বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৪:১৯

শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে রামগঞ্জের ৫ শতাধিক পরিবার

মো. মাসুদ রানা মনি, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে রামগঞ্জের ৫ শতাধিক পরিবার

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। বর্ষা মৌসুমে কোনো ধরনের কাজ না থাকায় প্রত্যন্ত এলাকার খেটে খাওয়া মানুষগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছে শাপলা বিক্রি করা। প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে শাপলা সংগ্রহের কাজে বেরিয়ে পড়ে ছোট ছোট কোষা নৌকা নিয়ে।অনেকের নৌকা না থাকায় তারা পানিতে নেমেই সংগ্রহ করছে শাপলা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গ্রামেগঞ্জে শাপলা তরকারি হিসেবে অনেকটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাজারে প্রতি কেজি তরকারি ৭০ হতে ৮০ টাকায় ক্রয় করতে হয়। কিন্তু ২০ টাকা দিয়ে এক মুঠো শাপলা কিনলেই তরকারি হয়ে যায়। তাই গ্রামের বাজারগুলোতে শাপলার কদরও রয়েছে প্রচুর। নারকেল দিয়ে রান্না করা শাপলা তরকারি দারুণ সুস্বাদু। শাপলা ভাজি করেও তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। শাপলার মাথায় এক ধরনের গোটা হয়। সে গোটা দিয়ে গ্রামের মেয়েরা খই ভাজে। নিজেরাও খায়, আবার বাজারেও বিক্রি করে।

প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাজারেই একশ্রেণীর লোকেরা ১২ থেকে ১৫টি শাপলা দিয়ে আঁটি বেঁধে ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছে। এছাড়াও অনেকে মাথায় নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে শাপলা বিক্রি করছে। ৯নং ভোলাকোট ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের শাপলা বিক্রেতা ইব্রাহিম মিয়া, ভোলা কোট গ্রামের সিরাজ মিয়া, লক্ষ্মীধর পাড়া গ্রামের ফজলুল হক সহ বেশ ক'জন শাপলা বিক্রেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা যেদিন শাপলা বিক্রি করি সেদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজগার হয়। তবে প্রতিদিন শাপলা সংগ্রহ করা যায় না। শাপলা সংগ্রহ করা কষ্টের কাজ। আর তাছাড়া প্রতিদিন ভোরবেলা উঠাও সম্ভব হয় না।

এ ব্যাপারে ভোলা কোট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম মজুমদার বলেন, গ্রামাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষগুলো কাজ না থাকায় বাজারে বাজারে এবং বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শাপলা বিক্রি করে। কোনো রকম অনাহারে অর্ধাহারে তারা জীবিকা নির্বাহ করছে। আসলে এ সময়ে তাদের জন্যে আমাদের করারও কিছু থাকে না। রামগঞ্জ সরকারি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ফয়সাল ইসলাম বলেন, শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। এটি পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি জলজ সবজি। যাতে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, প্রোটিন, খাদ্যআঁশ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হজম শক্তি বৃদ্ধিতে শাপলা কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম রবিন শীষ বলেন, বর্ষাকালটা গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষদের জন্যে খুবই কষ্টকর। তখন কোনো কাজ না থাকায় খেটে খাওয়া মানুষগুলো জীবিকা নির্বাহের জন্যে মাঠঘাট জলাশয় থেকে শাপলা তুলে এনে বিক্রি করে। আসলে তাদের জন্যে অনেক কষ্ট হয়। এ সময় যদি কোনে বরাদ্দ আসে তা এসব অসহায় মানুষের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্টন করা হবে। আমি বিত্তবান সহ সকলকেই এদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়