প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫, ২১:০৪
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধে সনাক-টিআইবি'র আহ্বান

'প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সকলে, একসাথে, এখনই’ প্রতিপাদ্যের ওপর বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চাঁদপুরের আয়োজনে চাঁদপুরের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে রোববার (১ জুন ২০২৫) মানববন্ধন ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
|আরো খবর
সনাক সভাপতি মো. আলমগীর পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সনাকের সাবেক সভাপতি ও সদস্য অধ্যক্ষ মো. মোশারেফ হোসেন, ইয়েস গ্রুপের দলনেতা মো. আবু হানিফ সজিব ভূঁইয়া ও চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের সভাপতি কাজী আজিজুল হাকিম নাহিন। দিবসের ওপর ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সনাক সদস্য সবিতা বিশ্বাস।
সনাক সভাপতি মো. আলমগীর পাটওয়ারী বলেন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে রক্ষার জন্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা খুবই প্রয়োজন। তিনি মনে করেন, প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ না হলে এবং জনগণকে সচেতন করা না হলে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্লাস্টিক বর্জ্যের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে নাগরিকদের জানাতে হবে এবং প্লাস্টিকের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্যে আমাদের নিজেদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকারের আরও বেশি পরিমাণে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে শহর ও নগরে প্লাস্টিক বর্জ্যের অব্যবস্থাপনার কারণে পরিবেশ সুরক্ষায় একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি মানববন্ধন ও র্যালিতে অংশগ্রহণ করার জন্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সকল অংশীজনের ভূমিকাসহ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি টিআইবির দাবিসমূহ উপস্থাপন করেন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চাঁদপুর-এর সদস্য সবিতা বিশ্বাস।দাবিসমূহ হলো : (১) ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। সে ঘোষণা ২০২৫ সালের আইএনসি সভা থেকে প্রদান করতে হবে; (২) ‘ন্যাশনাল থ্রিআর স্ট্রাটেজি ফর ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ কৌশলপত্রটি হালনাগাদ ও সংশোধনসহ পরিবেশ সংক্রান্ত বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির আলোকে একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে; (৩) প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ, পৃথকীকরণ, পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থাসহ একটি আধুনিক ও কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাগুলোর কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; (৪) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং জনসচেতনতা ও প্রচারণামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী এবং তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; (৫) প্লাস্টিক শিল্পের জন্যে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ও অন্যান্য প্রণোদনা হ্রাস করে পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণকে উৎসাহিত করতে হবে; (৬) অপ্রাতিষ্ঠানিক প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারীদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে এবং প্লাস্টিক-সংক্রান্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে পরিবেশ দূষণ হ্রাস করতে হবে; (৭) সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষকরে, ‘উৎপাদনকারীর সম্প্রসারিত দায়িত্ব’ সম্পর্কিত নির্দেশিকাটির ব্যাপক প্রচারণা নিশ্চিত করতে হবে; (৮) যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ এবং পরিবেশ দূষণ রোধে সাধারণ জনগণের মধ্যে প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে; (৯) নদী, জলাশয় ও পরিবেশের বিভিন্ন উৎসে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণসহ পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রমে নাগরিক উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; (১০) প্লাস্টিক দূষণ ও পরিবেশের ক্ষতিসহ এ খাত সংশ্লিষ্ট অনিয়মের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
টিআইবির এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো. মাসুদ রানার সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও র্যালিতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ, সনাক-চাঁদপুরের সদস্যবৃন্দ, অ্যাকটিভ সিটিজেন্স গ্রুপ (এসিজি) ও ইয়েস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ ও টিআইবির কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।