সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৩০

রায়পুর-লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী মহাসড়ক : প্রকল্পের দরপত্র জটিলতায় আটকে আছে সংস্কার কাজ!

তাবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর
রায়পুর-লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী মহাসড়ক : প্রকল্পের দরপত্র জটিলতায় আটকে আছে সংস্কার কাজ!

লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ফোর লেন করার জন্যে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় ৩ শ' ৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করলেও দরপত্র জটিলতায় সংস্কার কাজ করা হচ্ছে না। বেহাল মহাসড়কটিতে গত ৪ বছরে প্রায় ২২০জন মানুষ প্রাণ হারান। আহত হয় এবং পঙ্গুত্ব বরণ করেছে প্রায় ৫০০ অসহায় দরিদ্র মানুষ।

দীর্ঘদিন ধরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সংস্কার না করায় রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) নিজ হাতে চন্দ্রগঞ্জ আফজল সংস্কার করেছেন লক্ষ্মীপুর-সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতা ড. রেজাউল করিম।

রায়পুর বাস টার্মিনাল থেকে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে বড়ো বড়ো গর্ত। দালালবাজার, মাইলের মাথা, বাসটার্মিনাল ও উত্তর তেমুহনী, জকসিন বাজার সড়কের অবস্থা এমন হয়েছে যে, পিচ ঢালাই, মেকাডম উঠে জমে থাকে পানি ও রোদে ধূলোবালিতে একাকার হয়ে উঠে এবং দূষিত হয় পরিবেশ।

সড়কটির চার লেন উন্নীতকরণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয় বাসিন্দা, চালক, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ। সড়কটি সংস্কার বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন, সংবাদ সম্মেলন, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলীর গায়েবানা জানাজাও পড়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।।

রায়পুর- লক্ষ্মীপুর-নোয়াখলাী মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফরিদপুর ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর সহ ১৫ থেকে ২০টি জেলার মানুষ চলাচল করছে। লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের মাধ্যম এ মহাসড়কটি। মজু চৌধুরীর হাট থেকে প্রতিদিন শত শত বালুবাহী ভারী ড্রাম ট্রাকও এ সড়কের ওপর দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, রায়পুর বাস টার্মিনাল থেকে চন্দ্রগঞ্জ বাজার পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর অংশে ৪০ কিলোমিটার সড়কের চার লেনের ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি)’ পাস হয়। প্রকল্পে চার লেনের একপাশে ২৪ ফুট করে ৪৮ ফুট এবং মাঝখানে ডিভাইডার হবে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বান করা হলেও রহস্যজনক কারণে ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। তবে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, টেন্ডার যাচাই-বাছাই বিষয় এখনও ঢাকা ও কুমিল্লায় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

দালাল বাজার এলাকার ওষুধ ব্যাবসায়ী ভিভি রায় চৌধুরী বলেন, প্রায় ৫ বছর ধরে সড়কটির অবস্থা একেবারেই নাজুক । স্থায়ীভাবে সংস্কার করা হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে জোড়াতালি দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সেটাও কোনো কাজে আসছে না। কয়েকদিনের মধ্যে পূর্বের অবস্থা দেখা যায়। সংস্কারের নামে যেন ‘তামাশা’ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। মহাসড়ক ইট দিয়ে সংস্কারকে ‘হাস্যকর’ বলে মনে করছেন তিনি।

চলতি বছবের ১৪ জুলাই সড়ক ও জনপথ অফিসের সামনে মানববন্ধন পরবর্তী গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন অংশগ্রহণকারীরা।

চার লেনের কাজ দ্রুত শুরু করার দাবি জানিয়ে গত ২০ আগস্ট লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে জামায়াত। গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কটির দুর্ভোগ তুলে ধরে দ্রুত কাজ শুরু করার দাবি জানান জামায়াতের নেতৃবৃন্দ। দ্রুত কাজ শুরু না হলে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

জামায়াত নেতা ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ভোলা-বরিশালসহ দেশের অধিকাংশ জেলার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী মহাসড়ক। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ সড়কটি চার লেনের জন্যে অর্থ বরাদ্দ হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে কাজ শুরু হচ্ছে না। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারাও নির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারছে না। মূলত আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে কাজটি শুরু হচ্ছে না বলে জানতে পেরেছি।

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আতাউর রহমান বলেন, চার লেনের জন্যে ২ টি প্যাকেজে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার জন্যে কুমিল্লা অফিস থেকে মূল্যায়ন করা হয়। বড় প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগে যাচাই-বাছাইতে সময় লাগে। যেখানে বেশি বড়ো গর্ত রয়েছে, গর্তগুলো ভরাট করে দেয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়