প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৫, ০১:০৮
দাম কত ভাই—দেড় টাকা, আড়াই টাকা!
মানুষ-জন্তুর ভিড়ে হাস্যরসে ভরা শ্রীনগরের পশুর হাট

মুন্সীগঞ্জ, শ্রীনগর —
|আরো খবর
কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে দেশের পশুর হাটগুলো। মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলাও এর ব্যতিক্রম নয়। উপজেলার ভোজেশ্বর, হাঁসাড়া, কামারগাঁওসহ বিভিন্ন হাটে চোখে পড়ছে গরু-ছাগলের ঠাসা ভিড়। তবে শুধু পশু নয়, মানুষের ভিড়ও কম নয়।
এই ভিড়ের মধ্যেই গড়ে উঠেছে এক ব্যতিক্রমী 'হাস্যরসাত্মক' সংস্কৃতি—দাম জিজ্ঞাসা করলেই ক্রেতারা বলছেন, “দেড় টাকা”, “আড়াই টাকা”!কিন্তু শুনলে চমকে উঠতে হয়। কারণ যে গরুটির দাম দেড় লাখ টাকা, সেটিকেই বলা হচ্ছে “দেড় টাকা”!
আর আড়াই লাখ টাকার গরুর দাম জানানো হচ্ছে “আড়াই টাকা”।
ফলে তা শুনে তৈরি হচ্ছে ব্যাপক হাস্যরস, যা এখন ঈদের প্রস্তুতির আনন্দের নতুন অনুষঙ্গ।হাসির রোল, ঠাট্টা-মশকরা
শ্রীনগরের ভোজেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এক গরু কিনে ফিরছেন কামরুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক তরুণ জিজ্ঞাসা করলেন, “ভাই, গরুটার দাম কত পড়েছে?”
হেসে উত্তর দিলেন কামরুল, “আড়াই টাকা”।
শুনেই আশপাশে দাঁড়ানো মানুষ হেসে লুটোপুটি!পাশ থেকে একজন বলে উঠলেন, “এই বাজারে যদি আড়াই টাকায় গরু পাওয়া যেত, তাহলে তো আমরাও একটা করে নিতাম!”
এভাবে হাটের আশেপাশে গড়ে উঠেছে এক ধরনের জনপ্রিয় ট্রেন্ড। গরুর প্রকৃত দাম না বলে মজার ছলে “টাকা” শব্দের পর লক্ষ বা হাজার বাদ দিয়ে শুধু সংখ্যাটি উচ্চারণ করা হচ্ছে। ফলে তা শুনে তৈরি হচ্ছে ব্যাপক হাস্যরস।
কেন এই রকম বলছেন ক্রেতারা?
এ বিষয়ে কথা হয় হাসাড়া হাটের প্রবীণ ব্যবসায়ী সোলেমান হাওলাদারের সঙ্গে। তিনি বলেন,
“দামে যে আগুন লেগেছে, তা লুকাতে ক্রেতারাও কৌশল করছেন। আবার অনেকে মজা করার জন্য বলছেন দেড় টাকা বা আড়াই টাকা। এতে দর্শনার্থীরাও হাসছেন, ক্রেতাও রিল্যাক্স হচ্ছেন।”শ্রীনগরের পাথরঘাটা গ্রামের স্কুলশিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বললেন,
“গরুর দাম শুনে অনেকে কষ্ট পান—এত টাকা দিয়ে গরু! তাই লোকজন মজা করেই বলছে দেড় টাকা বা আড়াই টাকা। এটা একটা কৌতুকের চর্চা।”গরুর বাজারের অবস্থা
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছর শ্রীনগরের বিভিন্ন হাটে মাঝারি সাইজের গরুর দাম শুরু হচ্ছে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়। আর বড় আকারের গরুর দাম ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।
হাঁসাড়া হাটের গরু ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া জানান,
“গরুর খাবার, পরিবহন খরচ, হাটে চাঁদাবাজি—সব মিলিয়ে আমাদের খরচ অনেক। তাই দাম একটু বেশি থাকবেই।” এদিকে ক্রেতারা বলছেন, সরকারি নজরদারি কম থাকায় হাটে কেউ চাইলেই দাম বাড়িয়ে ফেলছে।একজন ক্রেতার কণ্ঠে
ক্রেতা মো. হানিফ বলেন, “আমি একটা গরুর দর জিজ্ঞেস করলাম, ওরা বলল দুই লাখ। একটু হেঁটে সামনে গেলাম, একই ধরনের গরু দেড় লাখে দিচ্ছে। দাম যেভাবে উঠছে, বুঝলাম এই বাজারে শুধু দরদাম নয়, মনের জোরও থাকতে হয়।” তিনি আরও বলেন, “তবে হ্যাঁ, দেড় টাকা, আড়াই টাকা—এই মজা না থাকলে তো হাট ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়তাম।”
দর্শনার্থীর ভিড় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল
শুধু ক্রেতা-বিক্রেতা নয়, যারা পশু কিনতে আসেননি, তারাও হাটে ভিড় করছেন। কেউ ভিডিও করছেন, কেউ সেলফি তুলছেন পশুর সঙ্গে। “দাম কত ভাই?” এই প্রশ্ন-উত্তর নিয়ে তৈরি হচ্ছে মজার ভিডিও, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল।
প্রশাসনের নজরদারি ও নিরাপত্তা
শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান,
“আমরা হাটগুলোতে নিয়মিত তদারকি করছি যাতে অতিরিক্ত দাম, চাঁদাবাজি বা প্রতারণার ঘটনা না ঘটে। পাশাপাশি পশুর চিকিৎসা সেবা ও ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ চলছে।”সারসংক্ষেপ
হাস্যরসের মোড়কে ঢাকা থাকলেও শ্রীনগরের পশুর হাটে এক ধরনের অর্থনৈতিক বাস্তবতা স্পষ্ট।
লোকজন গরুর দাম জানাতে সংকোচবোধ করছেন, আবার অনেকেই তা নিয়ে ঠাট্টা-মশকরার মাধ্যমে সামাজিকভাবে তা হালকা করে তুলছেন।
শেষ পর্যন্ত দেড় টাকা বা আড়াই টাকা শুধু এক ধরনের কৌতুক নয়, বরং এটা যেন একটি সামাজিক প্রতিক্রিয়া। যে প্রতিক্রিয়া জুড়ে আছে বাজারের বাস্তবতা, হাসি, কষ্ট এবং কোরবানির ঈদের আবহ।
বিসিকে/এমজেডএইচ