শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে কচুক্ষেত থেকে কিশোরের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩:২৩

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি অভিবাসন প্রত্যাসীদের করুণ অভিজ্ঞতা

অপরাধী' নয়, তবু শিকলবন্দী!

মো. জাকির হোসেন
অপরাধী' নয়, তবু শিকলবন্দী!
চৌঠা সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয় এক নারীসহ ৩০ জনকে

ঢাকা: উন্নত জীবনের আশায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীরা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে তাদের হাতে হাতকড়া এবং পায়ে শিকল পরিয়ে বিমানযাত্রা করানো হয়েছে। খাবার ও পানিও ছিল সীমিত।

“পুরা পেটে শিকল ছিল, হাতে হাতকড়া ছিল, তারপর দোনো পায়ে কড়া লাগানো ছিল। ৬০ ঘণ্টার বিমানযাত্রায় আমাদের অপরাধীর মতো আটকে রাখা হয়েছিল।” — রুবেল (ছদ্মনাম)

উন্নত জীবনের আশায় গত বছরের অক্টোবর মাসে ট্যুরিস্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান রুবেল। মাত্র আটদিন পরই তাকে আটক করা হয় এবং ডিটেনশন সেন্টারে নেওয়া হয়। দেশে ফেরত পাঠানোর আগে প্রায় ১০ মাস সেখানে তাকে রাখা হয়। ডিটেনশন সেন্টারে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হতো না।

অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে তাকে অন্যান্যদের সঙ্গে সামরিক বিমানে চাপিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। ফ্লাইটে অন্যান্য দেশের কয়েকজন নাগরিকও ছিলেন। রুবেল জানিয়েছেন, আড়াই দিনের যাত্রায় কেবল চারটি পাউরুটি এবং অর্ধ লিটার পানি দেওয়া হয়েছিল।

“পানির জন্য ধরেন গলা শুকিয়ে গেছে। আমরা এতো পানি চাইছি, কিন্তু আমাদের পানিই দেওয়া হয়নি। খাবার ও পানি তারা নিজেরাই খেয়েছে, কিন্তু আমাদের কোনো গুরুত্বই ছিল না। পেটে শিকল থাকার কারণে পানিটাও খেতে কষ্ট হয়েছিল। শৌচাগারে যাওয়ার সময় হাতকড়া পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়নি। আমরা যে চেয়ারে বসি, সেখান থেকে হিলতে পারি না। হিললে তারা এসে আবার বসিয়ে দেয়।”

সূত্র বলছে, গত ২ আগস্ট ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের সি-১৭ সামরিক বিমানযোগে একজন নারীসহ ৩৯ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। একই ফ্লাইটে অন্যান্য দেশের নাগরিকও ছিলেন।

কুরবানির ঈদের আগে ফেরত পাঠানো আরেক দলের অভিবাসী নোয়াখালীর ইমরান হোসেনও একই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তিনি ব্রাজিলের ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে সড়ক পথে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। ডিটেনশন সেন্টারে থাকাকালীন কম খাবারের অভিযোগ তারও আছে। তবে বিমানে ওঠার আগে ১৫ ঘণ্টা ধরে ছোট একটি কক্ষে হাতকড়া ও শিকল পরানো হয়েছিল।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের ৮ জুন একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ জন, এবং ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ২০২৪ সালের শুরু থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা অন্তত ১৮০ ছাড়িয়েছে।

Screenshot-20250905-192725

যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অমানবিকভাবে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ বাংলাদেশ পুলিশের ইমিগ্রেশন বিভাগের ডিআইজি মোয়াজ্জেম হোসেন অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “এভাবে কোনো বাংলাদেশি এয়ারপোর্টে আসে নাই। যারা এ ধরনের অভিযোগ করছেন, তাদের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, “ডিপোর্টের সময় কেউ কেউ হয়তো ভায়োলেন্ট আচরণ করেছে, এমন ঘটনা থাকতে পারে। এছাড়া ফ্লাইটে অন্যান্য দেশের নাগরিক থাকার কারণে এই ব্যবস্থা থাকতে পারে। আমরা বিষয়টি যথাযথভাবে যাচাই করছি।”

Screenshot-20250905-192806

মানবাধিকার ও বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

শরিফুল হাসান, ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) বলেন, “অবৈধ অভিবাসন রোধ করা যায়, তবে প্রক্রিয়াটি অবশ্যই মানবিক হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও এভাবে বাংলাদেশি নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে পারে না। সরকারের উচিত এ বিষয়ে সোচ্চার থাকা এবং নাগরিকদের অমানবিক প্রক্রিয়ায় ফেরত না পাঠানোর বার্তা দেওয়া।”

Screenshot-20250905-192848

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের নাগরিকদের হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ফেরত পাঠানো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির পরিপন্থী। এই প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য কূটনৈতিক পর্যায়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়