সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ০২:১৫

টেন্ডার না করে লঙ্ঘন করা হয়েছে সরকারি বিধি: চাঁদপুর পৌরসভার ড্রেন পরিষ্কার কাজে অনিয়ম

কবির হোসেন মিজি
টেন্ডার না করে লঙ্ঘন করা হয়েছে সরকারি বিধি: চাঁদপুর পৌরসভার ড্রেন পরিষ্কার কাজে অনিয়ম
ছবি ক্যাপশন : চাঁদপুর পৌরসভার কঞ্জারভেন্সী শাখা সম্প্রতি শহরের কয়েকটি স্থানে আন্ডার গ্রাউন্ড ড্রেনের কাজ করানোর পর কয়েক সপ্তাহ না যেতেই একটু টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজ গেট এলাকা, বকাউল বাড়ি রোড, বিপণীবাগ ও মাদরাসা রোডে এভাবেই জলাবদ্ধতা দেখা যায়।

চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। এই কাজটি করেছে পৌরসভার কঞ্জারভেন্সী বিভাগ। এই কাজে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। কিন্তু এতো টাকার কাজ টেন্ডার ছাড়াই সম্পন্ন করায় এবং কাজের বাস্তব চিত্র দেখে বরাদ্দকৃত অর্থ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শহরবাসীর মাঝে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

অনুসন্ধান করে জানা যায়, কয়েক মাস পূর্বে পৌরসভার কঞ্জারভেন্সী শাখা কোনো প্রকার টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই কাজ সম্পন্ন করে। দায়িত্বে ছিলেন কঞ্জারভেন্সী ইন্সপেক্টর মো. শাহজাহান খান। কিন্তু কাজ যথাযথভাবে না হওয়ায় বিভিন্ন সড়ক ও এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। নামেমাত্র কাজের ফলে কয়েক সপ্তাহ না পেরুতেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

এই কাজে দৈনিক হাজিরায় কাগজে-কলমে ১২০ জন শ্রমিক দেখানো হলেও বাস্তবে কাজ করেছে মাত্র ১০ থেকে ১৫ জন। শ্রমিক সংখ্যা ও কাজের মিটারেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে

নথি অনুযায়ী আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন পরিষ্কারের বরাদ্দগুলো হলো: মিশন রোড ও আশ্রম রোড ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা, সরকারি কলেজ থেকে নাজির পাড়া হয়ে গাজীবাড়ি রাস্তা ৪ লাখ ৬০ হাজার ৮০০ টাকা, স্টেডিয়াম রোড থেকে নাজির পাড়া দেওয়ানবাড়ি ৪ লাখ ৬০ হাজার ৮০০ টাকা, ঘোষপাড়া ব্রিজ থেকে চিত্রলেখা রোড ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ টাকা, চিত্রলেখা মোড় থেকে বিপণীবাগ ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০ টাকা, বিপণীবাগ বাজার থেকে ইলিশ চত্বর ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৬০০ টাকা, পুরাণবাজার খাল পরিষ্কার ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা। মোট বরাদ্দ ২৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা

বাংলাদেশের সরকারি ক্রয় আইন ২০০৬ এবং সরকারি ক্রয় বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী, ২৫ হাজার টাকার বেশি ব্যয়ের যে কোনো কাজ অবশ্যই টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। বছরে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকার কাজ পৌরসভা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় করতে পারলেও এর বেশি ব্যয় হলে টেন্ডার বাধ্যতামূলক। চাঁদপুর পৌরসভা এসব আইন উপেক্ষা করেছে।

সরজমিনে দেখা যায়, শহরের কলেজ গেট, চিত্রলেখা মোড়, নাজির পাড়া ও বকাউল বাড়ি রোড এলাকায় বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, সাম্প্রতিক কাজের মান খুবই নিম্নমানের ছিল। তারা বলেন, “কাজ করেছে ১৫/১৬ জন, অথচ হাজিরায় দেখানো হয়েছে ১২০ জন।”

নাগরিক সমাজের দাবি, পৌরসভার কাজের প্রতিটি ধাপ স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করতে হবে। জনগণের ট্যাক্সের টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত না হলে উন্নয়ন কার্যত ব্যর্থ হবে। তারা দ্রুত তদন্ত ও কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।

কাজের দায়িত্বে থাকা কঞ্জারভেন্সী ইন্সপেক্টর মো. শাহজাহান খান জানান, সব কাজ নিয়ম অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে। সরু ড্রেনের মোট কাজ হয়েছে ১৪৪৪ মিটার এবং প্রশস্ত ড্রেনের ১০০০ মিটার। প্রতি মিটার খরচ যথাক্রমে ১০০০ ও ১৩০০ টাকা। তবে বিলের কাগজ দেখাতে প্রশাসকের অনুমতির কথা জানান একাউন্টস বিভাগ।

চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. গোলাম জাকারিয়া মুঠোফোনে জানান, “অফিসিয়াল তথ্য সরাসরি দেয়া যায় না, তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।”

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়