প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫, ০৯:১৬
ফরিদগঞ্জে বড়ো বড়ো প্রকল্পে বড়ো বড়ো দুর্নীতি!

গেলো ১২ মে চাঁদপুর কণ্ঠে শীর্ষ সংবাদ হয়েছে ফরিদগঞ্জের একটি বড়ো দুর্নীতি নিয়ে, যার শিরোনাম হয়েছে ‘ফরিদগঞ্জে দুগ্ধ প্রকল্পের টাকা নিয়ে নয়ছয়’। ২৫ মে প্রকাশিত হয়েছে আরেকটি শীর্ষ সংবাদ, যার শিরোনাম হয়েছে ‘ফরিদগঞ্জে ৬৩ লাখ টাকার খাল খনন প্রকল্প ৬ লাখ টাকায় শেষ’। গতকাল (১৩ জুন ২০২৫) চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে আরেকটি শীর্ষ সংবাদ, যার শিরোনাম হয়েছে ‘বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণে পুকুর চুরি’। প্রায় একমাসে ফরিদগঞ্জে তিনটি বড়ো ধরনের দুর্নীতির সংবাদ স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, রহস্যজনক নীরবতা ও অর্থপূর্ণ নিষ্ক্রিয়তাকে নির্দেশ করে, যা একটি উপজেলার ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই নেতিবাচক।
গতকালকের সংবাদটি ছিলো অনেক দীর্ঘ। এতে প্রবীর চক্রবর্তী যা লিখেছেন, তার সারমর্ম হচ্ছে : ফরিদগঞ্জে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণে অনিয়ম ও অর্থ নয়ছয়ের তথা পুকুর চুরির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিটি ল্যাট্রিন নির্মাণের জন্যে বরাদ্দকৃত অর্থের এক তৃতীয়াংশ অর্থে এসব নির্মাণ কাজ চলছে। ফলে প্রশ্ন রয়েছে এসবের মান নিয়েও। অভিযোগ রয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারাও এর সাথে জড়িত। সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের আওতায় হতদরিদ্র পরিবারের জন্যে বিনামূল্যে টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণের লক্ষ্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলার পৌরসভা বাদে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যানদের সহায়তায় প্রতিটি ইউনিয়নে ২২৯টি পরিবারের তালিকা তৈরি করা হয়। প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে একটি তালিকা সংগ্রহ করে প্রকল্পের সহযোগী এনজিও’র স্থানীয় প্রতিনিধিরা। এই তালিকা যাচাই-বাছাই করে তারা তালিকা চূড়ান্ত করে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী অফিস জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসকে প্রদান করে। যার একটি কপি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকেও দেয়া হয়েছে। সেই হিসেবে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় কম-বেশি প্রায় ৩ হাজার ৪৩৫টি টয়লেট নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। জানা গেছে, প্রতিটি টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণে ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ফলে শুধু ফরিদগঞ্জ উপজেলাতেই ব্যয় হবে ১২ কোটি ২২লাখ ৫ হাজার টাকা। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। কাজ চলছে নামকাওয়াস্তে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে কাজ এতো নিম্নমানের হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। প্রতিটি ল্যাট্রিন নির্মাণে কিছু ইট, ১০টি রিং, দুটি স্লাব এবং ৪ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের সিমেন্টের তৈরি পিলার এবং টিন প্রয়োজন। কিন্তু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই উপকরণ নির্মাণে দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন। কাজগুলো নিম্নমানের হচ্ছে। ইটের গুঁড়া ৮০%, আর ১৮% কক্রিট, বাকি ২% বালি ও সিমেন্ট। তারা ১০টি রিং তৈরি করছে দেড়/দুই বস্তা সিমেন্ট দিয়ে। এমনটাই জানিয়েছেন কর্মরত লেবাররা। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি টয়লেট নির্মাণে প্রকল্প কর্তৃক ব্যয় ৩৫ হাজার টাকা ধরা হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হচ্ছে বা পাচ্ছে সর্বোচ্চ ২২/২৩ হাজার টাকা। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এগুলো নির্মাণে সর্বোচ্চ ১০/১২ হাজার টাকা ব্যয় করছেন। বাকি টাকা হাওয়ায় উড়ছে।
প্রবীর চক্রবর্তীসহ ফরিদগঞ্জের ক’জন সাংবাদিক সরেজমিনে গিয়ে উপরোল্লিখিত ল্যাট্রিন নির্মাণ নিয়ে দুর্নীতির যে ভয়াবহ চিত্র খুঁজে পেয়েছেন, তাতে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়েছে তাঁদের। বস্তুত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এই দুর্নীতির সাথে সরাসরি ও প্রকাশ্যভাবে জড়িত। পুকুর চুরিতে এই অধিদপ্তরের সিদ্ধহস্ত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অপকর্মে ওদের বুকেরপাটা কতো বড়ো সেটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে হতবাক হতে হয় বারবার। ফরিদগঞ্জের ল্যাট্রিন নির্মাণ সংক্রান্ত এই দুর্নীতি নিয়ে নিশ্চয়ই জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা হওয়া দরকার, আর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে তদন্তের ব্যবস্থা করে গণমাধ্যমে এর প্রতিবেদন প্রকাশ করা দরকার। যদি এর কিছুই না হয়, তাহলে ভাবতে হবে অন্য কিছু, আর হতাশায় মুষড়ে পড়ে স্বগোতক্তি করতে হবে : বিশ্ব ব্যাংকের অর্থে বিশ্বমানের (!) চুরির নমুনাই অবশেষে স্থাপিত হতে যাচ্ছে ফরিদগঞ্জে!