ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও মসজিদের মুসল্লিরা

চাঁদপুর শহরের ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মিশন রোডের চার রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশে স্থাপন করা হয়েছে একটি বড়ো আকারের ডাস্টবিন। পৌর কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী, পথচারী, ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা। অভিযোগ উঠেছে, এই ডাস্টবিনের কারণে পুরো এলাকায় নেমে এসেছে পরিবেশ বিপর্যয় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি। যে ডাস্টবিন আগে ছিলো শহরের মাতৃপীঠ মোড়ে। সেটিই গত কয়েক মাস আগে সরিয়ে আনা হয়েছে মিশন রোডের মোড়ে বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশে। বর্তমানে এটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনায় ভরে যায় রাস্তাঘাট, বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে অসহনীয় দুর্গন্ধ। জনবহুল এ এলাকায় দিনে-রাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে পশু-পাখি, যারা ডাস্টবিন থেকে ছড়িয়ে দিচ্ছে রোগজীবাণু।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ৫ আগস্টের পর থেকে গত ক’মাস ধরে চাঁদপুর শহরের মিশন রোড মোড়ের বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশে ময়লা এবং মাটি ফেলে কিছু জায়গা ভরাট করে সেখানে প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ময়লা-আবর্জনা এনে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। আর সেখান থেকে গাড়ি করে পরিছন্নতাকর্মীরা ধীরে ধীরে তা নিচ্ছে স্বর্ণখোলা এলাকায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এখানে প্রতিদিন যেসব ময়লা আনা হয়, সেগুলোকে পাশের খালি বালুর মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলে রাখা হয়। পরিছন্নতাকর্মীরা ওই ময়লার স্তূপ ঘেঁটে সেখান থেকে তারা বিভিন্ন প্লাস্টিক ও লোহালক্কড়সহ প্রয়োজনীয় জিনিস বেছে রাখে ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করার জন্যে। যার ফলে পুরো এলাকাজুড়ে ময়লার দুর্গন্ধ আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি পৌরসভা থেকে যে ব্লিচিং পাউডার দেয়া হয় সেগুলো তারা প্রয়োজন মতো ব্যবহার করে না।

ডাস্টবিনটির পাশে অবস্থিত চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী শাহী জামে মসজিদ। মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা জানান, ডাস্টবিন থেকে ছড়ানো গন্ধে নামাজে মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব হয় না।

মুসল্লি মাওলানা ইমরান হোসেন, সামু মিজি, মামুন মিজি, কাদির খান, হাফেজ মোল্লা, লিয়াকত খানসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, গত ক’মাস ধরে মসজিদের পাশে এমন দুর্গন্ধময় পরিবেশ মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে এই গন্ধে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এটা ধর্মীয় অনুভূতির প্রতিও অবমাননা।

ডাস্টবিনটির অদূরেই অবস্থিত ড্যাফোডিল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে। দুর্গন্ধ আর নোংরা পরিবেশে তাদের শরীরে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।

অভিভাবক তানিয়া রহমান বলেন, আমার সন্তান প্রতিদিন স্কুলে যায় এই ডাস্টবিনের পাশ দিয়ে। মাঝে মাঝেই ওর ভেতর থেকে বমির ভাব হয়। এই বয়সে এমন স্বাস্থ্যঝুঁকির কোনো মানে হয় না। ডাস্টবিনটির ঠিক পাশেই অবস্থিত জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর নতুন বাজার ফায়ার স্টেশন। রাস্তার পাশে উপচেপড়া ময়লার কারণে তাদের জরুরি সেবা কার্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটছে। ময়লার দুর্গন্ধে প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, দুর্গন্ধে কর্মরত সদস্যদের কাজ করতেও সমস্যা হয়। বিশেষ করে যারা প্রতিদিন অফিসে নিয়মিত ডিউটি করেন, তারা ঠিকমত নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এটি কোন্ পরিকল্পনার ভিত্তিতে এখানে বসানো হয়েছে বুঝে আসছে না।

মিশন রোডের এই মোড়ে রয়েছে একাধিক ফার্মেসি, মুদি দোকান, কনফেকশনারি ও খাবারের হোটেল। হোটেল ও দোকান মালিকরা জানান, এই ডাস্টবিনের কারণে ব্যবসা এখন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্রেতারা রাস্তার দূর থেকেই ফিরে যায়। দোকানে বসেও টিকতে পারি না। পৌরসভা যদি ডাস্টবিন না সরায়, আমরা আন্দোলনে যাবো।

মিশন রোডের মোড়ে ময়লার এমন স্তূপ নিয়ে পরিছন্নকর্মীরা বলেন, আমাদের গাড়িগুলোতে মোটর লাগিয়ে দিলে আর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। কারণ, পায়ে চালানো ভ্যান গাড়ি দিয়ে সবাই এতোদূর ময়লা নিতে চায় না। আমাদের সবার গাড়িগুলো যদি পৌরসভার পক্ষ থেকে মোটরচালিত করে দেয়া হয়, তাহলে আমরা সবাই বিভিন্ন বাসা-বাড়ির ময়লাগুলো এখানে না ফেলে সরাসরি স্বর্ণখোলা এলাকায় নিয়ে ফেলতে পারবো।

জানা গেছে, এই ডাস্টবিনটি অপসারণের দাবিতে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ কয়েক মাস পূর্বে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা ও মিশন রোডের ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানাচ্ছি, ডাস্টবিনটি যেনো শহরের নির্জন এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়। তা না হলে এলাকাবাসীকে নিয়ে বড়ো আন্দোলনে যাবো।

মিশন রোড চাঁদপুর শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা। এখানে মসজিদ, স্কুল, সরকারি অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘিরে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের চলাচল। এই এলাকায় একটি স্থায়ী ময়লার ডাস্টবিন থাকা শহরবাসীর জন্যে এক ধরনের অপমান ও স্বাস্থ্যঝুঁকি। এলাকাবাসী, মুসল্লি, ব্যবসায়ী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে চাঁদপুর পৌর প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি, ডাস্টবিনটি অতি দ্রুত অপসারণ করে যথোপযুক্ত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হোক।