বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫, ১৫:২৩

ঢাকার আড়ালে ঘাতকের ছায়া!

রাজধানীতে সক্রিয় সুব্রত বাইন, ভারতীয় গোয়েন্দা এজেন্ডার ধারক?

বিশেষ প্রতিবেদক:মো.জাকির হোসেন
ঢাকার আড়ালে ঘাতকের ছায়া!
ছবি : সংগৃহীত

সন্ত্রাসী সুব্রতের নামে ৩০টির বেশি খুনের মামলা, ১০০-র বেশি অভিযোগ; ইন্টারপোলের রেড কর্নার তালিকাভুক্ত; ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার মদদে চলছে নতুন পরিকল্পনা

বাংলাদেশের এক সময়কার সর্বাধিক পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছে – এমন তথ্যই চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে গোটা গোয়েন্দা মহলে। প্রায় দেড় বছর আগে তাকে গোপন ব্যবস্থায় ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়, উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক গুপ্তহত্যা ও বিদেশে পাচারের মাধ্যমে নতুন পরিচয়ে স্থাপিত করা।

২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর তার আশ্রয়দাতারা ছিটকে পড়লে এই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যেতে সক্ষম হয়।

৩০টির বেশি খুনে সাজাপ্রাপ্ত, শতাধিক মামলার আসামী: নৃশংসতা আর অপরাধের ইতিহাসে সুব্রত বাইন একটি পরিচিত নাম। ২০০১ সালে তার নামে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে থাকা ৩০টিরও বেশি খুনের মামলায় সাজা হয়েছে এবং অবৈধ অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও অপহরণসহ শতাধিক মামলা এখনও বিচারাধীন।

আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশ তালিকাভুক্ত এই সন্ত্রাসীকে এক সময় মনে করা হতো ‘বাংলাদেশের আতঙ্ক’।

ভারতে আইবি’র ছত্রছায়ায় ২২ বছর: ২০০১ সালের পর সুব্রত পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। সেখানকার ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (IB) তাকে নিজেদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

ঢাকায় ফিরে গোপনে অস্ত্র জোগাড় ও নিয়ন্ত্রণ বিস্তার: ২০২৪ সালের আগস্টের পর ঢাকায় ফিরে সুব্রত মতিঝিলের ইখতিয়ার এর মাধ্যমে থানা লুট হওয়া ১৭টি আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করে।

সশস্ত্র পরিকল্পনা ও বিদেশি সংযোগ: নেপালে পলাতক বিডিআর হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সহযোগী হারুন অর রশীদ লিটন ওরফে লেদার লিটন, যুবলীগ ক্যাসিনো সম্রাট ও খালেদের (বর্তমানে মালয়েশিয়ায়) মাধ্যমে সুব্রত অস্ত্র চুক্তিতে সম্পৃক্ত হয়েছে।

বিডিআর হত্যাকাণ্ডেও সংশ্লিষ্টতা: ২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের প্রথম দিনে সাবেক বিডিআর সদস্য তোরাব আলীর মোবাইল থেকে ভারতে যাওয়া ১১টি ফোনকলের মধ্যে ৫টি ফোনই গিয়েছিল সুব্রতর কলকাতার নম্বরে

ভারতীয় হ্যান্ডলারদের পরিচয় ও রাজনৈতিক সংযোগ: ভারতীয় দূতাবাস কর্মকর্তা শৈবাল রায় চৌধুরীসমীর কুমার দিক্ষিত ছিলেন সুব্রতের হ্যান্ডলার। এমনকি দিক্ষিতকে বিডিআর বিদ্রোহের পরিচালনাকারীদের অন্যতম বলেও দাবি উঠেছে।

সুভাষ সরকার: র-এর মূল সংযোগকারী: মানিকগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সুভাষ চন্দ্র সরকার ছিলেন সুব্রতের ভারতীয় সংযোগস্থাপনকারী। গোয়েন্দারা তাকে RAW-এর এজেন্ট হিসেবে শনাক্ত করেছে।

আজিজ আহমেদ ও হারিছের সুরক্ষা: সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও তার ভাই হারিছ আহমেদ এর ভারতীয় যোগাযোগের অন্যতম সেতুবন্ধ ছিলেন সুভাষ।

সাম্প্রতিক ষড়যন্ত্র ও অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ: মোহাম্মদপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ ও হারিছের এলাকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ইমন বা পিচ্চি হেলাল কে প্রতিহত করতে চেয়েছিল সুভাষ ও সুব্রত। কিন্তু পরিকল্পনার আগেই সুভাষ গ্রেফতার হয়।

গোয়েন্দা মহলের উদ্বেগ: অস্ত্র সংগ্রহ, গুপ্ত সমঝোতা, আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক সংযোগ—সব মিলিয়ে সুব্রত বাইন এখনো বাংলাদেশে একটি ভয়ংকর হুমকি। তাকে নতুনভাবে সংগঠিত করে কোনো অস্থিতিশীল ঘটনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

তথ্যসূত্র:
- বিশেষ অনুসন্ধান
- জুলকেনাইন সার ফেসবুক পোস্ট

- নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতামত

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়