিনি আরও জানান, জেলায় ২০০টিরও বেশি কোরবানির পশুর হাট বসবে। অন্য জেলার পশু আসায় পশুর সংকট কেবল কাগজে-কলমেই থাকবে।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব জানান, “পশুর হাটগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের টহল জোরদার থাকবে।”