শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৫, ২০:৩৩

ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতা খালেক পাটওয়ারী ঘোষণা দিয়ে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে লুটপাটে হয়েছিলো একাট্টা

এবার কলেজ শিক্ষকের বাসায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে উপজেলা বিএনপির সেই নেতা

এসকে জিয়া।।
এবার কলেজ শিক্ষকের বাসায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে উপজেলা বিএনপির সেই নেতা

পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে রড লোপাট, রেজিস্ট্রি অফিস প্রাঙ্গণের সেগুন গাছ কেটে আত্মসাৎ, উপজেলা কমপ্লেক্সের পুকুর দখল, ওয়াপদা কমপ্লেক্সের ভবন (যুবলীগের অবৈধ অফিস) দখল, টেন্ডার সিন্ডিকেট, ফুটপাতে দোকান বাণিজ্য, সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান, সালিস বাণিজ্যসহ যাবতীয় অপকর্মে জুড়িহীন আব্দুল খালেক পাটওয়ারী এবার ফরিদগঞ্জ সরকারি কলেজের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক রাধেশ্যাম কুরীর বাসা দখলের উদ্দেশ্যে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তার এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক সমাজ এবং সাধারণ মানুষ ছাড়াও খোদ বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঝেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। আব্দুল খালেক পাটওয়ারী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ সরকারি কলেজের সদ্য সাবেক সহকারী অধ্যাপক রাধেশ্যাম কুরী দীর্ঘদিন যাবৎ ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ওয়াপদা কলোনীর ভাড়াকৃত একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছেন। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট ২০২৫) সকালে বাসাটি দখলের উদ্দেশ্যে তাঁকে জোরপূর্বক বাসা থেকে বের করে দিয়ে সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেন আব্দুল খালেক পাটওয়ারী ও তার লোকজন। এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক ও তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ঘটনার অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভিযুক্ত আব্দুল খালেক পাটওয়ারী বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার থেকে নানান সুযোগ সুবিধা নেয়ার কৌশল হিসেবে স্বেচ্ছায় বিএনপির সকল পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ সালে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দলের সকল দায়িত্ব এবং সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তখন স্থানীয়, জাতীয় ও অনলাইন গণমাধ্যমে তার অব্যাহতির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে প্রকাশ হয়েছিল। এক সময় বিএনপিতে থাকা আব্দুল খালেক পাটওয়ারী অব্যাহতি নেয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের সাথে মিলেমিশে নানা অপকর্ম ও লুটপাটের কৌশল রপ্ত করে নেন।

ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে আব্দুল খালেক পাটওয়ারীর এক সময়ের শুভাকাঙ্ক্ষী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান শাহীনের দলীয় কার্যালয় দখলের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের উত্থান ঘটে।

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল খালেক পাটওয়ারীর দখলে থাকা যুবলীগের সাবেক কার্যালয়টিতে প্রকাশ্য দিবালোকে বিভিন্ন নারীর দিবারাত্রি অবাধ যাতায়াত দৃশ্যমান হওয়ায় সমাজ সচেতন নাগরিকদের মনে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে স্বেচ্ছায় দল থেকে অব্যাহতি নেয়া আব্দুল খালেক পাটওয়ারী কীভাবে দলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন এমন প্রশ্নে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে বিএনপির ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মাঝে। সম্প্রতি আব্দুল খালেক পাটওয়ারীর বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করার চেষ্টা করলে প্রকাশ্যে উপজেলা পরিষদ এলাকায় সাংবাদিকদের প্রাণনাশের হুমকি-ধমকিসহ লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটেছে।

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচয়ের কল্যাণে আব্দুল খালেক পাটওয়ারী প্রকাশ্যে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ফরিদগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের মালিকানাধীন লাখ টাকা মূল্যের সরকারি কয়েকটি বিশাল আকারের সেগুন গাছ কেটে নিয়ে যায়। এতেও ক্ষান্ত হয়নি বিএনপির মানসম্মান নষ্টকারী লোভী আব্দুল খালেক পাটওয়ারী। খোদ উপজেলা পরিষদের সামনের পুকুরটিও সম্প্রতি নিজের দখলে নিয়েছেন তিনি। যা ওপেন সিক্রেট।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাফি আহমেদ, রবিউল জেডিসিসহ আরো অনেকেই আব্দুল খালেকের কৃতকর্মের কথা তুলে ধরে দলীয় এবং প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সুদৃষ্টি কামনা করে তার বিচার দাবি করেছেন।

আব্দুল খালেক পাটওয়ারীর রোষানলের শিকার সহকারী অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) রাধেশ্যাম কুরী জানান, আমার বাসায় দখলের উদ্দেশ্যে তালা মেরে দেয়া হয়। পরবর্তীতে বিএনপির স্থানীয় এক নেতাকে জানালে আমাকে বাসার চাবি ফিরিয়ে দেন। এ ঘটনায় আমার পরিবারসহ এখনো আতঙ্কে আছি।

এদিকে আব্দুল খালেক পাটওয়ারীর কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা অনুতপ্ত হয়ে তারা বলেন, যেহেতু দলের হাইকমান্ড রয়েছে, তার বিষয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে। কারো ব্যক্তিগত অপরাধের দায় বিএনপি নিতে পারে না।

এদিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক আলহাজ্ব এমএ হান্নান বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাস, চাঁদাবাজের স্থান নেই।

এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল খালেক পাটওয়ারী মুঠোফোনে বলেন, শিক্ষকের বাসা দখল বা বাসায় তালা দেয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। দখলবাজি, টেন্ডার সিন্ডিকেট ও দুর্নীতিসহ যেসব অভিযোগের কথা বলেছেন তা সঠিক নয়। সামনে আমি মেয়র পদে নির্বাচন করবো। একটা পক্ষ আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করার জন্যে এসব কথা তুলেছেন। আমি একটা পক্ষের কাজ করি।আমাদের ফরিদগঞ্জে গ্রুপ ৩টি। আমি এমএ হান্নান গ্রুপে কাজ করি। আমাকে ঘায়েল করতে পারলে এমএ হান্নান সাহেবের পক্ষ দুর্বল হয়ে পড়বে। আমার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ গ্রুপ মিথ্যাচার করছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়